যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির সাজিয়ালী ফাঁড়ি পুলিশের
নির্যাতনে কলেজ ছাত্র ইমরানের (২১) জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। স্বজনদের
দাবি, পুলিশের বেদম প্রহারে তার দুটি কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। তিনি যশোর
শহরের কুইন্স হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইমরান যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের শাহাবাজপুর গ্রামের নিকার আলীর
ছেলে। তিনি হৈবতপুরের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের
লেখাপড়া করেন। এদিকে, ওই কলেজ ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা বলে
দাবি করেছেন সাজিয়ালী ফাঁড়ির এএসআই সমারেশ সাহা।
নির্যাতিত ইমরান জানান, গত ৩ জুন বুধবার সন্ধ্যায় আমিসহ আরেকজন চৌগাছারর
সলুয়া বাজার থেকে ইজিবাইক করে চুড়ামনকাটি বাজারের উদ্দেশ্যে আসছিলাম।
ইজিবাইকটিযশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(যবিপ্রবি) সামনে
পৌঁছালে সাজিয়ালী ফাঁড়ির গতিরোধ করে। পুলিশ ইজিবাইকে থাকা এক যাত্রীর
ব্যাগ তল্লাশী শুরু করে। তখন আমি ভয়ে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করি। পুলিশ
পিছু ধাওয়া করে শ্যামনগর এলাকা থেকে আমাকে ধরে মারপিট করতে থাকে।
নির্যাতনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। রাতে জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পায় আমি
আমবটতলা বাজারে এক পল্লী চিকিৎসকের ঘরে রয়েছি।
ইমরান আরো জানিয়েছেন, জ্ঞান ফেরার পর পুলিশ আমাকে বলে পকেটে গাঁজা ছিলো
বলে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলে। গাঁজার কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে যায়। পুলিশ
আমার পিতার কাছে ফোন দিয়ে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। একপ্রকার ৬ হাজার
টাকা ঘুষ দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ছেড়ে দেয়ার সময় এএসআই
সমারেশ সাহা ও এএসআই এএসআই সাজদার আমাকে হুমকি দেন নির্যাতনের কথা যেনো
কাউকে না বলি। বললে ফের ধরে এনে রিমান্ডে নেয়া হবে। ‘ভয়ে আমি কাউকে
কিছু বলিনি।
পেটে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মারপিটের ঘটনাটি পিতা মাতাকে জানানোর পর
আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। ছেলের শয্যাপাশে থেকে কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে
ইমরানের মা বুলবুুলী বেগম জানান,পুলিশের নির্মম নির্যাতনে আমার ছেলের
দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আমার ছেলেকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরে যেতে পারবো
কিনা জানিনা। আমি নির্যাতনকারী পুলিশের শাস্তি চাই। যাতে আর কোন পুলিশ
সদস্য আর কারো উপর এমন নির্যাতন করতে সাহস না পায়। হাউমাউ করে কাঁদছিলেন
বুলবুলী বেগম।
ইমরানের পিতা নিকার আলী জানিয়েছেন, বিনা দোষে আমার ছেলের উপর নির্মম
নির্যাতন করেছে সাজিয়ালী ফাঁড়ির পুলিশ। গাঁজাতো দুরের কথা আমার ছেলেকে
সিগারেটও ছুয়ে দেখেনি। পুলিশ মিথ্যা নির্যাতনের পর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে
টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ছেলের জীবন সংকটাপন্নের ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন
কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করবেন বলে জানান নিকার আলী।ইমরানের দেখভালকারী
চিকিৎসক উবায়দুল কাদির উজ্জল জানিয়েছেন, কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায়
থাকলে ক্রিয়েটিনিন ১ দশমিক ৪ থাকে।
কিন্তু তা ছিল ৮ দশমিক ৮ রয়েছে। প্রতিদিন ক্রিয়েটিনিন বাড়ছে। এতে করে
ইমরানের কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। দ্রুত ডায়ালাইসিস দিতে হবে। ডায়ালাইসিস
দেয়ার পরও কিডনি রিকভারি করবে কিনা এটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। এই
বিষয়ে এএসআই সমারেশ সাহা মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ইজিবাইকে সিগন্যাল দেয়ার
সাথেই ইমরান নেমে দৌঁড় দেয়। তাকে ধাওয়া করে কনস্টেবল আশরাফ ও ফারুক।
ধরতে ব্যর্থ হয়ে তারা ফিরে আসেন। কিছু সময় পর ভাগলপুর গ্রামের রফিকুল
আমাকে ফোন করে খবর দেন পানির মধ্যে এক যুবক পড়ে রয়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে দেখতে পায় ইজিবাইক থেকে দৌঁড়ে পালানো ওই
যুবক জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে আমবটতলা পল্লী চিকিৎসক
আলমগীরের কাছে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসায় জ্ঞান ফেরার পর ফাঁড়িয়ে
নেয়া হয় ইমরানকে। ইমরান পুলিশকে জানান হৈবতপুর ইউনিয়নের প্যানেল
চেয়ারম্যান শাহজাহান তার আত্মীয়। এরপর ফোনে বিষয়টি শাহজাহানকে জানানো
হয়। রাত ১০টার দিকে ইমরানের পিতা ফাঁড়িতে আসলে তার জিম্মায় ছেড়ে
দেয়া হয়।
কি কারণে ইমরান ইজিবাইক থেকে দৌঁড়ে পালিয়েছিলো সেই বিষয়ে তার কাছ থেকে
কিছু শোনেননি জানতে চাইলে এসআই সমারেশ সাহা জানান, পলিথিনে ১০ গ্রাম মতো
গাঁজা ছিলো তার কাছে। গাঁজাসহ আটক করেও কিভাবে ছেড়ে দিলেন প্রশ্ন করলে
সমারেশ সাহা জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহানের অনুরোধে প্রথমবারের
মতো ইমরানকে ছাড়া হয়।
এএসআই সমরেশ সাহা জানান, ঘটনার সময় আমিসহ আমার সাথে ছিলেন এএসআই শাজদার
রহমান, কনেস্টেবল আশরাফ ও ফারুক। আমরা কেউ ইমরানকে নির্যাতন করিনী।
পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুন্সি আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের
জানান, কোতোয়ালি থানা থেকে রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পে ফিরে ঘটনাটি জানতে
পারি। ঘটনার বিস্তারিত হলো এএসআই সুমারেশ সাহা, এএসআই সাজদার রহমান চার
কনস্টেবল ওই কলেজ ছাত্রকে আটক করেছিলেন। কিন্তু ইমরান অসুস্থ হওয়ায়
তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পিতার জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। নির্যাতন
করা হয়নি।
যশোর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি
শুনেছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।