সঞ্জু রায়, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে গ্রামে এসেছি, কাজ করি তো শহরে তাও বন্ধ যেখানে বর্তমানে জীবন বাঁচানোই দায় সেখানে মেস মালিক প্রতিদিন ফোন করে ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। কোন ইনকাম নেই এই ক্রান্তিকালে ভাড়া দিবো কিভাবে? এমন অনেক স্ট্যাটাস ভেসে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পেজে। শিক্ষানগরী হিসেবে বগুড়া সারাদেশে সুপরিচিত। উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ায় ছোট বড় মিলিয়ে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুধু বগুড়ারই নয় আশেপাশের কয়েক জেলা এবং বগুড়ার ১২টি উপজেলা থেকে লাখো শিক্ষার্থী এই বগুড়ায় বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে যার মাঝে এক সরকারি আজিজুল হক কলেজেই অধ্যায়ন করছে প্রায় ৪২ হাজার শিক্ষার্থী। শহরের সেউজগাড়ি, কামারগাড়ি, জহুরুলনগর, কলোনী, ফুলবাড়ি, বৃন্দাবনপাড়া, চকসূত্রাপুর, খান্দারসহ বিভিন্ন এলাকায় এই শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাজারো ছাত্রাবাস/মেস যেখানে থেকেই নিজেদের স্বপ্ন পূরণে পার্ট টাইম চাকরি, টিউশনি কিংবা গ্রাম থেকে কৃষক অথবা কর্মজীবি বাবার পাঠানো টাকায় খরচ দিয়ে থেকে অধ্যায়ন করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় গত ১৯শে মার্চ বগুড়ার প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেস খালি করার নির্দেশ দিলে তারা কোন প্রস্তুতি ছাড়াই নিজেদের সকল জিনিসপত্র রেখে মেস খালি করে চলে যায়। কিন্তু মাস শেষের সাথে সাথেই শুরু হয় এই শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বিড়ম্বনা। ফোনে ভাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন মেস মালিক এবং বিভিন্ন ছাত্রবাসের টিম লিডারেরা এমন সকল তথ্য দেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের এক শিক্ষার্থী নূর ইসলাম। এছাড়াও সরেজমিনে গিয়েও লক্ষ্য করা যায় সেউজগাড়ি এলাকার বেশ কিছু ছাত্রাবাসে নোটিশ দেয়া আছে যে, মার্চ মাস বাদেই এপ্রিল ও মে ২ মাসের পুরো ভাড়া সাথে সাথে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল এবং মেসের রান্নার বুয়ার বেতন সকলকে পরিশোধ করতে হবে। করোনা দুর্যোগে যখন রাজশাহীসহ আশেপাশের বেশ কিছু জেলায় অসংখ্য ছাত্রাবাসের ভাড়া মওকুফ অথবা মানবিকতার স্বার্থে অর্ধেক করা হয়েছে সেখানে বগুড়ায় কেন তাদের পুরো ভাড়া দিতে হবে এমন অসহায় পরিস্থিতিতে এমন মানবিক আবেদন শত শত শিক্ষার্থীর যার দরুণ ইতিমধ্যেই আলাদা আলাদাভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে। আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেস মালিকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনেক মেস মালিক আছে যাদের এই মেসের ভাড়া দিয়েই সংসার চলে। সরকার তো আর গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল মাফ করেনি তাহলে ভাড়া মওকুফ করলে তারা চলবে কিভাবে তবুও আলোচনার মাধ্যমে প্রশাসন যদি বলে তারা অবশ্যই মানবিকতার স্বার্থে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করবেন বলে জানান। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই ছাত্রলীগের উদ্যোগে উক্ত বিষয় সমাধানে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বিশ^াস করেন সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে ছাত্রাবাসের ভাড়া মওকুফ বা অর্ধেক যেটাই হোক একটি সমাধান হবে এবং এটি মানবিক স্বার্থে অবশ্যই হওয়া উচিত বলে একজন সাবেক আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করেন এই ছাত্রনেতা। সরকারি শাহ সুলতান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো: খায়শেদ আলম (শিপন) ছাত্রাবাসের এই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বলেন, প্রতিদিন কোন না কোন শিক্ষার্থী উক্ত সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ফোন দিচ্ছে। মানবিকতার স্বার্থে তিনি ছাত্রাবাস বা মেস মালিকদের ভাড়া মওকুফ কিংবা অর্ধেক করার বিষয়ে অনুরোধ জ্ঞাপন করেন এবং এক্ষেত্রে শিক্ষকদের পক্ষে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানি কিংবা করোনা দুর্যোগে জোরপূর্বক মেস খালি করার হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, ভাড়া মওকুফের বিষয়ে পুলিশের তেমন কিছু করনীয় না থাকলেও দেশের এই ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থীদের যদি কোন মেস মালিক হয়রানি বা মেস খালি করার হুমকি দেয় তা মানবিক স্বার্থে পুলিশ দেখবে। এধরণের পরিস্থিতি হলে শিক্ষার্থীদের পাশে জেলা পুলিশ পরিবার অবশ্যই থাকবে বলে তিনি আশ^স্ত করেন। মেসের ভাড়া মওকুফ কিংবা এই পরিস্থিতি সমাধানের বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, মেসের ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তারা পেয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে মানবিকতার স্বার্থে তিনি ছাত্রাবাসের মালিকদের ভাড়ার বিষয়ে নমনীয় হওয়ার আহব্বান জানান। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকতে তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জ্ঞাপন করেন।