ইয়ানূর রহমান : বরাবর আমি একটু ভিন্ন আঙ্েিগত করতে ভালবাসি। কিন্তু এই দুই রিয়েল হিরো, দুই যোদ্ধার ক্ষেত্রে সেটা বড়ই বেমানান।
শুরু করি, গল্প নয়, বাস্তব। সবাই সব কিছু পারে না। আবার সবার দিয়ে সব কিছু হয়ও না। নিজের বা নিজ পরিবারের থেকে যারা দেশকে তথা দেশের মানুষকে বেশি ভালবাসে, তারাই হয় প্রকৃত দেশপ্রেমিক। অর্থ্যাৎ সত্যিকারের যোদ্ধা।
হ্যাঁ, বলছি শার্শার দুই রিয়েল হিরো, দুই যোদ্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল ও উপজেলা সহকারী ম্যাজিষ্ট্রেট (ভুমি) খোরশেদ আলমের কথা। যারা নিজ স্বার্থ ও পরিবারের কথা চিন্তা না করে, করোনা সংক্রমণ রোধে নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দিন কি আর রাত কি ছুটে বেড়াচ্ছেন শার্শা উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। মানুষকে ভালো রাখা তথা শার্শাবাসীর সাথে সাথে সমগ্র দেশবাসীকে ভালো রাখাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো ছুটছেন বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে তাদের হোম কোয়ারান্টাইনে রাখতে। টাঙ্গিয়ে দিচ্ছেন তাদের বাড়িতে লাল পতাকা। আবার কখনো ছুটছেন ভারত ফেরত যাত্রীদের নিয়ে। তাদেরকে রাখছেন যশোরের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে। এই দুই যোদ্ধা নিজেরা ভালো না থেকে জনসাধারণকে ভালো রাখছেন। জনসাধারণকে ভালো রাখতে তাদের ছুটে চলা অবিরাম। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদেরকে সরকারি বিধি নিষেধ মেনে চলার আহবান জানাচ্ছেন। আবার সচেতনতায় শার্শাব্যাপী নিয়মিত করছেন বাজার মনিটরিং। তদরুপ, অনিয়মের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আদায় করছেন জরিমানা।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে গৃহ বন্দী অসহায় দুস্থ দিন আনা দিন খাওয়া দিনমজুর পরিবারের মাঝে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। এ যেন মানবতার ফেরিওয়ালা। যুদ্ধ ক্ষেত্রের আদর্শ দুই যোদ্ধা। আর যোদ্ধারা বুঝি এমনই হয় ?
কথা হয় শার্শার দিনমজুর কাসেম মিয়ার (৫০) সাথে, তিনি বলেন, আল্লাহ তিনাদের ভালা করুক। দেশের দূঃসময়ে তিনারা যেভাবে আমাদের পাশে থেকে সাহায্য করছেন, আল্লাহ তাদের অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুক। আমরা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তাদের প্রতি ধন্য।
খোরশেদ আলমের দুটি কথা, “জানিনা কতদিন টিকে থাকবো” “তবে আমি পালাবোনা” “প্রশাসন কখনও পালায়না” “দায়িত্ব থেকে পালানোর কথা আমার জানা নেই”।
সত্যিকার একজন যোদ্ধার কথা, সত্যিই এখন আমার ভয় করে বাইরে যেতে, ডিউটির পর বাসায় ফিরতে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবো, এই পেশার প্রতি খুব শ্রদ্ধা ও ফ্যাসিনেশন ছিলো। নিজেকে এই পেশায় বিলিয়ে দিতে কখনো পিছপা হবোনা। নিজের ছোট ছেলে ও পরিবারকে বাসায় রেখেও প্রতিদিন করোনা বিস্তার প্রতিরোধ, ভারত থেকে আগত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ, মোবাইল কোর্ট, বাজার মনিটরিং, মানুষকে নিজ ঘরে অবস্থান নিশ্চিতকরণের জন্য ছুটে চলছি উপজেলার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। আমার নিজের খাওয়া- ঘুম বাদ দিয়ে ডিউটিতে যাই, সমস্যা নেই, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি একদমই ভিন্ন, মানুষকে বুঝিয়ে, অনুরোধ করে, জরিমানা করেও ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছেনা। এখন আমি আমার পরিবারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমার মাধ্যমে যদি ভাইরাস বাসায় নিয়ে যাই তো আমার ছেলের ও পরিবারের কি হবে? তবুও আমি ডিউটি করছি, পালাইনি, পালাবোও না। ভয় করে ছেলেকে চুমু দিতে, কোলে নিতে। নিজের নিঃশ্বাসকেই বিষাক্ত মনে হয়। তারমধ্যে পিপিই পরে বাহিরে রৌদ্রের মধ্যে কাজ করাও বিশাল এক যন্ত্রণা! মাস্ক পরে দম কেমন বন্ধ হয়ে আসে। প্রতিটি ডিউটিই এমন মানসিক আর শারীরিক কষ্টে ভরা।
তবুও হাজার কষ্টের মাঝে যোদ্ধারা তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। অম্লান হবে না তাদের যুদ্ধ। আপনারা নিজ ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, অপরকে সুস্থ রাখুন। আপনাদেরকে সুস্থ রাখতে আমরা আছি ময়দানে।
হারার আগে আমরা হারবো না। কথা দিলাম আপনাদেরকে সুস্থ রাখবো। এবার আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। প্রয়োজন ছাড়া অপ্রয়োজনে ঘর থেকে কেউ বাহির হবেন না। আপনাদের ভালো থাকাই আমাদের একান্ত কাম্য।
এ কথা গুলি বলেছেন আর কেউ নয়, আমাদের উপজেলা সহকারী ম্যাজিষ্ট্রেট (ভুমি) খোরশেদ আলম।#