রেলের তেল চুরি চেষ্টার অভিযোগে ঈশ্বরদীতে ট্রেন চালক নাজমুল হোসেন, সহকারী ট্রেন চালক খাইরুল ইসলাম ও ট্রেন পরিচালক রোকনুজ্জামানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে মেকানিক্যাল (ডিএমই) লোকো আশিষ কুমার পাল বরখাস্তের ঘটনা নিশ্চিত করলেও তেল চুরির কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, রবিবার রাতে মালবাহী ট্রেন (মালগাড়ি) নিয়ে রাজশাহী হতে ঈশ্বরদীতে আসার পথে লোকমানপুর স্টেশন এলাকায় ইঞ্জিন থেকে তেল চুরি ও বিক্রি চেষ্টার সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় অফিস থেকে অভিযুক্ত তিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযোগ, রবিবার রাতে রেলওয়ে পাকশী বিভাগের একটি খালি মালগাড়ি (নম্বর-আরএইচকে সিক্সডাউন, ইঞ্জিন নম্বর-৬৪০৩) রাজশাহী হতে ঈশ্বরদীতে আসার পথে লোকমানপুর স্টেশন এলাকায় চারজন তেল চোর চালকের সহযোগিতায় ইঞ্জিনে ওঠে । এসময় ট্রেনে থাকা কর্তব্যরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আবুল হোসেন ও আব্দুল আওয়াল তেল চোরদের আটক করার চেষ্টা করে। কিন্তু চালক-সহকারী চালকসহ চার তেলচোর মিলে নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়িত্বপালনে বাধার সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে উভয়ের জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চালকরা ট্রেনের গতি কমিয়ে দিলে চোররা ইঞ্জিন থেকে পালিয়ে যায়। এসময় চালকরা চোরদের তেল চুরির কাজে ব্যবহৃত পলিথিনের বস্তা জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।
রেল শ্রমিক লীগ নেতা জাহাঙ্গির হোসেন জানান, পোশাক বিহীন রেল নিরাপত্তা বাহিনীর ২ জন সদস্য ইঞ্জিনে উঠতে চাইলে দায়িত্বরত চালকরা নিয়ম অনুযায়ী বাধা প্রদান করে। এতে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওই সদস্যরা তেল চুরির প্রচেষ্টার অভিযোগ করেন। কিন্তু ট্রেনটি ঈশ্বরদীতে আসার পর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তেল পরিমাপ করা হলে চুরির কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
জানা যায়, পাকশী কন্ট্রোল অফিসের অনুমতি ছাড়াই ট্রেনটিকে এক পর্যায়ে রহস্যজনকভাবে আজিমনগর স্টেশনে থামিয়ে দেয়। প্রায় ৩/৪ মিনিট পরে ট্রেনটি চালিয়ে রাত ১০ টায় ঈশ্বরদী স্টেশন ইয়ার্ডে প্রবেশ করার পর ইঞ্জিন লোকোসেডে নিয়ে ইঞ্জিনের ট্যাংকির তেল পরিমাপ করে ২৬’শ লিটার তেল রিজার্ভ পাওয়া যায়। ঘটনার পরই নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত চীফ কমান্ডেন্ট রেজোয়ান উর রহমান, পাকশীর ডিএমই (লোকো) আশিষ কুমার পাল ও অন্যান্য কর্মকর্তারা লোকোসেডে উপস্থিত হয়ে ইঞ্জিন পরিদর্শন করেন।
ডিএমইস(লোকো) আশিষ কুমার পাল জানান, ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিকভাবে ট্রেন চালক নাজমুল হোসেন,সহকারী ট্রেন চালক খাইরুল ইসলাম ও ট্রেন পরিচালক রোকনুজ্জামানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলেও তেল চুরির অভিযোগের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তেল চুরির অভিযোগ ছাড়াও রেল নিরাপত্তা বাহিনীর আরো কিছু ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। সেগুলে তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।