আমার স্মৃতিতে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব

আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গৌরব এবং ঐতিহ্যের ৪২ বছর পূর্ণ করলো। ১৯৭৮ সালের ৭ মে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিছু উদীয়মান যুবকের অদম্য উৎসাহকে পু্ঁজি করেই প্রেসক্লাবটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। সাংবাদিকতায় নবীন হলেও সংবাদপত্রের পাঠক, গল্প-কবিতার লেখক, রাজনীতি-সাংস্কৃতিক চর্চার হাতে-খড়ি প্রায় সবারই ছিল। ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত সৈনিক। তাঁরাই সেদিন মিলিত হয়ে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার বীজ বোপন করেছিলেন।

পাবনার জেলার সবচেয়ে অবহেলিত এবং অনুন্নত এই থানার অবকাঠামোর চিত্র ছিল খুবই করুন। আটঘরিয়ায় পুলিশ স্টেশন এবং দেবোত্তরে থানা কাউন্সিলের কিছু অফিস ছাড়া এখানে কোন বড় বাজার ছিলোনা। আটঘরিয়া এবং দেবোত্তরে সপ্তাহে দুইদিন করে হাট বসতো। উল্লেখিত দুই হাটে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছিল। ২/৩ টা চা-স্টল আর একটা দুইটা ছিল মুদি দোকান। প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠালগ্নে পেপার পড়ার পাঠকের সংখ্যা সেটাও ছিল হাতে গোনা। এমন একটি থানায় প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষনায় বিশেষ বিশেষ মহল সেদিন আঁতকে উঠেছিলেন । জেলার সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং অনুন্নত থানায় প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার ঘটনা তৎকালীন সময়ে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক মহলে অবাক এবং হতবাক করে। আটঘরিয়া প্রেসক্লাব জেলার তৃতীয় প্রেসক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার আগে ১৯৬২ সালে পাবনা প্রেসক্লাব এবং তারপরে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় আর স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠন করে ইতিহাসে জেলার তৃতীয় প্রেসক্লাব হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের আগে অত্র অঞ্চলের সন্তান হিসেবে আরেকটি অর্জন আমার ছিল। সেটা হলো স্বাধীনতার পরে পাবনা শহর থেকে প্রথম প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইছামতি পত্রিকার সম্পাদক হওয়া। যদিও সম্পাদক হওয়ার কোন যোগ্যতাই তখন আমার ছিলো না। আমার বয়স, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা কোনটাই ছিলো না। বলা যায় সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে আমি সাংবাদিক হয়েছি। তবে দায়িত্ব প্রদানকারীরা ছিলো খুবই প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী। সদ্য স্বাধীন দেশে সম্ভবত ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে রফিকুল ইসলাম বকুল এবং ফজলুল হক মন্টুর সামনে অনেকে উপস্থিত ছিলাম। ফজলুল হক মন্টু আমাদের গ্রুপের নেতা আব্দুল হাই তপনকে উদ্দেশ্য করে বলেন ছাত্রলীগের মুখপাত্র হিসেবে একটি পত্রিকা বের করো। আব্দুল হাই তপন পাবনা পলিটিক্যাল ইন্সটিটিউটের ছাত্র সংসদের জিএস। এছাড়া ফজলুল হক মন্টুর ক্লাশমেট এবং একসাথে জেলা স্কুলে পড়তেন । এরপর আব্দুল হাই তপন দায়িত্ব নিয়ে তাঁর সার্কেলের মধ্যে বসে এবং আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেন সাপ্তাহিক ইছামতি নামে পত্রিকা বের হবে। আমাকে সম্পাদক এবং উনি প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী প্রথম সংখ্যা বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ অফিসে পত্রিকার অফিস স্থাপন করা হয়। বয়স এবং যোগ্যতা থেকে বড় বোঝা আমার কাঁধে তুলে দেওয়ার প্রধান কারন ছিল প্রথমতঃ আমার হাতের লেখা ভালো ছিল। স্বাধীনতার আগে থেকে গল্প কবিতা লেখার অভ্যাস ছিল। এছাড়া ছোটবেলা থেকে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিল। আর এইসব বিষয়ে খুব ছোটবেলা থেকে আরেকটি অভ্যাস রপ্ত করেছিলাম। পেপারের কোন নিউজ দেখলে সেটা নকল করতাম। যেমন পত্রিকায় প্রকাশিত কোন সংবাদ স্থান কাল পরিবর্তন করে অবিকল লেখতাম। এমন করে লেখতে লেখতে মনের মধ্যে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন বাসা বেঁধেছিল। তাই ১৮/১৯ বছর বয়সে সাপ্তাহিক ইছামতি পত্রিকার সম্পাদক হওয়া, জাতীয় দৈনিক গনকন্ঠের জেলা সংবাদদাতা হওয়া সম্ভব হয়েছিল। মাঝে মাঝে বিভিন্ন জেলা শহর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় নামে-বেনামে উপ সম্পাদকীয় লেখতাম।

১৯৭২ সালের জুন মাসে সাপ্তাহিক ইছামতি বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই মাসে ছাত্র লীগে বিভক্তি এবং অক্টোবর মাসে জাসদ গঠন হলে ঘটনাক্রমে জাসদ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। ১৯৭৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জাসদের মুখপাত্র দৈনিক গণকন্ঠে সীমিত আকারে সংবাদ প্রেরন করতাম। মার্চ মাসে রক্ষীবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় যেতে হয়। পাবনা এবং দিনাজপুর জেলখানায় প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় অন্তরীণ থাকতে হয়। আমি জেলে যাওয়ার পর পুরা সময় পেপার নিতাম। দিনাজপুর জেলখানায় আট মাসের বেশি সময় থাকাকালীন সেখান থেকে প্রকাশিত দৈনিক উত্তরা পত্রিকায় অনামিকা নামে উপ সম্পাদকীয় লেখতাম। জেলখানায় এক ঘনিষ্ট কারারক্ষীর মাধ্যমে লেখা পাঠাতাম। আমার লেখা প্রকাশ৷ হলে উনি আমাকে প্রকাশিত পত্রিকাটি গোপনে সরবরাহ করতেন। এরপর সেখান থেকে আমাকে আবার পাবনা জেলে পাঠানো হয়। ১৯৭৫ সালের শেষদিকে জেল থেকে মুক্তিলাভ করি। তখন সামরিক শাসন থাকায় রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকে। সংবাদপত্র কঠোরভাবে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত থাকে।

১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে আবার সংবাদপত্রের সাথে জড়িয়ে পড়ি। ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দেশবাংলা, দৈনিক বাংলারমুখ পত্রিকায় পাবনা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করি। দিনাজপুরের দৈনিক উত্তরা এবং যশোর থেকে দৈনিক স্ফুলিঙ্গ পত্রিকাতেও কাজ শুরু করি। ৭৮ সালের ফেব্রুয়ারী /মার্চের দিকে বা তারও পরে আটঘরিয়াকে স্টেশন করে ঐ সব প্রত্রিকায় সংবাদ পাঠালে সংবাদ প্রকাশ হতে থাকে। আটঘরিয়া ( পাবনা) – সংবাদদাতা হিসেবে সংবাদ প্রকাশ হতে থাকলে একাই বেশ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ পাঠাতে থাকি। তখনতো সংবাদ পাঠানো সেগুলি প্রকাশ হয়ে আমার কাছে আসতে সপ্তাহ পার হয়ে যেতো। পোস্ট অফিসের মাধ্যেমে বুক পোস্ট করে সংবাদ পাঠালে ২/৩ দিন পর পত্রিকা অফিসে পৌঁছাতো। সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সেখান থেকে একই ভাবে প্রত্রিকা পোস্ট অফিস হয়ে আমার কাছে পৌঁছাতে আর ৩/৪ দিন লাগাতো। মফঃস্বল সাংবাদিকরা জেলা শহর থেকে একই ভাবে সংবাদ পাঠাতেন । খুব জরুরী সংবাদ হলে সাংবাদিকরা টেলিগ্রাম করে বা ফোনে সংবাদ দিতেন। ফোনে সংবাদ পাঠানো ছিল তখন খুবই ব্যয়বহুল। ঐ সময়ে নুতন করে সাংবাদিকতা করার ব্যাপারে উৎসাহী করা ও সহযোগিতা করার বিষয়ে একটি মানুষের অবদান আজ কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতে হচ্ছে। তিনি হলেন পাবনা প্রেসক্লাবের প্রয়াত সাংবাদিক আ,জ,ম আব্দুল আউয়াল খান । উনি সাংবাদিক আব্দুল মতিন খানের বড় ভাই ও সাংবাদিক রবিউল ইসলাম রবি’র একমাত্র ভগ্নিপতি। প্রয়াত আউয়াল খান সাংবাদিকতা করতেন। তিনি পৈলানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং জেলা শিক্ষক সমিতির সম্পাদক ছিলেন।উনিই আমাকে পুনরায় সাংবাদিকতা করার বিষয়ে এবং পরবর্তীতে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের ব্যাপারে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।

আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনে এবং সাংবাদিকতা করার বিষয় নিয়ে দেবোত্তর ভূমি অফিসে চাকুরীরত এবাদত আলী, দেবোত্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়া ও মোহাম্মদ ইয়াসিন, বিআরডিবি অফিসে কর্মরত মোঃ হাসান আলী এবং দেবোত্তরে অবস্থানরত থানা পশু সম্পদ কর্মকর্তার ছেলে সিরাজুদ দাহার মাতলু সাথে পর্যায়ক্রমে আলাপ আলোচনা করি। উপরে উল্লেখিত কারো সাংবাদিকতা করার বিষয়ে ধারনা নাই। তবে উনাদের মধ্যে এবাদত আলী এবং মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়ার লেখালেখি করার অভ্যাস ছিল। তাঁরা ছোটবেলা থেকে গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখতেন এবং সেগুলো তৎকালীন সময়ে ছোট ছোট ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় প্রকাশ হতো। আমার জানা ছিল এবাদত আলী ১৯৬৬ সালে পাবনার রাধানগর মজুমদার একাডেমীর স্কুল বার্ষিকী প্রকাশনায় জড়িত ছিলেন। উনি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সম্পাদনা পরিষদে ছিলেন। উনি ভালো গল্প কবিতা এবং রম্য রচনা লিখতে পারতেন। রাধানগর মজুমদার একাডেমীর স্কুল বার্ষিকীতে ভাগ্য বিড়ম্বনা নামে আমার লেখা কবিতা প্রকাশ হয়েছিল। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র এবং সেটা জীবনের প্রথম লেখা কবিতা ছিল। আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠন এবং সাংবাদিকতা নিয়ে উনার সাথে আমার প্রথম কথা হয়। এছাড়া আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের বিষয় নিয়ে আমরা যারা আলাপ আলোচনা করি, তাঁদের মধ্যে এবাদত আলী ছিলেন সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। উনার সম্পর্কে আরেকটি বিষয়ে উল্লেখ্য যে উনি আমার বড় ভাইয়ের সহপাঠী এবং তাঁরা খুব ঘনিষ্ট বন্ধু।

১৯৭৮ সালের ৭ মে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের জন্য আমার আহবানে সবাই একত্রিত হই। আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।সাংবাদিক হওয়ার আগে প্রেসক্লাব গঠন করা ঠিক হবে কিনা? সরকারী চাকুরী করে সাংবাদিকতা করা যায় কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। বৈঠকে উপস্থিত ৬ জনের ৪ জনই ছিলেন সরকারী চাকুরীজীবি। বাঁকীজন সিরাজুদ দাহার মাতলু হলেন এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা। বিষয়টি নিয়ে আরেকটু ভাবা যায় কিনা সে প্রস্তাবও উঠে । এই বিষয়ে আমি অনড় এবং অটল থাকলাম। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি আজই প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষনা করবো। কারন হিসেবে সবার কাছে আমার অভিমত প্রকাশ করে বললাম, ৭ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আটঘরিয়া থানা সফরে আসবেন। আমরা আজ প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষনা দিয়ে ঐদিন প্রেসিডেন্ট জিয়ার সমাবেশে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব এর নামে ব্যানার সহ উপস্থিত থাকলে সবার দৃষ্টিতে পড়বে। এমন স্থানে ব্যানার সহ উপস্থিত থাকলে গোটা দেশব্যাপী আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের প্রচার হবে । আমার এমন কথায় সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায় । জোড়ালো বিরোধী আর কেউ করলো না। আমি এও বললাম আজ প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষনা হোক। পরে কেউ থাকতে না চাইলেও সমস্যা নাই। সংগঠনটি চলমান থাকবে এবং আগামীতে নিশ্চয়ই আগ্রহী অনেক সংবাদকর্মী আমরা পাবো। এই প্রসঙ্গে আবারো উল্লেখ করি বৈঠকে উপস্থিত সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ হলেন এবাদত আলী। তাছাড়া সভায় উপস্থিত আব্দুস সাত্তার মিয়া, মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং হাসান আলী তাঁরাও আমার বয়সে বড়। আমি উনাদের মধ্যে বয়সে ছোট হলেও আমাকে ছোট বলে অবমূল্যায়ন কেউ করতেন না। আমি মনে মনে অটল ছিলাম আজই প্রেসক্লাব গঠনের ঘোষনা করবো। নেতৃত্ব নির্ধারন মনে মনে করে রেখেছিলাম। সভা শেষে আমি ঘোষণা করলাম, সভাপতি এবাদত আলী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়া, সদস্য যথাক্রমে মোহাম্মদ ইয়াসিন, হাসান আলী, সিরাজুদ দাহার মাতলু এবং আমি।

আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা প্রত্যাশার চাইতে বেশী সফল হলাম। আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠনের সংবাদ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ হলো। পাবনার সিনিয়র সাংবাদিক মহল এবং সংবাদপত্রগুলি আমাদের এই সাহসী পদক্ষেপকে স্বাগত জানালো। প্রেসক্লাব গঠনের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সাথে যুক্ত হলেন, এইচ,কে,এম আবু বকর সিদ্দিক। টেবুনিয়ার আবদুল কুদ্দুস সাগরকে দিয়ে একটি সুন্দর ব্যানার লেখানো হলো। পরে সাগর এবং টেবুনিয়ার মিয়া আব্দুস সাত্তার আটঘরিয়া প্রেসক্লাবে যুক্ত হন । রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আটঘরিয়া স্কুল মাঠের জনসভায় আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের ব্যানার নিয়ে উপস্থিত থাকলাম। সভায় আগত রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর সফরসঙ্গী সহ জনসভায় উপস্থিত সমস্ত মানুষ আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের ব্যানার দেখে স্থানীয় সাংবাদিকদের অস্তিত্ব অবলোকন করলেন। সাংবাদিক হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ আটঘরিয়ার মানুষের কাছে দিন দিন বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হলো। শুরু করলাম কলম হাতে আটঘরিয়াকে প্রকাশ করার যুদ্ধ। সংবাদ বানানো, সাংবাদিক বানানো, সংবাদ পত্রের পাঠক বানানো ছিল শুরুর কাজ। কে কোন পত্রিকায় কাজ করবে, কিভাবে সংবাদ লিখবে, কিভাবে সংবাদ সংগ্রহ করবে, কিভাবে আটঘরিয়ার সমস্যা বা উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরী করবে এর সবকিছুই আমরা মিলিতভাবে করতাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাংবাদিক নিয়োগ পেতে থাকলো । দিন দিন সংবাদকর্মীর কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকলো। পত্রিকার এজেন্ট, হকার আর পাঠক সৃষ্টি হলো। বলা যায় প্রেসক্লাবের প্রথম দশক ছিল আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের স্বর্ণযুগ। যা আজ আমার কাছে সোনালী অতীত।

একটি সংগঠনের ৪২ বছর অতিক্রান্ত করা এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। ৪২ বছর একসাথে চলতে গিয়ে ভালমন্দ সবকিছু নিয়েই চলতে হয়েছে। মন্দ বিষয়গুলি বাদ দিয়ে বলতে চাই আটঘরিয়া প্রেসক্লাব এর অতীত এবং বর্তমান অবস্থান গৌরব এবং ঐতিহ্যের। পৃথিবীর সকল বৃহৎ সৃষ্টিই হয়েছে ছোট থেকে। আমাদের গৌরবের এই প্রতিষ্ঠানটিও ছোট দিয়ে শুরু হয়ে আজ শক্ত অবস্থানে দন্ডায়মান। ৪২ বছর অতিক্রান্ত এই সংগঠনের সাথে জড়িত অনেক সাথী আমাদের মাঝ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। বিশেষ করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম শহীদুল্লাহ, মরহুম আব্দুল কুদ্দুস খান ও মরহুম রস্তম আলীর কথা বার বার মনে পড়ছে। আল্লাহ উনাদেরকে জান্নাতবাসী করবেন। এই সংগঠনটি যতকাল থাকবে ততকাল তাঁদের নাম উচ্চারিত হবে। পরম করুনাময়ের অশেষ মেহেরবানীতে আটঘরিয়া প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম ৭ জন এখনো দুনিয়াতে বেঁচে আছি। আজকের এই স্মরণীয় মুহূর্তে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, শ্রদ্ধাভাজন এবাদত আলী, মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়া , মোহাম্মদ ইয়াসিন, হাসান আলী ,সিরাজুদ দাহার মাতলু এবং এইচ,কে,এম আবু বকর সিদ্দিককে।

আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য সিরাজুদ দাহার মাতলু, মোঃ হাসান আলী সাংবাদিকতা এবং তাঁদের অবস্থান ধরে রাখতে না পারলেও তাঁরা চিরকাল এই সংগঠনের স্তম্ভ। সংগঠন তাঁদের অবস্থানকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যবধি এবাদত আলী, আব্দুস সাত্তার মিয়া, মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং এইচ,কে,এম আবু বকর সিদ্দিক গত ৪২ বছর যাবত একদিনের জন্য হলেও সাংবাদিকতা থেকে বিরত থাকেন নাই। এদের মধ্যে এবাদত আলী এবং এইচ,কে,এম আবু বকর সিদ্দিক নিজ যোগ্যতা গুণে দীর্ঘদিন পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য। মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়া তাঁর যোগ্যতা গুনে আটঘরিয়ার প্রথম সংবাদপত্র সাপ্তাহিক দেশবিবরন প্রকাশ করেছেন। আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য। তিনি দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি। সে চ্যানেল নাইন সহ বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে কাজ করেন। আটঘরিয়ার প্রেসক্লাবের খাইরুল ইসলাম বাসিদ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন বাবু PABNAREPOT24.COM নামে একটি অনলাইন চ্যানেল পরিচালনা করেন। এছাড়া আটঘরিয়ার অনেক কৃতি সাংবাদিক আজ পাবনা জেলা শহর ও ঢাকার টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে সুনামের সাথে কাজ করছেন।

আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের দীর্ঘ পথচলায় সভাপতি হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, বিশেষ করে এবাদত আলী, আব্দুস সাত্তার মিয়া, অধ্যাপক আব্দুল গফুর মিয়া, এইচ,কে,এম আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুস সামাদ আজাদ ও খাইরুল ইসলাম বাসিদ এবং এই সময়কালে সাধারন সম্পাদক হিসেবে মরহুম শহীদুল্লাহ, মোহাম্মদ ইয়াসিন, এডভোকেট সানোয়ার হোসেন, প্রভাষক আমজাদ হোসেন, প্রভাষক মোবারক হোসেন, মাসুদ রানা, মোফাজ্জল হোসেন বাবু ও জিল্লুর রহমান রানা সহ প্রেসক্লাবের প্রবীণ অসংখ্য সংবাদকর্মীকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। বিশেষ করে প্রবীন সাংবাদিকদের মধ্যে মোঃ তৈয়াব আলী, মোসলেম উদ্দিন খান, ফজলুর রহমান খান, আবুল হোসেন, রইস উদ্দিন রবি, জিল্লুর রহমান ডিলু, এডভোকেট আতাউর রহমান রানা, নুরুল ইসলাম খান, আনারুল ইসলাম, মাওলানা আমিরুল ইসলাম, মোঃ শফিউল্লাহ, মাজেদ প্রিন্স, রবিউল ইসলাম শাহীন, শফিউল্লাহ শফি, শফিকুল ইসলাম মিঠু, শহিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম সহ নুতন প্রজন্মের অনেক তরুণমুখ যারা সংবাদপত্র ও আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের সাথে কাজ করছেন। সবাইকে আমার অন্তর থেকে শুভেচ্ছা, ভালবাসা এবং শুভ কামনা। বিশেষ করে আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের চলমান সভাপতি খায়রুল ইসলাম বাসিদ এবং সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান রানাকে অভিনন্দন। অন্তর থেকে কামনা করি আগামীতে আমার প্রানপ্রিয় আটঘরিয়া প্রেসক্লাব যেন সুচারুভাবে পরিচালিত হয়। আশাকরি বর্তমান এবং আগামীর মধ্যে দিয়ে আমাদের কর্ম যেন বেঁচে থাকে। ❤❤
( শেষ)

লেখক পরিচিতি

আমিরুল ইসলাম রাঙা
প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য
আটঘরিয়া প্রেসক্লাব
পাবনা।
৮ মে ২০২০