আমাদের এ সমাজকাঠামোর নানান দিক বদলায়, নানান বাঁক আর উথাল পাথালকে ছুঁয়েও যেতে হয়। এইজীবনটাকে খুব সুন্দর করতে হলে সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে লেখালেখি শিল্পটাকেই মানব জীবনের বিশিষ্ট স্থানে আসন না দেওয়াটা বোকামি। কে বা কারে সেই যোগ্য স্থানটা করে দিবে। যে যার- নিজের স্বার্থেই ব্যস্ত। হুমায়ূন আজাদের একটি উক্তি মনে পড়ে, ”যতো দিন মানুষ অ-সৎ থাকে, ততো দিন তার কোনোই শত্রু থাকে না, কিন্তু- যেই সে সৎ হয়ে উঠে, ঠিক তখনই তার শত্রুর অভাব থাকে না।” অ-মানুষ কি সৎ মানুষকে দিনেদিনেই শত্রুর কাতারে ফেলছে। এতো দিন ধরে বহু গণমাধ্যমের বহু লোকদের নিকটে- “ভালো লাগা কিংবা ভালোবাসার কথা অনেক শুনেছি। বহু স্মৃতিকথা গুলো বারবারই যেন লেখালেখির মাঝে উৎসাহ যোগায়। সেই মানুষরাই যখন অতীত স্মৃতিকথা গুলোকে ভুলে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা শুনায়, বহুত খারাপ লাগে। লেখালেখি করলেই কি, তাদের কাছ থেকে এই ধরনের নেতিবাচক কথা গুলো শুনতেই হয়ে। কোনো মানুষের নিকটে কিছু চাওয়ার থাকে না। তবুও আঘাত পেতে হবে। উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেন, ”আমি সবসময় নিজেকে সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করিনা, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময়ই যে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়”। এই উক্তির সঙ্গে এজীবনের কিছুটা হলেও মিলে যায়। কিন্তু অমানুষরা কি করেই বুঝে, সুখী মানুষের সুখ যে কোনো উপায়ে নষ্ট করতে হবে। সুতরাং এমন পরিবর্তনশীল মানুষের চরিত্রগুলো আজকে খুবই ভাবায়, বড়ই অবাক করে। বেশকিছু অমানুষ কৌশলেই ফেসবুকের ইনবক্সে ইদানিং নেতিবাচক বহু শব্দ শুনায়, আমি তাদেরকে ডব্লিউ জি নেহাম এর উক্তির সঙ্গে এক মত পোষণ করেই বলি, ‘আমি জ্ঞানী নই, কিন্তু ভাগ্যবান কাজেই আমি সর্বতোভাবে সুখী।
অনেকটা গাছে উঠলে চারপাশ যেইরকম রঙ্গিলা লাগে, ঠিক সেরকম লেখা লেখির জগৎটা ভীষণ রঙ্গিলা মনে হয়, অবশ্যই তা অনেক আগের কথা। কিন্তু- এখন আর রঙিন লাগে না, বর্তমানে মনের গহীনে এক বিষাক্ততার রক্তিম ছোবলে সাঁতার কাটতে হয়। এখন হতাশায় বেশ বড়সড় দীর্শশ্বাস ফেলি। দুনিয়া জুড়েই কি গণ মাধ্যমের মাঝেই বিষাক্ত বাতাস ছড়িয়ে বেড়ায়। এমন গণ মাধ্যম ও মিডিয়া জগৎটাকে কেউ কি কখনো উপলব্ধি করতে পারে না, ভালো লেখক না হলে কোনোকিছুই সৃষ্টি হতো না। এই কথাটিকে বোঝার মতো চেতনা কি কারো নেই। কতো দিন আর সহ্য করে যাবে ভালো মানুষ। মারিয়াক তাঁর এক উক্তিতে বলেছেন,- ‘বলির পাঠারা সব সময়েই ধারন করেছে মানুষের- অত্যাচার, দুর্নীতি আর খুব কষ্ট করার হিংস্র প্রবণতাকে মুক্তি দেয়ার রহস্যময় ক্ষমতা।’ ভালো মানুষের যেন নিজস্ব কর্মে বাধা, সৃজনশীলতাকে সঠিকভাবে ভালো মর্যাদা পূর্ণ জায়গা থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের একটা কথা বিশ্বাস করতে হবে গণমাধ্যম কিংবা মিডিয়া জগতে ভালো মানুষের অভাব। আজ তাঁরা যদি ভালো থেকেছে কালই সব কিছুকে ভুলে চোখ পাল্টিয়ে ফেলেছে। লেখকেরা আজকের দিনে সে সব মানুষদের কাছে অবহেলিত। এমন কথা গুলো লিখতে এবং টাইপ করতে চাইনি কিন্তু বাধ্য করেছে বেশ কিছু গণমাধ্যমের মানুষ। এই অঙ্গনের এমন হীনচরিত্রের মানুষ যে আছে, তারা এতোটা কুৎসিৎ মনের অধিকারী, আজকে গভীর কষ্টে যেন বারবার ভাবিয়ে তুলে। লেখকরাই তো তাদের অলংকার হওয়া উচিত, তাদের স্ব স্ব জায়গাতে প্রতিটা লেখকের মনের কথা সহ নান্দনিকতার সুন্দর রুপ ফুটে ওঠে। তাদের নিকট লেখকসমাজের জীবন কি পুরাটাই বৃথা হয়ে যাবে, গলা ফাটায়ে সমালোচনা করবে আবার সেই লেখকদের নামে বদনাম করবে। কেউ আবার সেই লেখকের নাম পরিচয় বাদ দিয়েই লেখকদের নান্দনিক লেখাটাকে তাঁরা নিজ পত্রিকা কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করবে। এটা খুবই দুঃখ জনক ব্যাপার, তখন কষ্ট রাখার জায়গা থেকে না।
আসলে এই লেখালেখি মানুষের সহজাত ধর্ম। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে এমন ভাবেই তৈরি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যে, তাদের প্রকাশের একটা নিজস্ব ভঙ্গি থাকে। কেউবা তাকে বক্তব্যের মধ্যে ভালো প্রকাশ করে, কেউ বা লেখা লেখির মাধ্যমেই প্রকাশ করে থাকে। আবার কেউ কেউ নাচ, সাজ গোজ, আর্ট কিংবা চিত্রাঙ্কন এবং অভিনয়ের মাধ্যমেই প্রকাশ ভঙ্গি দেখিয়ে থাকে। কেউ লিখে প্রকাশ করলে তাকে ‘অনেক ছোট’ করেই দেখা হবে কেন? যদি এলেখালেখিটা মানুষের প্রকাশের সবচেয়ে বড় ধর্ম হয়ে থাকে, তবুও সবাই লিখতে পারে না। এটি অবশ্য একটি অনন্য গুণ, যা চর্চা করতে হয়। আপাতত সৃষ্টিতে লেখা- লেখিকে বিশ্বাসের ভিত্তিভূমি বানিয়েই বুকের মধ্যে যেন আগলে রেখেছিলাম, তা আজ কেমন যেন আলগা হয়ে গেলো। কি করে পৌঁছে গেলাম- এই পচনশীল সমাজের অসৎ মানুষের কাছে, আজ শুধু মাত্রই তাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে নির্বোধ থাকতে হয়। সমস্ত আবেগকে যেন নিরাশ্রয় করা একজন শূন্যতাবোধের মানুষ আমি। তবে এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই না, সময় ও সুযোগ পেলে লিখনিতেই তাদের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। যা অসুন্দর, যা কদর্য, যা কুৎসিৎ, যা কদাকার সে সবকে কোনো-না-কোনো উপায়ে জীবন থেকে তাড়াতে হবে। খুব সত্য যেমন বাঞ্ছনীয় জীবনের অপরিহার্য এক অঙ্গ, শ্রেয় যেমন বাঞ্ছনীয় এ জীবনের অপরিহার্য একটি অঙ্গ, সুন্দরও তেমনি সেই বাঞ্ছনীয় জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। কিছু মানুষ, মানুষকেই চিনছে না। মানুষের মধ্যেই সত্য, সুন্দর বা মঙ্গল বোধের এতোই অভাব। ভালোটাও ভালো লাগে না। বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আজকের এ দিনে হিংসায় লিপ্ত। নিন্দা করা ছাড়া যেন তাদের মগজ কাজ করেই না। সুতরাং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের মতের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলা যায়,- ”তারাই সুখী যারা নিন্দা শুনে এবং নিজেদের সংশোধন করতে পারে”।
লেখকদের অসম্মানিত করবেন ইতিহাস বলে ঊনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম সাহিত্যিক রূপে খ্যাত ‘বিষাদ সিন্ধু’র অমর লেখক ‘মীর মশাররফ হোসেন’। তিনি সেই সময় যা কিছু লিখেছেন সেইটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গদ্য, পদ্য, নাটক, উপন্যাসে মীর মশাররফ হোসেন প্রায় ৩৭টি গ্রন্থ রচনা করেছিল। তার গদ্যরীতিটা ছিল বিশুদ্ধ বাংলা, যা তদানীন্তনকালে কোনো বিখ্যাত হিন্দু কিংবা মুসলমান লেখকও লিখতে পারেননি। তাঁর প্রতি অনেক মানুষের জেলাসি ছিল। তিনি তো জমীদার দর্পণ নাটক লিখে তদানীন্তনকালে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের মর্যাদা লাভ করেছিল। কেউ তার মুক্ত চিন্তা চেতনা থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারে নি। সুতরাং কারও কারও ক্ষেত্রেই লেখা লেখি এমনিতে আসে। কারও কারও ক্ষেত্রে প্রচুর পড়তে হয়। গুনাগুনেরা বলেছিলেন, এক লাইন লেখার আগে অন্তত ২০ লাইন পড়ে নাও। উল্লেখ যোগ্য আরও একটি কথা বিখ্যাত সাংবাদিক লেরি কিংকেই একবার একজন প্রশ্ন করেছিল, আপনার লেখা লেখি, প্রকাশনী কিংবা টিভি টক শোর প্রশ্ন এত শক্তিশালী কীভাবে হয়? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘লেখা বা বলার আগে পড়তে হবে। তাহলেই আপনার লেখনী শক্তিশালী হবে।’ এই যে প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন কাজে অ-কাজে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে মিশি, তা লেখার জন্যেই খুব বড় সহায়ক উপাদান। তবে নিরন্তর সাধনাটা হচ্ছে একটি খুব ভালো লেখার পূর্বশর্ত। লেখক হয়ে ওঠার জন্যই প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। আর একাজে লেগে থাকতে হয় সদাসর্বদা। তবুও কিছু মানুষ পরিশ্রমী লেখকদের নাম পরিচয় বাদ দিয়েই তার নিজের ‘নাম কিংবা পরিচয়’ লাগিয়ে দিয়েই খুব সহজে লেখক খ্যাতি পেতে চান। একজন লেখকের সার্থকতাকে হরন করে বা তাঁর আদর্শের চিন্তা- চেতনায় আঘাত করে। আল ফারাবি বলেছেন, ‘বৃক্ষের সার্থকতা যেমন ফল ধারণে সেরকম নৈতিক গুনাবলীর সার্থকতা শান্তি লাভে। চরম এবং পরম শান্তি লাভের পথটা হচ্ছে- ক্রমাগত সৎ জীবন যাপন করা’। সুতরাং বলতেই হচ্ছে, সৎ মানুষের বড় অভাব, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ বলেছিলেন, -“এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধুই- সুখ চলে যায়”। তাই তো আজকের দিনে অমানুষদের জাঁতা কলে পিষ্ট হয়ে প্রকৃত এবং ভালো মানুষদের ভালোবাসা বা সুখ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মরমি কবি ‘হাছন রাজা’ নিজস্ব জমিদারি ছেড়ে সুখের আশাতেই অজস্র গান ও কবিতা রচনা করেছেন। লোকমুখেই আজও শুনা যায়- ‘লোকে বলে বলে রে,…. ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার,…. কী ঘর বানাইমু আমি,…… শূন্যের-ই মাঝার,….. ভালা করি ঘর বানাইয়া,… কয় দিন থাকমু আর,… আয়না দিয়া চাইয়া দেখি,…… পাকনা চুল আমার।’ জমিদারি ছাড়ার পরেই বৈরাগী ভাব নিয়ে ছিল যখন ঠিক তখন হাছন রাজাকে অনেকেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল। কিন্তু তাঁর মরমি সেই অজস্র ‘গান বা কবিতা’ আজও মানুষের হৃদয়ে রয়েছে। মানুষের মনে দুঃখ থাকলে লেখার মধ্যে তেজ তৈরি হয় না। সুতরাং দুঃখের কাহিনি থাকলে প্রকাশটা শক্তিশালী হয়। হাছন রাজা তারই প্রমাণ।
দুনিয়াতে কতো লোকের যে জন্ম হয়েছে, কতো শাসক, রাজা চলে গেছে! দুনিয়া কাঁপিয়েছে অনেক বিশ্বনেতা। কিন্তু তারা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছেন। সৃষ্টিশীল কর্মদ্বারা আজো যেন অনেকে বেঁচে আছে মানুষের মন মন্দিরে। বেঁচে থাকবেন আরও সহস্র বছর ধরে। ভাবনা অনেকের মধ্যেই থাকে। তার প্রকাশ না ঘটলেই তা যেন হয়ে যায় অনর্থক। লেখা লেখির মাধ্যমেই মানুষের মনে বেঁচে থাকার চিরঞ্জীব বাসনা তৈরি হয়- কবি, লেখক বা সাহিত্যেদে মন। তাদের মনে কখনোই আঘাত করা ঠিক নয়। তাদের কাজ, চিন্তা ও মূল্যবোধ মানুষের জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়, তারা শারীরিক ভাবেই গত হলেও মানুষের জীবন এবং চেতনার মাঝে থেকে যান। লেখকের থরেথরে সাজাতে হয় রাজনীতি, সমাজনীতি, প্রবন্ধ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, শিল্পকলা, উপন্যাস ও কবিতা, গল্প, ধর্মীয় নানান দিক, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিকসহ আইনের বিভিন্ন দিক। মানুষ মাত্রই ভুল করে, তবুও তো তাঁরা চেষ্টা করে জাতিকে কিছু দেওয়ার। খুব স্বাভাবিক কারণে তাদেরকে অনেক পড়তেও হতো। তবে পেশাগত দরকারের বাইরেও তাদের প্রচুর পড়াশোনা করতেই হয় কিংবা লিখতেও হয় বলেইতো তাঁরা লেখক হন। আবার সামাজিক নানা কর্ম কাণ্ডে নিয়োজিত বা নিবেদিত প্রাণ আছে বলেই তো তাঁরা একটু ‘আলাদা মাপের মানুষ’। এ লেখকেরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করে। তা ছাড়া তারা হয়ে উঠেন স্থানীয় লাইব্রেরির সাধক। সব সময়েই টিভি, দৈনিক পত্রিকা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালের খবরা খবর জানার জন্যেই চেষ্টা করে। সেই লেখকদের অসম্মানিত করা মোটেও ঠিক হবেনা। ইদানিং বেশকিছু গজিয়ে ওঠা ‘পত্রিকা বা অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং মিডিয়া নামধারী মানুষ’রা’ অহরহ অনেক বাজে আচার আচরণ করে থাকে। যে লেখা গুলো পছন্দ হতো না, তা তিনারা প্রকাশ করেন না। একজন লেখকের- সব লেখা ভালো নাও হতে পারে, সেই লেখাটিতে ভালো তথ্য নাও থাকতে পারে। আবার বেশি তথ্যের কারণে লেখাটি বড় হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু দেখা যায় কিছু মানুষ অহেতুক লেখকদের টেনশনে রাখে। পছন্দ হওয়া- ‘আর্টিকেল বা ফিচারটি’ নিজস্ব ডেস্ক কিংবা নিজস্ব প্রতিবেদক বলেও চালিয়ে দেন। লেখকেরা তাদের কাছে কি পায়? নাম বা পরিচয় লেখকের নাইবা থাকে কেনো কষ্ট করে লিখবে।আবার বলে পত্রিকা সম্পাদনার নিয়োম নাকি সে ভাবে প্রকাশ করা। যদি লেখকরা কিছু নিয়ম কানুন ও অর্থের কথা তুলে ধরে, তা হলেই শুরু হয়ে যাবে মান অভিমান। কি আর করা সে কিশোর কালে পড়া আর লেখার প্রতি যে ঝোঁক তৈরি হয়ে ছিল, তা আজও আছে সমানতাল। তাইতো হাজারও বাধা বিপত্তি এবং বহু কষ্ট সহ্য করেই লিখে যেতে হচ্ছে।
বহু বই-পুস্তক, ম্যাগাজিন, পত্রিকা সহ বহু নাটক সমগ্র কিনে নিয়ে ঘর বোঝাই করে লেখকরা। পড়ালেখা এবং কর্ম জীবন ছাড়া ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ খুব কম থাকে। যখন একটি ভালো লাগা ও ভালোবাসার লেখা পত্রিকা কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশ হয় তখন যে কতো আনন্দ একজন লেখকের তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু সেই পরিমণ্ডলে বেশ কিছু জানা-অজানা চেনা-অচেনা অজস্র ধোঁকাবাজ মানুষের সঙ্গেই সম্পর্ক যখন গড়ে উঠে লেখকের খুব দ্রুত গতিতে, দেখাও যায় তার স্থায়ীত্ব কালটাও যেন অনেক দ্রুতগতিতে শেষ হয়। এই সব অভিজ্ঞতা কখনো পুলকিত করে আবার কষ্টের মাঝেই ডুবিয়ে রাখে। নিজের কর্মক্ষেত্রে বারবার সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেও বেশকিছু ভালো মানুষদের কারণেই যেন ফিরে আসতে হয়েছে। তাদের একধরনের আলাদা তাগাদা থাকায় মনের ভেতর আবার লেখালেখির স্হান সৃষ্টি হয়েছে। নানা সময়ে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থাকে বলা যায় কাজের ব্যবস্থার চাপে, সেই আলোকেই বর্তমানের বাস্তবতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আর অলীক কল্পনার ছোটা ছুটিতেই মস্তিস্ক যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মাঝে মধ্যে নিজের কানে বাজত বঙ্কিম চন্দ্রের কপাল কুণ্ডলার সেই একটি প্রশ্ন,- ”পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?” আবারও তাই সজাগ হয়েই লেখা লেখির অদ্ভুত নেশা মধ্যেই যেন তীব্র ভাবে উঁকি-ঝুঁকি দেওয়ার চেষ্টা করি। যখন সুযোগ পেয়েছি, ঠিক তখন নিজের হাতের ছোট্ট এক মোবাইল ফোনের নোটবুক বা এক টুকরো কাগজের পাতায় মনে জমে থাকা দাগ গুলো লেখার মধ্য দিয়ে কেটে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, শুধুই কষ্টের স্মৃতিকথা গুলো লিখে, যখন যা মনে আসে বলা যায় হিজিবিজি লিখে। এমন দেশের ‘ম্যাগাজিন’, ‘অনলাইন নিউজ পোর্টাল’, ‘দৈনিক পত্রিকা’ ও ‘গবেষণা জার্নালে’ নানা সময়ের বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো ছাপা হয়েছে। সমসাময়িক ‘প্রবন্ধ বা ফিচার’ নিয়ে লেখা প্রকাশ করার জন্যও অনুরোধ পেয়েছি। সেগুলো একটু ঝালাই করলে নতুন আরও অনেক ”প্রবন্ধ, সংকলন বা ফিচার ও প্রতিবেদন হিসেবেই একটি বই প্রকাশ সম্ভব। প্রতি দিনের ব্যস্ততায় ভাবি, আসলেই কি তা করে যেতে পারবো। ব্যক্তিগত লাইব্রেরির দিকে তাকালে শুধুই যেন আক্ষেপ হয়, অন্যের লেখা বই পড়ি কিন্তু নিজের লেখা বই আকারে প্রকাশ হলো না। তাই আগামী ‘বই’ মেলাতে দু’টি ‘প্রবন্ধ বই প্রকাশ’ করার ইচ্ছা পোষণ করি। হাজার দুঃখ কষ্টের মাঝেও বলতে চাই যে, ‘এখন আমার জেগে ওঠার সময় এখন আমার সময় পথে নামার এখন সময় নতুন সূর্যের….এখন সময় পূর্বপানে চাওয়ার।’ বয়স তো হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ”লাজুক ধরনের মানুষ বেশীর ভাগ সময়েই মনের কথা বলতে পারে না। মনের কথা হড়বড় করে বলতে পারে শুধুমাত্র যেন পাগলরাই। আর পাগলরা মনে হয় সেই কারণেই সুখী’।
পরিশেষে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতেই চাই যে, ‘আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে,…/ আমার এ দীপ না জ্বালালে দেয় না কিছুই আলো’। লিখছি লিখেই যাব। ভালো বাসুক আর নাই বা বাসুক, নিন্দা করুক বা নাই বা করুক। জ্ঞানের অন্বেষণের তৈরি হওয়া মানুষ ও ভালোবাসার মানুষ দু’একজন হলেও আছে। বলতে হয়, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হাছন রাজা, মীর মশাররফ হোসেন” এর মতো রুটিনমাফিক নিজের দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও চেষ্টার অবহেলা নেই। দৈনন্দিন খুবই ব্যস্ততার মধ্যে লেখালেখি করি। বাংলা সাহিত্যের সব শাখাগুলো অমশ্রিণ হলেও কবিতা, গান, গদ্য, নাটকসহ শিল্প চর্চার সবকিছুতেই যেন এ হাতের ছোঁয়া রয়েছে। পারদর্শিতার বড়াই নয়। কেবল মাত্রই চেষ্টা আর চেষ্টা। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে আমার যত সামান্য হলেও কিছু অবদান আছে। “কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, চিঠি সাহিত্য, নাটক, সংগীত, চিত্রকলা সহ সব শাখায় দাপটের সহিত নাহলেও চেষ্টা করে যাই।আবারও হুমায়ূন আহমেদের কথাতেই বলি,- “পৃথিবীতে আনন্দ কিংবা দুঃখ সব সময়ে থাকবে না সমান-সমান। বিজ্ঞানের ভাষায় আনন্দের সংরক্ষণশীলতা।.. একজন কেউ চরম আনন্দ পেলে, অন্য জনকে চরম দুঃখ পেতে হবে’।
লেখক: টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।