আমাদের দেশে একটি প্রবাদ বাক্য চালু আছে , তাহলো “ একেই বলে কলির কাল বিড়ালে চাটে বাঘের গাল”। গত ২১ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলোতে একটি খবর বেরিয়েছে, ফেসবুক লাইভের মাধমে তারাবি, জুম‘া ও ঈদের জামায়াতের আয়োজন করেছে নিউয়র্কের মোহাম্মাদী সেন্টার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিমিং প্লাটফরম ব্যবহার করে ঘর থেকেই সপরিবারে জামাতে যোগ দেওয়া যাবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কের মুসলিম ধর্মাবলম্বি কমিউনিটিতে জ্যাকশন হাইটসের মোহাম্মদী সেন্টার বিভিন্ন পরিসেবা নিয়ে কাজ করছে। করোনা পরিস্থিতর কারণে নিউইয়র্কের মসজিদগুলো বন্ধ থাকায় মুসুল্লিদের কথা বিবেচনা করে ফেসবুক লাইভে তারাবি, জু‘মা ও ঈদুল ফিতর নামাজের জামাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৩ এপ্রিল স্থানীয় সময় রাত ১০-৪০ মিনিটে মোহাম্মদী সেন্টার থেকে ইমাম কাজি কাইয়ুম ‘ সুরা তারাবি’ নামের ফেসবুক আইডিতে যুক্ত হয়ে তারাবির নামাজে ইমাম হিসেবে নেতৃত্ব দিবেন। একইভাবে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে প্রতি শুক্রবার নিউইয়র্ক সময় ২ টায় জু‘মা নামাজের জামাতেও মুসুল্লিরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। নিউইয়র্কে লকডাউনের সময়সীমা ১৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে জুন পর্যন্ত নগরীর উন্মুক্তস্থানে যে কোন ধরণের জমায়েতর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঈদগাহের একটি মাত্র জামাত সকাল সাড়ে ৯ টায় ফেসবুক লাইভে মোহাম্মদী সেন্টার থেকে সরাসরি আদায় করা হবে।
শুধু বিদেশে কেন করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশেও রমজান মাসে মসজিদে গিয়ে জামাত করে নামাজ না পড়ে বিকল্প হিসেবে মসজিদ থেকে টেলিভিশনে তারাবির নামাজ সরাসরি সম্প্রচারের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এই প্রস্তাব করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। নিজের নির্বাচনী এলাকায় রমজান মাসে টেলিভিশনে তারাবির নামাজ সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তার এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন অনেকেই। মিঃ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘‘কোন একটা জায়গার নামাজ সম্প্রচার করা হলে সেটার যে অডিও আছে সেটি অুনসরণ করে আপনি খতম তারাবি পড়তে পারেন।’’ যেমন বিশ^ ইজতেমায় যখন আখেরি মোনাজাত হয় তখন টেলিভিশনে তা সরাসরি দেখে অনেকে সেই মোনাজাতে অংশ নেন। আবার আমরা যখন নামাজ পড়ি, বেশিরভাগ লোকই কিন্তু ইমামকে দেখতে পাননা। তখন আমরা মাইকে যে শব্দ আসে সেটা অনুসরণ করে নামাজ শেষ করি।
সাবের হোসেন চৌধুরী মনে করছেন এটি একটি ধারণা এবং বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ। তিনি আরো বলেছেন, “অনেকেই অন্তত রমজান মাসে তারাবির নামাজটা পড়েন। তারাবি নামাজের যে দুটো পদ্ধতি সুরার মাধ্য মেসুরা তারাবি এবং খতম তারাবি। যাদের বাড়িতে কোন হাফেজ নেই তাদের জন্য এটি খতম তারাবির একটি অপশন (বিকল্প) হতে পারে। টেলিভিশনে সম্প্রচার হলে কারো টিভির স্ক্রিনে তাকানোর প্রয়োজন নেই। শুধু অডিও শুনলেই হবে।” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, সৌদি আরবের মক্কায় তারাবির সময় অডিও সরাসরি সম্প্রচার হয়, অনেকেই সেটি অনুসরণ করে নামাজ পড়েন। বাংলাদেশে প্রযুক্তির দিক দিয়ে এটা অসম্ভব কিছু নয়।” তবে তিনি বলেছেন, ‘‘ বিষয়টি ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী এবং ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী কতটুকু সঠিক, সেটা জানতে হবে। সেটা নিয়ে আরো চিন্তা হতে পারে কথা হতে পারে। ”
এব্যাপারে ধর্মীয় রীতি কি বলে? ধারণাটি নিয়ে ধর্মীয় মত কি? সে নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের একজন খতিব মিজানুর রহমান অবশ্য টেলিভিশনে নামাজ পড়ার বিষয়টি কতটা ইসলামী বিধিসম্মত তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বিশ^ ইজতেমার সাথে এর পার্থক্যটা হলো একটা মোনাজাত আর একটা হলো সালাত। টেলিভিশনে দেখে মোনাজাতে শরিক হওয়া নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। কিন্তু নামাজের বিষয়টা হলো ইমামকে এক্তেদা করতে হয়। অনুসরণ করতে হয়। এই জায়গাটাতে এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর অধিকাংশ মুফতি মনে করেন টিভিতে দেখে নামাজের এক্তেদা করা ঠিক না।’’
টিভি সালাত বা টিভি অনুসরণ করে তারাবির নামাজ জায়েজ নয় বলে ইসলামি ফাউন্ডেশন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনো কোনো টিভি চ্যানেলে তারাবিহ নামাজ সম্প্রচারের মাধ্যমে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করে নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে তারাবিহ নামাজ আদায় করার বিষয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে মর্মে জানা যায়।‘ ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কাতারের সংলগ্নতা (ইত্তেসাল) জামাত ও ইক্তেদা সহীহ হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত। এটি মানা না হলে নামাজ সহীহ হবেনা। তাই কোন টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করা তারাবি নামাজের ইমাম সাহেবের তেলাওয়াত শুনে ও রুকু-সিজদার অনুসরণ নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে ইক্তেদা করে তারাবিহের নামাজ আদায় করা হলে তা কোনভাবেই সহীহ ও জায়েজ হবেনা মর্মে বিশিষ্ট মুফতি ও আলেমগণ মতামত দিয়েছেন। বিষয়টি অনুধাবন করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃস্টি পরিহারকল্পে টিভি চ্যানেলে তারাবির নামাজসহ অন্যান্য নামাজ সম্প্রচার হতে বিরত থাকার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। । (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব