পাবনার ভাঙ্গুড়ায় এমপিওভুক্ত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখায় কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমী নামে ঐ প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধ অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে অন্য চাকরিপ্রার্থীরা। এ ঘটনায় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ৪১ নাম্বার পেয়ে প্রথম
স্থান অধিকার করা নয়ন আহমেদকে বাদ দিয়ে রাকিবুল ইসলাম নামে আরেকজনকে চূড়ান্ত নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে। এই বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এর আগেও জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া, এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত
অর্থ আদায় ও প্রবেশপত্র দিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমীতে এসএসসি ভোকেশনাল শাখার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী
পাঠদান চালু করতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভোকেশনাল শাখায় ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সৃষ্টপদে একজন করে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ট্রেডে এইচএসসি পাস প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এতে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মোতালেবের ছেলে মাহফুজ আলী সহ ১২ জন ও ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ৪ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। এরপর গত শনিবার সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আবেদনকারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ওই দিনই রাতে ঘোষিত পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাবিবুর রহমান নামে এক প্রার্থী প্রথম স্থান ও মাহফুজ আলী দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এ সময় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী রাকিবুল ইসলাম খান ও সরোয়ার হোসেন সহ কয়েকজন অভিযোগ করেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার এবং পাবনার বেসরকারি একটি কলেজে চাকরি করেন। তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মোতালেবের ছেলে মাহফুজ আলীর প্রক্সি দিতে এসেছিলেন। এখন হাবিবুর রহমান চাকরিতে যোগদান করবেন না। ফলে মোটা অংকের অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সভাপতির ছেলে মাহফুজ আলীকে নিয়োগ দিবেন ম্যানেজিং কমিটি। এমন অভিযোগ তুলে চাকরিপ্রার্থী রাকিবুল ইসলাম খান ও সরোয়ার হোসেনসহ একাধিক আবেদনকারী রবিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন। একইসাথে তারা অভিযোগের অনুলিপি কপি পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেছেন। এছাড়া অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও। ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ৪১ নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করা নয়ন আহমেদ অভিযোগ করেন, ব্যবহারিক পরীক্ষা না নিয়েই ৩৭ নাম্বার পাওয়া রাকিবুল নামে আরেকজনকে ব্যবহারিক পরীক্ষায় বেশি নাম্বার দিয়ে প্রথম বানিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি আবেদনকারীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
লিখিত অভিযোগে আরো তুলে ধরা হয় ২০১২ সালে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষায় জাল সনদধারী ওই শিক্ষক চাকরিচ্যুত হয়।
এদিকে পরীক্ষায় কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারকারী হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কারো প্রক্সি দিতে যাইনি। চাকুরীর জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ দিলে আমি যোগদান করব।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বাবলু হোসেন বলেন, কম্পিউটার বিষয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ছিলনা। সভাপতির ছেলে মাহফুজ একেবারে মেধাহীন। কিন্তু তাকে নিয়োগ দিতে কৌশল অবলম্বন করে দ্বিতীয় বানিয়ে চুয়াডাঙ্গার একজনকে প্রথম করা হয়েছে। যাতে চুয়াডাঙ্গার প্রার্থী যোগদান না করলে সভাপতি ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হেদায়েতুল হক বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে কিছু করার নেই। তবে ইলেকট্রনিিক্স শাখায় ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব ছিল বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল মোতালেব বলেন, স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে উপযুক্ত প্রার্থীকে যোগদানের জন্য চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার ছেলে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করলেও আমি তাকে নিয়োগ দিতে কর্তৃপক্ষকে কোনোপ্রকার চাপ দেইনি। এখন কিছু আবেদনকারী চাকরি না পেয়ে ক্ষোভে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছে।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রথম স্থান অধিকার করেছে। তাকে যোগদানের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। তিনি যোগদান না করলে নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তি যোগদান করতে পারবে। তবে এটি ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। তবে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, লিখিত অভিযোগের অনুলিপি কপি এখনো হাতে পায়নি। অভিযোগ হাতে পেলে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে।