পৌরসভা প্রতিষ্ঠার দেড়যুগ অতিবাহিত হলেও রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় এখন পর্যন্ত ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান ভাগাড় নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এই পৌরসদর ভবানীগঞ্জ বাজার ও আশেপাশের এলাকার বিপুল পরিমান ময়লা আবর্জনা এখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে ভবানীগঞ্জ হাটের কসাইহাটার গরু ছাগল ও হাঁস মুরগী জবাই থেকে উচ্ছষ্ট বর্জ্য ও তরিতরকারি ও পশুর হাটের বর্জ্য। এছাড়াও পৌরসভা সদর ও আশেপাশের এলাকায় প্রায় ১০/১২ টি ক্লিনিক থাকলেও ওই সব ক্লিনিক গুলোর বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলা বা ধ্বংস করারও কোন ব্যবস্থা নেই। এসব বিষাক্ত বর্জ্যরে ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। সেই সাথে পথচারীর চলাচলেও ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। এক দিকে করোনা সংক্রামনের ঝুকি ও অন্যদিক এসব মানব সৃষ্ট বর্জ্যরে কবলে পড়ে পৌরসভার আপামর জনতা আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পৌরবাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভবানীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার বর্তমানে দেড় যুগ অতিকান্ত হতে চলেছে। দীর্ঘ এই সময়ে এই পৌরসভার নানামুখী উন্নয়ন হলেও এখানকার বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন ভাগাড় গড়ে ওঠেনি। ফলে বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন নির্ধারিত কোন স্থান না থাকায় যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। এভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে রাস্তাঘাটে জনসাধারনরে চলাচলে মারত্বক বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সেই সাথে এসব ময়লা আবর্জনা পচে এলাকার পরিবেশ বিষময় হয়ে উঠছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি শুক্রবার ও সোমাবার হাটবার ছাড়াও প্রতিদিন ভবানীগঞ্জ বাজারের প্রচুর মায়লা আবর্জনা জমে। কিন্তু এসব ময়লা আবর্জনা ফেলার নেই কোন নির্ধারিত স্থান। পৌরভার যে কয়জন পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছেন তারা কোন রকমে এসব ময়লা আবর্জনা যেনতেন ভাবে কুড়িয়ে নিয়ে সিএনজি ট্রান্ড সংলগ্ন ব্রীজ এলাকা ও ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন স্লুইচগেট এলাকায় ফেলে দেয়া হয়। বর্তমানে এসব ময়লা আবর্জনার কিছু অংশ ভবানীগঞ্জ নিউমার্কেটের পূর্বপাশেও ফেলা হচ্ছে । বিষয়টি যেন কারো নজরেও আসছে না। সিএনজি ট্রান্ড সংলগ্ন আউর(খর) হাটার ব্যবসায়ীরা জানান, তারা এখানে ইজারা দিয়ে খরের ব্যবসা করেন। বর্তমানে এখানে যেভাবে ময়লা আর্বজনা ফেলা হচ্ছে তাতে এখানে আর হাটের জায়গা বলে কিছু থাকবে না । নিউমার্কেট সংলগ্ন চা ও পান বিক্রেতারা জানান, পৌরভার পরিচ্ছন্ন কর্মী ছাড়াও বাজারের বিভিন্ন কাচামাল ব্যবসায়ীরাও এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে থাকে। ব্যবসায়ীদের মতে, এভাবে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার ফলে বাজারে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এদিকে হাটবাজারের বর্জ্যরে পাশাপাশি ভবানীগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকার অন্তত ১০/১২ টি ক্লিনিকের মেডিকেল গজ, ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ, রক্ত, মল-মূত্র সহ নানান বর্জ্য কোথাও ফেলার বা ধ্বংস করার কোন ব্যবস্থা না থাকায় পরিবেশের জন্য বিষয়টি হুমকি স্বরুপ বলে মনে করছেন এখাকায় সচেতন মহল। ভবানীগঞ্জ গোডাউন মোড় এলাকার একটি ক্লিনিকের পরিচালক জানান, তার ক্লিনিকের সাধারন ময়লা আবর্জনার সাথে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য মিশিয়ে বাইরে ফেলা হয়। তবে এভাবে যত্রতত্র ক্লিনিক্যাল বর্জ্য এখানে সেখানে ফেলা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরুপ বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে সকল ক্লিনিক মালিক এসব বর্জ্য পরিকল্পিত ভাবে পুতে ফেলা বা ধ্বংস করতে চাইলে তিনি তাতে সহযোগিতা করবেন বলে জানান। একই ভাবে ভবানীগঞ্জ মোহনা ক্লিনিকের বর্জ্যও ওই ক্লিনিক সংলগ্ন একটি জলাসয়ে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ দিকে দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় থাকার পর ভবানীগঞ্জ পৌরবাজারের রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জি এনামুল হকে এই সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন। তবে সারপ বছর যেনতেন কাটিয়ে ভরা বর্ষা মৌসুমে পৌরসভার এই রাস্তার কাজ শুরু করায় স্থানীয় বাজারের লোকজন এই রাস্তার কাজের গুনগত মান নিয়ে আবারও সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভবানীগঞ্জ পৌরমেয়র আব্দুল মালেক জানান, পৌরসভার জায়গার সংকটের কারণে ভাগাড় নির্মাণ বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বসে নেই। পৌরভবন নির্মাণের জন্য জায়গা নেয়া হয়েছে। অচিরেই এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। সেই সাথে ভাগাড় নির্মাণের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। অপর দিকে পৌরসভার রাস্তার কাজ ভরা বর্ষা মৌসুমে শুরু হওয়া এবং কাজের গুনগত মান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার কাজের গুনগত মান ঠিকা রাখা হবে। তবে অফিসিয়াল কিছু জটিলতার জন্য কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। অপর দিকে বাজারের ময়লা আবর্জনা ও ক্লিনিকের বর্র্জ্য বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানান, বাজারের ময়লা আবর্জনা অপসারনের দায়িত্ব পৌরসভার। আশাকরি এদিকটাই তারা যতœবান হবেন। তবে ক্লিনিকগুলোর বর্জ্য পরিকল্পিতভাবে অপসারনের বা ধ্বংস করার জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।