পরকীয়ার জের ধরে ঈশ্বরদীতে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে দিনাজ প্রমানিককে (৪৫) হত্যার ঘটনায় স্ত্রীসহ ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশ মুলাডুলি চেকপোষ্ট হতে ট্রাকসহ ২ জন এবং দিনাজের বাড়ি হতে স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো মুলাডুলি ইউনিয়নের সড়ইকান্দি আদর্শগ্রাম পশ্চিমপাড়ার রুস্তম আলীর পুত্র ট্রাকচালক কামরুল হাসান ওরফে কামির ফকির (৪২), একইগ্রামের মৃত জামাল উদ্দিন ব্যাপারির পুত্র ট্রাকের হেলপার মফিজুল ইসলাম মিন্টু (৩৫) এবং নিহত দিনাজের স্ত্রী এক সন্তানেরর জননী হোসনেয়ারা বেগম (৪২)। ফোনে ডেকে নিয়ে দিনাজকে গাঁজা খাইয়ে ট্রাকের কেবিনে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর গোয়ালবাথান গ্রামের হায়দার মাষ্টারের পারিবারিক কবরস্থানের পাশে জঙ্গলে ফেলে ২জন চলে যায় বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। থানায় কামির ও মিন্টুর দেয় স্বীকোরক্তির ভিত্তিতে মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে নিহতের স্ত্রী হোসনেয়ারাকে তার বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়।
থানায় প্রদত্ত স্বীকোরক্তির বরাত দিয়ে অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) অরবিন্দ সরকার জানান, দুঃসম্পর্কের ফুপু দিনাজের স্ত্রী হোসনেয়ারার সাথে কামির ফকিরের ছোট বেলা হতেই সম্পর্ক ছিলো। এরই মধ্যে দিনাজের সাথে হোসনেয়ারার বিয়ে হয়। তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে এবং সেও বিবাহিত । দিনাজ দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকায় স্ত্রীর সাথে কামিরের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রবাস হতে ফিরে আসার পর অবৈধ সম্পর্ক বাধাগ্রস্থ হয়। এরই জের ধরে গত ১৮ই এপ্রিল শনিবার রাতে আরআরপি’র ট্রাক চালক কামির ফকির ফোন করে দিনাজকে সড়ইকান্দিতে ডেকে এনে হেলপারসহ একসাথে গাঁজা সেবন করে। এক পর্যায়ে দিনাজ বেসামাল হয়ে পড়লে তাকে ট্রাকের কেবিনের মধ্যে নিয়ে ২জন মিলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর ট্রাক চালিয়ে গোয়ালবাথান গ্রামের হায়দার মাষ্টারের পারিবারিক কবরস্থানের পাশে জঙ্গলে ফেলে রাখে। পরে তারা আরআরপি’র মালামাল নিয়ে নরসিংদী চলে যায়। সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নরসিংদী হতে অন্য মালামাল নিয়ে ফেরার পথে মুলাডুলি চেকপোষ্টে ট্রাকসহ তারা গ্রেফতার হয়। পরে থানায় দেয়া স্বীকোরক্তির ভিত্তিতে রাতেই হোসনেয়ারাকে বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়। হোসনেয়ারা থানায় অবৈধ সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও হত্যাকান্ডের পরিকল্পনার সাথে বলে জনিয়েছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ প্রকৃত আসামী গ্রেফতার এবং হত্যার মূল কারণ উদ্ঘাটন করতে পুলিশ সমর্থ হয়েছে। অবৈধ সম্পর্ক বাধাগ্রস্থ হওয়ার কারণে এই হত্যাকান্ড সংঘঠিত হওয়ার মূল কারণ বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, নিহত দিনাজও দুষ্টু প্রকৃতির ও মাদকাসক্ত ছিল। বিয়ের আসর থেকে হোসনেয়ারাকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে সে বিয়ে করে।
প্রসঙ্গত: রবিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৬টায় মুলাডুলি ইউনিয়নের গোয়ালবাথান গ্রামের হায়দার মাষ্টারের পারিবারিক কবরস্থানের পাশে জঙ্গলের মধ্য থেকে পুলিশ দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মৃত হামিজ উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে দিনাজ প্রামাণিকের মরদেহ উদ্ধার করে।