সিলেটের বিশ্বনাথে স্বামী হত্যার মামলা করে বিপাকে পড়েছেন এক নারী। তিনি উপজেলার মনোকুপা গ্রামের নিহত ওয়ারিছ আলীর স্ত্রী নুরুননেছা বেগম (৪৮)। প্রতিপক্ষের হুমকিতে নিরাপত্তার কারণে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন তিনি। এমন অভিযোগ করেন নিহত ওয়ারিছ আলীর স্ত্রী। গত (২৩জুন) মঙ্গলবার প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে প্রাণ হারাণ তার স্বামী বৃদ্ধ ওয়ারিছ আলী (৬০)। এ ঘটনার পরদিন ২৪ জুন তিনি (নুরুননেছা) বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে বিশ্বনাথ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ১৫)। মামলায় স্বাক্ষী রাখেন নিজের ছোট মেয়ে সীমা বেগম (২০) ও ভাতিজা রাসেলসহ (১৮) আরও কয়েকজনকে। মামলা দায়েরের ৩/৪দিন পর থেকেই আসামিরা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী নুরুননেছাকে। এমনকি মামলা না তুলে আদালতে মামলার স্বাক্ষী দিতে গেলে নিহতের যুবতি মেয়ে সীমা বেগমকে (২০) প্রাণনাশ ও ধর্ষণের হুমকিও দিচ্ছেন মামলার আসামি সমছু মিয়া (৫৫) ও তার ভাই প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ফজলু মিয়া পক্ষের লোকজন।বুধবার (০১ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন মনোকুপা গ্রামে গেলে এভাবেই স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন মামলার বাদি নুরুননেছা ও তার মেয়ে সীমা বেগম। তারা বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি পক্ষের ভয়ে তাদের পরিবারের ৮সদস্যই বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। কিন্তু তারপরও প্রভাবশালী আসামি পক্ষের নির্যাতন থামছেনা। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিনিয়ত তাদের বাড়িঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা ও ভাংচুর করছে।সীমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, গত ২৩ জুন ঘটনার দিন বড় বোন মমতা বেগম (৩০) এর স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য তিনি নিজ বাড়ি থেকে বের হন। তখন তাদের সাথে ছিলেন চাচাতো ভাই রাসেল মিয়া (১৮)। হঠাৎ করে তারা রাস্তায় দেখতে পান তার পিতা ওয়ারিছ আলী’কে লোহার রড আর পাইভ দিয়ে পেঠাচ্ছেন প্রতিপক্ষ সমছু মিয়া, স্থানীয় মেম্বার ফজলু মিয়া’সহ ৭/৮জন লোক। এসময় তার পিতাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে যান তিনি। অনেক ধরা ধরি করেও প্রতিপক্ষকে আটকাতে পারেননি। অবশেষে প্রতিপক্ষের মার খেয়ে মেয়েদের সামনে প্রাণ ভিক্ষা চান ওয়ারিছ আলী। এভাবেই কান্না করে নিজের চোখের সামনে পিতা হত্যার বর্ণনা দেন নিহত ওয়ারছি আলীর যুবতী মেয়ে সীমা বেগম। পরে তাকে আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু বলে ঘোষণা দেন। পরদিন স্বামী হত্যার দায়ে বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন ওয়ারিছ আলীর স্ত্রী নুরুন নেছা (৫০)। মামলা নং-(১৫)। আর ওই মামলায় গ্রামের লোকজন ছাড়াও স্বাক্ষী হন মেয়ে সীমা বেগম ও ভাতিজা রাসেল মিয়া। পিতা হত্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ায় আসামি পক্ষের লোক সাদ মিয়া, সমছু মিয়া, ফারুক মিয়া ও লয়লুছ মিয়াসহ কয়েকজন তাদের ঘরে ইঠপাটকেল নিক্ষেপসহ প্রাণনাশ ও মেয়েকে ইজ্জত লুটের হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে মেয়ে সীমা বেগম প্রাণের ভয়ে অন্যত্র গিয়ে রাত যাপন করেন। ওই যুবতী পিতা হত্যার বিচার ও প্রশাসনের কাছে পরিবারের নিরাত্তা চেয়ে সরকারের সু-দৃষ্ঠি কামনা করেন।হত্যাকারীদের ফঁসি দাবি করে নিহত ওয়ারিছ আলীর মা শতবর্ষী সিতারা বিবি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, তিনি ন্যায়বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।মনুকুপা গ্রামের সালিশ ব্যক্তিত্ব হাজী জবেদ আলীর (৯৫) সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে হামলার পর ওয়ারিছ আলীকে মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করায় তার ছেলে আব্দুল আলী (৪০), আব্দুল করিম (২৫) ও এমসি কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র আলা-উদ্দিনকে (২০) মামলার আসামি দেন হামলাকারী সমছু মিয়া পক্ষের লোকজন।পাশের বাড়ির সত্তোরোর্ধ সুনুবিবি বলেন, গ্রামের নুরুল ইসলাম ও সমছু মিয়া পক্ষের মধ্যে থাকা পূর্ব বিরোধ নিস্পত্তির লক্ষে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেলকে নিয়ে তার ছেলে আব্দুস সালাম আপোষে নিস্পত্তির চেষ্টা করেন। অথচ, এখন সমছু মিয়া পক্ষ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও তার তিন ছেলেকে আসামি করেছেন।এব্যাপারে অভিযুক্ত সাদ মিয়া, সমছু মিয়া, ফারুক মিয়া ও লয়লুছ মিয়ার সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তি বলেন, এধরনের হুমকির কোন বিষয় তার জানানেই। তবে, উভয় পক্ষে মামলা দায়ের হয়েছে আসামি গ্রেপ্তার তৎপরতা অব্যাহত আছে।প্রসঙ্গত, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে গত ২৩জুন বিকেলে মনোকুপা গ্রামের নুরুল ইসলাম পক্ষের ওয়ারিছ আলীর (৬০) উপর হামলা করেন সমছু মিয়া পক্ষ। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় উভয়পক্ষে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন সমছু মিয়ার ভাই মখলিছ মিয়া (৬৫)। পরবর্তিতে তাদের দু’জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েগেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় একইদিনে উভয় পক্ষে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। সমছু মিয়া পক্ষের মামলার বাদী নিহত মখলিছ মিয়ার ছেলে আকরাম হোসেন (মামলা নং ১৬)। মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রতিপক্ষের ৩১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই উভয় পক্ষের পুরুষ লোক গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।