করোনাভাইরাসের কারণে বগুড়াসহ সারাদেশে ইতিমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রতিকূলতার। চলছে লকডাউন, কিন্তু কর্মজীবি মানুষের ঘরে খাবার দেবে কে? এর মাঝে ঘনবসতিপূর্ণ বগুড়া শহরে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে করে সচেতন মানুষদের মনে যখন বাড়ছে আতঙ্ক তখন খেঁটে খাওয়া মানুষগুলো সাহায্যের জন্যে নিরবে চোখের জল ফেলছে জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বিত্তবানদের দ্বারে। সমাজের একশ্রেণীর মানুষ যখন নিজেদের জীবনের কথা ভেবে সকলের থেকে আড়ালে থেকে শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন লিখে স্ট্যাসাস দিচ্ছে তখন মানবতার দূত হয়ে নিজের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে করোনা মোকাবেলায় বগুড়ায় মাঠ পর্যায়ে লড়াই করে যাচ্ছে মানবিক ব্যবসায়ী নেতা এবং তরুণ সমাজসেবক পরিমল প্রসাদ রাজ।
নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, বগুড়া রাজাবাজার আড়ৎদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়েও খুবই সাধারণ তার চলাফেরা। করোনা দুর্যোগে সকলে যখন তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে তখনই মানবিক এই ব্যবসায়ী শুরু থেকে তার নিজের যতটুকু আছে তা দিয়েই অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়াস করে যাচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ব্যক্তি উদ্যোগে এবং বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে দেড় হাজারেরও বেশী পরিবারে তিনি পর্যায়ক্রমে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। তিনি কোন সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত নয় তবুও দেশের এই ক্রান্তিকালে মানবতায় ব্রতী হয়ে শুধু বগুড়া শহরে নয় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পর্যন্ত ছুটে গিয়ে অসহায়ের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার। শহরের বড়গোলায় একটি দোকানে কাজ করা কর্মচারী হাসান আলী (ছদ্মনাম) এর সাথে কথা বললে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি জানান, লকডাউনে দোকান বন্ধ বেতনও পায়নি ২ মাস হলো। কিন্তু ঘরে পরিবারের সদস্যদের মুখে তো খাবার তুলে দিতে হবে। তার এলাকার জনপ্রতিনিধি একবার ৪ কেজি চাল ১ কেজি ডাল আর সামান্য কিছু খাদ্যসামগ্রী দিয়েছিল শুরুর দিকে কিন্তু তা দিয়ে আর কয়দিন। লকডাউন এর এই পুরো সময় ২/৩ দফায় তার পরিবারের জন্যে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ব্যবসায়ী পরিমল প্রসাদ রাজ যা দিয়েই এখনো কোনমতে দিন পার হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার ভরসায়। হাসান আলীর মতো এমন অনেক ব্যক্তিদের অনুভূতিগুলো ঠিক এরকমই ছিল। করোনা মোকাবেলার মাঝেই পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে পূজা উদযাপন পরিষদ পৌর কমিটির সভাপতি ব্যবসায়ী পরিমল প্রসাদ নিজে সনাতন ধর্মালম্বী হয়েও সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষের মাঝে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করেছেন ঈদসামগ্রী যার ধারাবাহিকতায় ঈদের আগের দিন রবিবারও শহরের চেলোপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রায় শতাধিক মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। শুধু তাই নয় নিজের জন্মদিনে এই মাসে ২টি এতিমখানায় ছুটে গিয়ে এতিম শিশুদের মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার, সাথে সাথেই তাদের প্রদান করেছেন পুরো সপ্তাহের প্রয়োজনীয় খাবার। আহা কতটা শান্তি লাগে শুনতে? হ্যাঁ এটাই আমাদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আর এটাই বাঙালির মানবতা। ভাবতেও অবাক লাগে করোনা দুর্যোগের এই সময়ে বগুড়ায় লকডাউন হওয়া বাড়িগুলোতে পর্যায়ক্রমে নিজের হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যবসায়ী পৌঁছে দিয়েছেন তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী শুধু তাই নয় রাত-বিরাতে বিভিন্ন অসহায় মানুষের ফোনে পরিচয় গোপন করে এখনো দিয়ে যাচ্ছেন সহযোগিতা। মানবিক এই কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার রাজাবাজারের যাবতীয় দিক একা হাতে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনের দিকনির্দেশনা মেনে চলা, ব্যবসায়ীদের পরিবারের চিন্তা সাথে সাথেই আবার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ সব দিকেই সমানতালে বিচরণ করছেন এই মানবিক মানুষটি। হয়তো করোনা দুর্যোগ একদিন কেটে যাবে কিন্তু মানবতার এক এক জন দূত হয়ে এই দুর্যোগে যারা সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তারাই তো অমর হয়ে থাকবে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যাদের মাঝে বগুড়াতে করোনা মোকাবেলায় সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে পরিমল প্রসাদ রাজ অন্যতম। করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকে তার পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম প্রসঙ্গে বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক পরিমল প্রসাদের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মানবতাই পরম ধর্ম। মানুষের অঢেল সম্পদ আর টাকা থেকেই বা কি হবে যদি মানুষই না বাঁচে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সকলেরই উচিত একে অপরের পাশে থাকা। বর্তমান সরকার তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষকে সচেতনতার সাথে করোনা মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে যা শুরু হতে হবে নিজের থেকেই। সেই সাথে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী করোনা দুর্যোগের শেষ পর্যন্ত মানবতার সেবায় মাঠে থাকবেন বলেও তিনি প্রতিশ্রæতি দেন।