টিভি চ্যানেলে তারাবির নামাজসহ অন্যান্য নামাজ সম্প্রচার হতে বিরত থাকার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। আশার কথা এই যে,করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর মহামারি না কাটতেই দেশের মুসুল্লিদের ধর্ম পালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে সরকার ৭ মে জোহরের নামাজের সময় থেকে দেশের সকল মসজিদ কিছু শর্ত সাপেক্ষে খুলে দিয়েছে। কিন্তু বিশ^ পরিস্থিতির চিত্র ভিন্ন। করোনার ভয়াল থাবা থেকে সম্পুর্ণভাবে নিস্কৃতি লাভ না করা পর্যন্ত মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ বাদে তারা মসজিদগুলো সহসা খুলছেনা। বরং মসজিদকে ত্রাণভান্ডার হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
একটি অনলাইন পোর্টালে এমনি খবর প্রকাশ পেয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘‘ তুরস্কে মসজিদ হয়ে গেলো সুপার মার্কেট।’’ করোনাকালের এমন দুঃসময়ে সেদেশের মুসুল্লিরা দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মসজিদ গুলোকে দানে দানে ভরে তুলেছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত ‘কাকির মসজিদ’ এর প্রবেশ পথে রক্ষিত জুতার বাক্সগুলিতে দেখা গেছে সুপার মার্কেটের মত তাকে তাকে পাস্তা প্যাকেট, তেলের বোতল, বিস্কুটসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রিতে সাজানো। তবে সেগুলো বিক্রির জন্য নয়। এগুলো করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জীবিকা হারানো অভাবগ্রস্থ মানুষের জন্য। মসজিদের জানালাগুলো খুলে রাখা হয়েছে যাতে মানুষ জানালা দিযে প্রয়োজনীয় সামগ্রি দান করতে পারে।
মুসুল্লিদেরপ্রতি আহবান জানানো হয়েছে সাধ্য মত সামগ্রি দান করার জন্য। বিপুল সংখ্যক মানুষ এই আহবানে সাড়া দিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট এরোদগান দেশটির সকল মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছেন। পরিবর্তে সেগুলো এখন ত্রাণ বিতরণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি না কাটা পর্যন্ত মসজিদ গুলোতে গণপ্রার্থনা স্থগিত রাখা হবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে মৃত্যবরণ কারিদের লাশ রাখার জন্য যুক্তরাজ্যের বার্র্নিংহামের একটি মসজিদের গাড়ি রাখার জায়গায় লাশ রাখার জন্য অস্থায়ী মর্গ গড়ে তোলা হয়েছে। করোনার কারণে মসজিদে নামাজ বন্ধ থাকায় এটি মর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন উর্দ্ধমুখি অর্থাৎ মোট আক্রান্ত ১৩হাজার ১শ ৩৪ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২শ ৬ জন ঠিক তখুনি গত ৭মে তারিখে সারা দেশের মসজিদগুলো নিয়মিত নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হলো। কিন্তু তাবলিগ জামাতের বিষয় তেমন কিছু বলো হলোনা। মসজিদের মুসুল্লিরাতো আর মসজিদে রাতে অবস্থান করেনা। আর মসজিদগুলেতে নামাজ আদায়ের জন্য কিছু শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের দিল্লিতে ‘মরকজ নিজামুদ্দিন নামে ’ পরিচিত একটি মসজিদে সরকারের আদেশ অমান্য করে দুই থেকে আড়াই হাজার মুসুল্লি সমবেত হয়েছিলেন। মরকজ নিজামুদ্দিনে অবস্থানরত প্রায় ৩শ ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসের মত উপসর্গ নিয়ে দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিজামুদ্দিনের ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যে অবস্থিত ৬ তলা বিশিষ্ট মসজিদটি পুলিশ সিলগালা করে দেয়। তাবলিগ জামাতের মুল অনুষ্ঠান ছিলো গত মার্চ মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত। তবে তার অনেক আগে থেকে এবং পরেও শত শত মুসুল্লি সেখানে অবস্থান করে। কেন্দ্রিয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণাালয় উক্ত তাবলিগে যোগ দেওয়া বিদেশি নাগরিকদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করে ভবিষতে ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, মিয়ানমার, কিরঘিস্তান, সৌদি, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, জিবুতি, ইংল্যান্ড, ফিজি, ফ্রান্স ও কুয়েত রাষ্ট্রের মুসুল্লি রয়েছেন।
শুধু তাই নয় মারকাজের ইমাম মুরুব্বি সা‘দ কান্দলভির বিরুদ্ধে ভারত সরকার মামলা পর্যন্ত করেছে। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে জমায়েতের জন্য তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিরেুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যু সংঘটনরে অভিয়োগ আনায়ন করা হয়েছে। পুলিশের এক মুখপত্র বলেছেন, সাদ কান্ধলভির বিরদ্ধে প্রথমে জমায়েতের উপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। তবে এখন তার বিরুদ্ধে অবহেলা জনিত মৃত্যু সংঘঠনের অভিযোগও যুক্ত করা হয়েছে।
করোনাভাইরা বা কোভিড-১৯ এর মধ্যে তাবলিগ জামায়াতের আয়োজন করায় পাকিস্তানে ৩৬ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন বলে সে দেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। পাকিস্তানের হায়দারাবাদে তাবলিগ জামাতের সদস্যদের দেহে এই ভ্ইারাস সনাক্ত করা হয।
তবে বাংলাদেশের বরেন্য ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলোচক আল্লামা মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারির জানাজা নামাজে লাখো মানুষের সমাগম হলেও সেই জানাজা নামাজের কারণে কোন মুসল্লি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা তা বিশেষ আলোচনায় আসেনি বল্লেই চলে। কিন্তু লকডাউন চলাকালিন সময়ে যেখানে সামজিক দুরত্ব বা শারিরিক দুরত্ব মেনে চলাচলের কথা সেখানে জানাজা নামাজে লাখো মানুষ একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়য়ে জানাজা নামাজ আদায় এবং দাফন কার্য সমাধা করায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই কাজকে আত্মঘাতি কাজ বলে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন।
আল্লামা মাওলানা জুবায়ের আহমদ খোলাফত মজলিশের নায়েবে আমির এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বেড়তলা এলাকার জামিয়া রহমানিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। গত ১৭ এপ্রিল শুক্রবার তিনি ইন্তেকাল করেন। পরদিন ১৮ এপ্রিল তার জানাজ নামাজ উক্ত মাদরাসা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। এর দুদিন আগে দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারনে সরকার সারা দেশকে স্স্থ্যঝুঁকিপুর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে। তারো আগে সারাইলকে ১১ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন জেলা কর্তৃপক্ষ। আর এরই মাঝে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা নামাজ অনুষ্টিত হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে দোষারোপ করা হয়। তোপের মুখে পড়েন সরাইল থানার ওসি।
সময়োপযোগি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মাসুদ রানা ও সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও সি) শাহাদত হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয় এবং এঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সরাইল থানার ওসি বলেছিলেন, জানাজা নামাজে লাখো মানুষ যে অংশগ্রহণ করতে আসবে তা তার জানা ছিলোনা। কিন্তু দেশের বাঘা বাঘা সব গোয়েন্দা সদস্য রয়েছে। যারা চুন থেকে নুন খসলেই অগ্রিম টের পেয়ে যান এবং তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, কিন্তু করোনাভাইরাসের লকডাউনের সময় সরাইলে লকডাউন উপেক্ষা করে লাখো মানুষ প্রকাশ্য দিবালোকে জানাজায় শরীক হলেন তা তারা ঘুণাক্ষরেও জানতে বা বুঝতে পারলেননা এটাতো হবার কথা নয়। তাহলে কি তারা নিজেরাই লকডাউন পালন করছিলেন? (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।