অর্জুন বিশ্বাস। একাধারে গীতিকার সুরকার,সঙ্গীত পরিচালক এবং কণ্ঠশিল্পী। ১৯৬৬ সালের ৩ মার্চ মাদারীপুর জেলার দত্ত কেন্দুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের এক সঙ্গীত পরিবারে জন্ম তার। ৫ ভাই ১ বোনের মধ্যে অর্জুন সবার ছোট। অর্জুনের সঙ্গীতে হাতে খড়ি হয় বাবা ভাইদের কাছেই। কৈশরে সঙ্গীতর নেশায় যাত্রাদলে হারমোনিয়াম মাস্টার হিসেবে বছর চারেক কাজ করেন। তখন থেকেই গান লেখা, সুর করা এবং হারমোনিয়ামে বিশেষ দক্ষতা অর্জনের চর্চা চলতে থাকে তার। ১৯৮৪ সালে এস. এস. সি পাশ করে ঢাকায় সরকারী সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় ভর্তি হন অর্জুন। চলতে থাকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা। ১৯৮৬ সালে আই মিউজ পাস করেন এবং ১৯৮৮ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান নিয়ে বি মিউজ পাশ করেন অর্জুন।
১৯৯০ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বের সাথে এম, এ পাশ করেন। সাম্যবাদী, মানবতাবাদী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অর্জুন ৯০ এর গণ আন্দোলনে কবিতা,গানের মাধ্যমে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রাখেন। পড়াশুনা শেষে সাংবাদিকতা শুরু করলেও বেশি দিন এ পেশায় থাকেন নি তিনি। একটা বেসরকারি কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন, কিছুদিন প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের সাংস্কৃতিক বিভাগে চাকরি করেন । এর পর থেকে পুরোপুরি সঙ্গীতের মধ্য দিয়েই আলো আঁধারী জীবন অতিবাহিত করতে থাকেন। সঙ্গীত অঙ্গনের নানা প্রতিকুলতার মধ্যে যখন তেমন সাফল্য পেলেন না সঙ্গীতে নিবেদিত এই মহত প্রাণের মানুষটি তখন একটু ভেঙে পড়েন। ঠিক সেই সময় বাংলার কিংবদন্তি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব “ইত্যাদি”র কর্নধার হানিফ সংকেত অর্জুনের জীবনে আলোর দিশারী হয়ে আবির্ভুত হন। ২০১১ সালে বৈশাখ মাসের ইত্যাদিতে প্রথম অংশগ্রহণ করেন অর্জুন। তারপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অর্জুনকে। হানিফ সংকেত এর সাথে সাত-আট বছর কাজ করেন অর্জুন এবং এরই মধ্যে দারুন ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন টেলিভিশন লাইভ,দেশবিদেশে ডাক পড়ে অর্জুনের। সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলতে থাকেন এবং অর্জুন হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী,মানবতাবাদী,বাস্তববাদী জীবনমুখী গানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী। ২০১২ সালে বিনোদনধারা পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পীর পুরষ্কার পান অর্জুন। এ ভাবে আরো অনেক অনেক অ্যাওয়ার্ড -সম্বর্ধনায় ভূষিত হতে থাকেন। সর্বশেষ ২০১৯ এর ৫ সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে পান ‘সঙ্গীত রতœ’ অ্যাওয়ার্ড।
অর্জুনের সবচে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, নিজের লেখা ও সুর করার বাইরে কারো গান করেন না। যদিও সঙ্গীত নিয়ে পড়াশুনার সুবাদে নজরুল সঙ্গীতের চর্চা করতেন এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন এ নজরুল সঙ্গীতের তালিকাভুক্ত শিল্পী হয়ে কিছুদিন নজরুল সঙ্গীত গাইলেও তিনি এখন পুরোপুরি নিজের গান নিয়ে ব্যস্ত। তার গানের সংখ্যা প্রায় হাজার দুয়েকের মত। বর্তমানে স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়ে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করছেন।