লকডাউনের মধ্যে সীমিত আকারে দোকানপাট খোলা থাকতো। তাতেই হাটে কেনাবেচা করতে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটতো। পরে প্রশাসনের অভিযানে লোকজন হাট থেকে চলে যেতে বাধ্য হতো। দুই সপ্তাহ আগে লকডাউন উঠে গেছে। আর এতেই ঘটে গেছে মহা বিপত্তি। সাপ্তাহিক হাটে হাজার হাজার মানুষ এসেছে পণ্য কেনাবেচা করতে। হাটে আসা অধিকাংশ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। নেই কোনো প্রকার সামাজিক দুরুত্ব। শনিবারে এমনই চিত্র দেখা যায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সর্ববৃহৎ সাপ্তাহিক শরৎনগর হাটে। অথচ এরই মধ্যে ভাঙ্গুড়ায় ১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যদিও এরমধ্যে সাতজন সুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন। এ অবস্থায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার সচেতন বাসিন্দারা।
জানা যায়, পাবনা জেলার অন্যতম বৃহৎ সাপ্তাহিক হাট বসে ভাঙ্গুড়া উপজেলা সদরের শরৎনগর বাজারে। বিশেষ করে গবাদি পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য শরৎনগর হাট আশেপাশের জেলার মধ্যে প্রসিদ্ধ। সপ্তাহে প্রতি শনিবার এই হাট বসে। পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলা সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ আসে এই হাটে। লকডাউনের মধ্যে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে হাটে কেনাবেচা অনেকটাই কমে যাওয়ায় লোকজনের উপস্থিতি অনেকটাই কম থাকতো। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ার পর থেকে গত দুই হাটে লোকজনের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। হাটে আগত অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অসচেতন। এ অবস্থায় উপজেলায় করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটে আসা মানুষদের মধ্যে নেই করোনা আতঙ্ক। দিব্যি সবাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও কেনাকাটা করছেন। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। অনেকে মাস্ক নিলেও গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সকলে গা ঘেঁষে কেনাকাটা করছেন। দোকানগুলোতে নেই হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা। বিশেষ করে পশুহাটে গাদাগাদি ভিড়। দিনভর এভাবেই হাটে চলে ক্রেতা বিক্রেতাদের কেনাবেচা। এ পরিস্থিতিতেও হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
হাটে আগত ক্রেতারা জানান, লকডাউন উঠে গেছে বলেই তারা হাটে এসেছেন। আর সরকারিভাবে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ থাকলেও তাদের জানা নেই। কেননা এ ব্যাপারে কোনো মাইকিং কিংবা প্রচারণা তারা শুনেননি।এসময় হাটে আগত জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বললে অনেকেই তা উপহাস করেন।
ভাঙ্গুড়া বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে কোন প্রকার ভীতি নেই। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও বালাই নেই। দোকান খুলে রেখে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন যদি সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনগণকে বাধ্য করতো। তাহলে বাজারের ব্যবসায়ীরা বিপদমুক্ত থাকতো।
এব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে থানা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন কার্যক্রম শুরু করবে।