শফিক আল কামাল (পাবনা) ॥ ১৮৮৯ খ্রি. প্রতিষ্ঠিত হওয়া বর্তমানের পাবনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যাধুনিক মডেল হিসাবে সুনামের সাথে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।
টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র , ডিজিটাল ল্যাব, আন্তঃবিভাগ ইন্টারকম, ওয়াইফাই ক্যাম্পাস, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত পানির ব্যবস্থা, দুর দুরান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য সাইকেল গ্যারেজ, প্রতিটি বিভাগে(২৫)টি অস্থায়ীভাবে ডাষ্টবিন। পুরো ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত ঘোষণা করে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে ফলজ, বনজ ও ঔষধী বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে শোভ বর্ধন করা হয়েছে। পরিত্যাক্ত জায়গা গুলোকে ফুলের বাগানের মাধ্যমে এক মনোরম ও প্রকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে রয়েছে চালু করা হয়েছে ২০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট সংযোগ, আধুনিক কলেজ লাইব্রেরী এবং আধুনিক বিজ্ঞান ল্যাব। ক্লাস চলা কালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের অনুশীলণে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে জেনারেটর সুবিধা। খেলাধুলা চর্চায় যেন সমস্যা না হয় সে লক্ষ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে কলেজ মাঠের জলাবদ্ধতা দূর করা হয়। স্কাউট রোভার স্কাউট’র চর্চা কার্যক্রমও চলে নিয়মিত।
সীমানা প্রাচীর থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা হয়। ক্যাম্পাস’র সামনের দেয়ালে ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর তথ্য সম্বলিত আলোকচিত্র অংকন করা হয়। রাত্রী কালীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসটিতে সার্বক্ষণিক আলোক ব্যবস্থা বিদ্যমান।
২০১৯ খ্রি. ১১ ফেব্রুয়ারী পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য , পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের বঙ্গবন্ধু কর্ণার শুভ উদ্বোধন করেন। স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থায় এবং অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ২০২০ খ্রি. ১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু’র ম্যুরাল উদ্বোধন করেন।
২০১৯ খ্রি. ১৮ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল স্কুল এন্ড কলেজের উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ের জন্য আধুনিক মাল্টিমিডিয়া কনফারেন্স রুমের উদ্বোধন করেন।
২০২০খ্রি. ২৯’ জানুয়ারি দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা’র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাবনা’র জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেছিলেন, ভাল করে কাজ শিখলে, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে দেশের বাইরে যাওয়ার দরকার হয় না। দেশের অভ্যন্তরে ঘরে বসেই উপযুক্ত পারিশ্রমিক আয় করা সম্ভব। একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে পাবনা’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আক্তার মিলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সুদুরপ্রাসারী কার্যক্রমে মুগ্ধ হন।
সুনাগরিক সেবা ও সৌহার্দ্য’র উপর ভিক্তি করে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেচ্ছা সেবমূলক সংগঠন এপেক্স ক্লাব’স অব বাংলাদেশ’র জাতীয় প্রেসিডেন্ট এপেক্সসিয়ান নিজাম উদ্দিন পিন্টু টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে মুগ্ধ হন এবং দিনটি স্মৃতিতে অম্লান করে রাখতে ক্যাম্পাস চত্ত্বরে বৃক্ষরোপন করেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার হার ১৭%। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০২০ খ্রি. মধ্যে কারিগরি শিক্ষা হার ২০% বৃদ্ধি করতে এবং শিক্ষার্থীদের সর্বাধুনিক কারিগরি দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনাধীন ৫তলা (২১৫ ফুট*৫০ফুট) আয়তনের ভবন নির্মাণের জন্য পরিপূর্ণ সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে ছোট ও মাঝারী আকারের ১৪টি নারিকেল, সুপারী ও মেহগনী গাছ কাটা হয়।
এছাড়াও টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শতবর্ষের পুরনো একটি আম গাছ ছিল। গাছটির পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাহনের তার সঞ্চালিত হওয়া ও গাছের মাঝখানে পচন ধরায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বনবিভাগ কর্তৃক সম্পূর্ণ সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে গাছটি কাটা হয়। কলেজের ১৩৫ বছরের পুরনো মুল ভবনটি চুণ সুরকী দিয়ে তৈরি। প্রতœতাত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাতেও স্থান পেয়েছে এই সৌন্দর্যমন্ডিত আকর্শনীয় ভবনটি। কাজেই ভবনটি অক্ষুন্ন রেখে মসজিদ ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের কমনরুম নির্মানের জন্য গাছকাটা ফাঁকা জায়গাটি ব্যবহার করা হবে।
টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ পাবনা’র অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মো. জমিদার রহমান জানান, তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনে ২০০১ খ্রি. তিনি বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব টেকনোলজী (বি আই টি) রাজশাহীতে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সহকারি অধ্যাপক (উন্নয়ন) পদে চাকুরিতে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৪ খ্রি. তিনি ডুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিয়ারিং এ সম্মানসহ স্ট্যান্ড করেন। ২০০৪ খ্রি. পঞ্চগড় জেলার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে চাকুরিতে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ২০১৭ খ্রি. কারিগরি শাখায় বাংলাদেশ ব্যাপী তিনি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হন। ২০১৮ খ্রি. কারিগরি শাখায় রংপুর বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ২০১৯ খ্রি. কারিগরি শাখায় রাজশাহী বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচত হন। অনন্যা সোস্যাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকার ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে ২০২০ খ্র. ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে তাঁকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্মাননা’২০২০ প্রদান করা হয়। তাঁর মেধা, দায়িত্ববোধ ও মনিটরিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়। সেই সাথে পাবনা ক্যাম্পাসকেও তিনি আধুনিক সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন।