করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মানুষ বাধ্য হয়েই এখন ঘরে থাকছেন। যে কারণে এই সময়ে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটের ব্যবহার থেকে বাদ পড়ছে না শিশুরাও। তবে শিশুদের দীর্ঘসময় মোবাইল ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা শিশুর চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। একই সঙ্গে বেশিক্ষণ স্ক্রিনে সময় দেওয়া এক ধরনের আসক্তি। যার ফলে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যেহেতু শিশুদের স্কুল এখন বন্ধ এবং এ সময়ে তারা বাইরে গিয়েও খেলাধুলা করতে পারছে না, তাই স্ক্রিনের সামনেই বেশি সময় ব্যয় করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুরা স্ক্রিনের সামনে কত সময় ব্যয় করবে, তা বাবা-মাকে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে ব্যয় করতে দেওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। এ সময়টাতে বাবা-মায়ের উচিত শিশুদের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
ব্যস্ত জীবনে আমরা শিশুদের খুব একটা সময় দিতে পারি না। তাই এই অবসরে শিশুদের সঙ্গে কথা বলা, গল্প করা, খেলাধুলা করে সময় কাটাতে হবে। শিশুদের সঙ্গে কথা বলে এ সময়ের জন্য একটি নতুন রুটিন তৈরি করা যেতে পারে। সেখানে অনলাইনে শিশুদের ভিডিও গেম খেলার বিষয়টা থাকবে। তবে সেটা কোনো আগ্রাসী গেম নয়, শিশুতোষ গেম হতে হবে এবং সেটা কত সময় ধরে খেলবে, তাও নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। কেননা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালে ভিডিও গেমসের প্রতি আসক্তিকে এক ধরনের রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, লকডাউনের এ সময়টাতে শিশুদের স্কুল বন্ধ। এ সময়টাতে শিশুদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে বড়োদের মধ্যে করোনার যে ভীতি তা শিশুদের মধ্যেও ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে আমরা যদি শিশুদের ট্যাব-মোবাইলে আসক্ত করে ফেলি তাহলে লকডাউনের পরেও তারা এ আসক্তি ছাড়তে পারবে না এবং পরিবারের সঙ্গে বন্ধনটা দৃঢ় হবে না। শিশুরা ট্যাবে বা মোবাইলে যা খেলছে, সে সবের বিষয়গুলো সব সময় আগ্রাসি হয়ে থাকে। যেটা তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। শিশুরা অবশ্যই মোবাইল-ট্যাব ব্যবহার করবে, তবে সেটা অবশ্যই যৌক্তিক ইস্যুতে, নির্দিষ্ট সময়ে, বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে ব্যবহার করবে।
অরবিট ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ বলেন, আমাদের বাচ্চারা এমনিতে মোবাইল-ট্যাবের প্রতি আসক্তি থাকে। আর এখন তো শিশুদের স্কুল বন্ধ, বাসায় অফুরন্ত সময়। এ সময়ে বাধ্য হয়ে তাদের খেলতে দিতে হচ্ছে। সাধারণত বাচ্চাদের চোখের জন্য খুবি ক্ষতিকর স্ক্রিনের আলো। করোনার কারণে শিশুদের চোখে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হবে। তিনি বলেন, এ সময়টাতে শিশুদের সময় দিতে হবে বাবা-মায়েদের। এছাড়া শিশুদের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দুই-তিন ঘণ্টার বেশি এসব ডিভাইসে খেলতে দেওয়া উচিত নয়।