পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতির কারণে উপজেলা প্রকৌশল অফিস বন্ধ থাকায় কর্মকর্তারা অফিসে আসেন না এবং সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ কাজের তদারকি করেন না। এই সুযোগে ঠিকাদার জিন্নাত আলী জিন্নাহ উপজেলার বেতুয়ান-শরৎনগর সড়কের সংস্কার কাজে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা সহ নানা অনিয়ম করছে। অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রকৌশল অফিস উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রাম থেকে ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের শরৎনগর পর্যন্ত ৩.২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। কাজটি পায় পাবনা শহরের প্রভাবশালী ঠিকাদার জিন্নাত আলী জিন্নাহ। কাজ দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে। গত জানুয়ারি মাস থেকে ঠিকাদার কাজ শুরু করেন । তবে গত তিন মাসে সংস্কার কাজের ২৫ ভাগ কাজও সম্পন্ন হয়নি। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রকৌশল অফিস ছুটি হয়ে গেলে জোরেশোরে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গত তিন মাস ধরে ঠিকাদার সড়কের দুই পাশে শুধুমাত্র হেজিংয়ে ইট স্থাপন ও মাটির কাজ করেছেন।
এরপর গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে উপজেলা প্রকৌশল অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ার পরে সড়কে খোয়া ফেলার কাজ শুরু করা হয়। গত একমাস যাবৎ পুরোদমে সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। তবে এর মধ্যে সংস্কারকাজ দেখভালের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। এই সুযোগে ঠিকাদার অত্যন্ত নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করছেন। সড়কে বিছানো খোয়ার উপরে গাছের অসংখ্য পাতা ও আবর্জনা পড়ে থাকে। এই আবর্জনা না সরিয়েই খোয়া রুলার করা হচ্ছে। এছাড়া দরপত্র অনুযায়ী খোয়ার পুরুত্ব মেইনটেনেন্স করা হচ্ছে না। প্রথমে ঠিকাদারের ম্যানেজারকে দরপত্র অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা না করায় উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ঠিকাদার জিন্নাহ অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় দরপত্র অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বুঝে নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নানাভাবে হেনস্থা হতে হয়। সম্প্রতি এলজিইডি আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বড়াল ব্রীজ স্টেশন থেকে বনওয়ারিনগর জিসিএম সড়ক পুনর্বাসনের কাজ করছেন ঠিকাদার জিন্নাহ। ওই কাজে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগে গত মাসে কাজ বন্ধ করে দেয় জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বাদশা মিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদার জিন্নাহ নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা পাবনা সদর থানায় একটি জিডিও করেন।
বেতুয়ান গ্রামের বাসিন্দা ও দিলপাশার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রিপন আহমেদ বলেন, সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজন কাউকে তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের খোয়া ও আবর্জনা সহ রোলিং করছে। তাছাড়া খোয়ার পুরুত্ব সড়কের বেশিরভাগ স্থানেই দরপত্র না মেনে এক থেকে দেড় ইঞ্চি করে কম রাখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি এর ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপ-প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়ক সংস্কার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সরেজমিনে অনুসন্ধান করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।