পাবনার চাটমোহরে এম.কে. আর আহাম্মাদীয়া দাখিল মাদ্রাসায় নৈশ প্রহরী ও আয়া নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা এবং সুপারিনটেন্ডেন্ট’র বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ১০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের একটি কথোপকথন (অডিও রেকর্ড) ফাঁসের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মাদ্রাসার সভাপতি আলহাজ নজরুল ইসলাম মল্লিক এবং এক চাকুরী প্রত্যাশী ও তার ভাইয়ের সাথে প্রায় ১৫ মিনিটের অডিও রেকর্ডে ১০ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের স্পষ্ট কথোপোকথন এলাকার মানুষের মোবাইল ফোনে ঘুরছে। এখানে শুধু মাদ্রাসার সভাপতি-ই নন, মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট মাওলানা আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধেও নিয়োগ দিতে চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অডিও রেকর্ডিং ও সংশ্লিষ্ট তথ্যে জানা গেছে, এম কে আর আহাম্মাদীয়া দাখিল মাদ্রাসার শুন্য পদে নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে দরখাস্ত আহ্বান করে গত ২৬ মার্চ স্থানীয় পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দু’টি পদের বিপরিতে বেশ কিছু নারী ও পুরুষ আবেদন করেন। এরপর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক ও মাদ্রাসা সুপারিনটেন্ডেন্ট মাওলানা আব্দুল লতিফ আবেদনকারী বেশ কয়েকজনকে চাকুরী দেওয়ার আশায় দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে অগ্রীম টাকা গ্রহন করা শুরু করেন বলে আবেদনকারীদের অভিযোগে জানা গেছে।
অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, সভাপতি নজরুল ইসলাম ও আবেদনকারীর একজন অভিভাবকসহ দুইজনের সাথে নিয়োগ দেয়া নিয়ে দরদাম করছেন। সেখানে সভাপতি ১০ লাখ টাকা হলে চাকুরী দিবেন মর্মে জানান এবং প্রার্থী পরিচিত বলে কিছু টাকা ছাড় দিয়ে ৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেন। ১০ লাখ টাকার দুই পাটি দুই লাখ করে জমা দিয়ে রেখেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সভাপতি তাদের বলেন, চাকুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা অফিসার, ডিজির প্রতিনিধি, সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি খরচ, ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের ম্যানেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকায় মোটা অংকের টাকা প্রদান করা বাবদ প্রায় ৬-৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়। নিয়োগের টাকা নিয়ে সব খরচ বাদে যে টাকা থাকবে তা দিয়ে তিনি স্থানীয় গোরস্তানের জন্য জমি কিনবেন বলে জানান। কিন্তু চাকুরী প্রার্থীর অভিভাবক গরীব মানুষ উল্লেখ করে আরো কমানোর অনুরোধ করেন। আবেদনকারীদের অভিযোগ, মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপারিনটেন্ডেন্ট একেকটি পদের জন্য ১০ লাখ টাকা করে নির্ধারণ করে দু’জন আবেদনকারীর নিকট থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে তাদেরকে এখন চাকুরি না দিয়ে সভাপতির একজন আত্মীয়কে চাকুরি দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।
চাকুরী প্রত্যাশীদের মধ্যে রতনপুর গ্রামের রজনী খাতুনের স্বামী আব্দুর রহিম জানান, ভবিষ্যতের চিন্তা করে স্ত্রীকে ওই মাদ্রাসায় আয়া পদে চাকুরী নিয়ে দিতে সভাপতি ও সুপারিনটেন্ডেন্ট’র সাথে কথা বলি। তারা আশ্বাস দিয়ে আমার কাছ থেকে ইতিমধ্যে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। ব্যবসার পুঁজি দিয়ে, জমি ও গরু বিক্রি করে তাদের টাকা দিয়েছি। আমার মতো কয়েকজনের কাছ থেকে তারা টাকা নিয়েছে। এখন শুনছি তারা অন্যজনকে নিয়োগ দিবে।
আরেক চাকুরী প্রত্যাশী ফারহানা খাতুনের স্বামী মুকুল হোসেন জানান, আমার স্ত্রীর জন্য আমি ও আমার এক ভাই মাদ্রাসার সভাপতি নজরুল মল্লিকের কাছে গিয়েছিলাম। যে অডিও রেকর্ড শোনা যাচ্ছে সেখানে আমাদের সাথে তার কথা হয়। তাকে অনুরোধ করলেও তিনি ৯ লাখের কম দিলে নিয়োগ হবে না বলে জানান। এমন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানি না। মাদ্রাসার সুপার নিয়োগ দিচ্ছে। কারা কি কারণে রেকর্ড করেছে আমি জানি না। অডিও রেকর্ডে তার কথা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই রেকর্ডে তার কোনো কন্ঠ নেই। তবে তার কন্ঠ কম্পিউটারে নকল করে কেউ একাজ করতে পারে বলে দাবি করেন।
মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট মাওলানা আব্দুল লতিফ বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই। এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজী হননি।
মুলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বকুল বলেন, নিয়োগের নামে এমন বাণিজ্য আসলে দু:খজনক। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর মাদ্রাসার সভাপতি যেহেতু আওয়ামীলীগের এক নাম্বার ওয়ার্ডের সভাপতি সেকারণে দলীয় সভা ডেকে সবার মতামতের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মগরেব আলী বলেন, ওই মাদ্রাসার নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা অফিসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। ডিজি অফিস কাকে নিয়োগ দিবে সেটা তাদের বিষয়। তবে যদি শিক্ষা অফিসকে নিয়োগের বিষয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয় তাহলে স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। অডিও রেকর্ড ফাঁসের বিষয়টি তিনি জেনেছেন।