নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ২নং দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুর আলম সাজুর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর প্রেসক্লাব বরাবরে অভিযোগ করেণ নারী ইউপি সদস্য মোছা: আছমা আক্তার।
অভিযোগের বিবরণে জানা গেছে, সারাদেশে করোনা ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দ্যেগে
১ম ধাপে প্রতি প্ররিবারে জি আর কর্মসূচীর আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের উপকারভোগীদের ২০কেজি করে ৭৫ জনকে চাল দেয়ার কথা থাকলেও প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। জনপ্রতি মাস্টার রোলে বিশ কেজি বরাদ্দের নামে টিপসহি নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের কেউ ৭কেজি, অনেকে কেজি চাল ও পেয়েছেন। ২য় ধাপে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে একই অর্থ বছরের মাস্টার রোলে ১০ কেজি চাল ৫শ জনকে বিতরণ করার কথা ছিল। সেই চাল প্রতি পরিবারের জন্য ৭-৮ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। লকডাউন উপেক্ষা করে সামাজিক দুরত্ব বজায় না রেখে সেখানে ৮কেজি করে চাল বিতরণ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ বিষয় গুলো নিয়ে ওই ইউপির (৪,৫,৬) ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আসমা আক্তার প্রতিবাদ করে। এরই
জেরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নানা ভাবে গালিগালাজ ও নাজেহাল করার চেষ্টা করে। এর আগেও এমন স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তার নানা অপর্কেমর ফিরিস্তি তুলে ধরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সূরাহা প্রতিকার মেলেনি। এর কিছু দিন পর ইউপি সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি পূরণ না করে এ নিয়ে টালবাহানা শুরু করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এছাড়া দরপত্র ছাড়া রেজুলেশনের দোহাই দিয়ে কিছু সংখ্যক ইউপি সদস্যদের ফুসলিয়ে গাছ কর্তন, বালুর ডাইভার্সন, জন্ম নিবন্ধন বাবাদ টাকা আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের দোকান ঘর ভাড়া ও মোটা অংকের সিকিউরিটি মানি নিয়ে ব্যক্তিগত খাতে ব্যবহার, সহ অন্যান্য নানা খাতের আয় ইউপি’র ব্যাংক হিসাবে জমা না করে আত্মসাৎ করার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে গতকাল শনিবার সরেজমিনে গেলে অসংখ্য ভুক্তভোগী জানান,
সরকারি জিআর বরাদ্দকৃত বিশ কেজি চালের মধ্যে ৭-৮ কেজি কপালে জুটেছে। চাল বাড়িতে নিয়ে মেপে এ দৃশ্য দেখা যায়। সবেবরাতের রোজা রেখে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থেকে এ চাল পেয়েছেন কার্ডধারীরা। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বেশক’জন ভুক্তভোগীকে অশ্লীল ভাষা ও শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটিয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যার শাহীনুর আলম সাজু। অনেকে ভাতাকার্ড দেওয়ার নাম করে অনিচ্ছাকৃতভাবে লাইগেশন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে করে তার স্ত্রী’র বিরুদ্ধে। তাদের একজনের লাইগেশন করার পরও সন্তান প্রসব হয়েছে বলে জানা গেছে। জি আর প্রকল্পের আওতায় মাস্টার রোলের ৬নং ক্রমিকধারী বেদেনা আক্তার নামে উপকারভোগী দুই স্থানে টিপসহি নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার চাল পাননি বলে সাংবাদিকদের নিকট অকপটে বলেন।
ওই দিন চাল নিতে আসা মাজেদা আক্তার নামে এক বৃদ্ধাকে শত শত মানুষের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে খোদ চেয়ারম্যান শাহিনুর আলম সাজু। উপকারভোগীর দুই নম্বর ক্রমিকধারী সবুজা আক্তার পাঁচ সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী নিয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। টেলা চালিয়ে লাকরি বিক্রি করে সংসার চলে তার। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ায় কোনমতে দিন পার করছে এ পরিবারটি। লাইনে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে বিশ কেজি চালের মাস্টার রোলে টিপসহি নিয়েছে। চাল দিয়েছে ৭ কেজি।
কম দিয়েছে বলতেই চালের প্যাকেট ছুড়ে ফেলে দেয় চেয়ারম্যান। ক্ষুধার জ¦ালা সহ্য করতে না পেরে ওই সাত কেজি চাল বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ বিবরণ বলতে গিয়ে বার বার কান্না করেণ এভুক্তভোগী। তিনি আরো বলেন, চাল বিতরণের সময়ে বাহিরে টিপসহি নেন। পরিষদের ভিতরে সচিব স্যার আরও একটি টিপ সহি নেন।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুর আলম সাজু জানান, আমার বিরুদ্ধে দেয়া সকল অভিযোগই মিথ্যা।
আমি এর কিছুই জানিনা। পরিষদের অন্যান্য সদস্যগন রয়েছে তাঁদের সাথে কথা বলে দেখতে
পারেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম বলেন, আমি উভয়েরই লিখিত অভিযোগ
পেয়েছি, ইতোমধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য কমিটি করে দিয়েছি, প্রতিবেদন পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো