৬ মাস বকেয়া বেতনের দাবিতে দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষক কল্যাণ সমিতি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। সোমবার বেলা ১২টায় দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষক কল্যাণ সমিতি, পাবনা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এ স্মারকলিপি প্রদান করে।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, ২০২০ (দুই হাজার বিশ) জন শিক্ষক’কে এই প্রকল্পে চাকুরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়, আরো ৩০৩০ (তিন হাজার ত্রিশ) জন শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশের যে সকল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল) নেই সেসকল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করতে ২০১৪ সালের ৩০’শে ডিসেম্বর (মউশিক) প্রকল্পের মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট সুত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষকরা নিয়োগ লাভ করে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে।
এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। যাহা (৬ষ্ঠ পর্যায়) শেষ করে এবং ৭ম (সপ্তম পর্যায়) প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন থাকায় প্রধান কার্যালয় কর্তৃক প্রেরিত বিভিন্ন চিঠির মাধ্যমে দারুল আরকাম মাদ্রাসার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদের জনবল বলে স্পষ্ট হয় এবং ১৭ই মার্চ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান কার্যালয় কর্তৃক প্রেরিত চিঠিতে দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে শিশু র্যালী করার আদেশ দেন, যাহা আমরা চলমান সংক্রোমিত করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে সংক্ষিপ্ত ভাবে পালন করা হয়।
তাই বর্তমানে চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত বেতন না পাওয়ায় “দারুল আরকাম মাদ্রাসা’র” শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পাশাপাশি পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে নীরবে নিভৃতে চোখের পানি ফেলছেন। শিক্ষকদের এই দুর্দশা দেখার কেউ নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সুত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর একনেক সভায় মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্পে অনুমদনকালে নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা চালুর পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ই ফেব্রæয়ারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে বলেন প্রতিটি শিশুর জন্য ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ বলেও মন্তব্য করেন।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে চুড়ান্ত ভাবে দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইসলাম প্রিয় বলেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এসব প্রতিষ্ঠানে নিজেস্ব সিলেবাস দ্বারা ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে ২০২০ সালে এসে তা পঞ্চম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। মউশিক প্রকল্পে অধীনে শুরু থেকে থাকলেও বর্তমানে সেটাকে আলাদা করা হয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, এবছর প্রকল্পটি মউশিক প্রকল্পের সাথে জমা করা হলেও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় ও অর্থ মন্ত্রনালয় দারুল আরকামকে আলাদা করার প্রস্তাব দেন।
দুটি প্রকল্প আলাদা হলেও মউশিক প্রকল্পটি চলতি বছরের ১১ মে তারিখ পাশ হলেও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রকল্পটি ঝুলে গেছে অনিয়মিত সময়ের জন্য।
এতে করে বেকায়দায় পড়েছে এ প্রকল্পের আওতাধীন ২ হাজার ২০শিক্ষক। এখানে ১০১০ জন কাওমি মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বাকি ১০১০ জন আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। কাওমি মাদ্রাসার দাওরা হাদিস সনদকে স্বীকৃতির পর এটি এই প্রথম কাওমি আলেমদের সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করা। প্রথমদিকে বিষয়টি আনন্দের সাথে সবাই গ্রহণ করলেও বর্তমানে চতুর্দিকে এটি নিয়ে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, পাশাপাশি ১ হাজার ১০টি প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিয়তায় পড়ছে। অন্ধকারে হাজারো শিশুরা।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও সরকারের নজরে পড়ে বিষয়টি।
প্রেক্ষিত একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি বিশেষ ভাবে পাশ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “দারুল আরকাম মাদ্রাসা” না থাকাতে শিক্ষকরা এ বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। অনেক কষ্টে এই কঠিনতম দিন পাড়ি দিচ্ছেন শিক্ষকরা।
দারুল আরাকাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতি (দাশিকস) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা জেলা শাখার সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘দারুল আরকাম মাদ্রাসা’টি প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং বাংলাদেশের সকল মাদ্রাসার সাইন বোর্ডেও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম দেওয়া হয়েছে, অতএব আমার মনে হয় প্রকল্পটি আলাদা হয়েছে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন না। জানলে হয়তবা তিনি আমাদের বিষয়টি বিশেষ ভাবে বিবেচনা করে পাশ করে দিতেন বলে আমি মনে করি এবং আমাদের এই কঠিন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হতোনা। ৬ মাসের বেতন না পেয়ে আমরা অনেক কষ্টে স্বজনদের নিয়ে জীবনযাপন করছি।
আমি আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নিজে প্রতিষ্ঠানটিন প্রতিষ্ঠা করেছেন সুতরাং আমাদের মানবেতর জীবন-যাপনের বিষয়টি তিনি বিশেষ ভাবে বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি পাশ করবেন।
দারুল আরাকাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতি পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রজব আলী বলেন দারুল আরকাম মাদ্রাসাটি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তৈরি হয়েছে। তাই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখবেন বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।