করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতিতে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির এক মাস পার হয়েছে। ক্লাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে পাঠ্যসূচি শেষ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগছে। তবে এই সংকট কাটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে সংসদ টেলিভিশনে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষকদের দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান শুরু করেছে। কিন্তু এতে শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকছে না। তাছাড়া সংসদ টেলিভিশন কেবল অপারেটরের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এই চ্যানেলটি দেখতে না পাওয়ায় পাঠদানে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে এই অবস্থায় পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরশহরে কয়েকজন প্রতিভাবান তরুণ শিক্ষক মাধ্যমিক পর্যায়ে ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফূর্ততাও দেখা যাচ্ছে। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়া উন্মুক্তভাবে এই পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা তাদের পিতা-মাতার ফেসবুক আইডি থেকে সরাসরি এই পাঠদান কার্যক্রম দেখছে। ক্লাস শেষে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে অসমাপ্ত বিষয়াদি সমাধান করে নিচ্ছেন।
রাশেদুল ইসলাম রঙ্গন ঢাকা কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসে গত ৭/৮ বছর ধরে ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ান। তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। গত মাসের ১৭ তারিখ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এ সপ্তাহ খানেক পরেই তিনি শুরু করেন ফেসবুক লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে পাঠদান। প্রতিদিন তার পাঠদানে ফেসবুকের মাধ্যমে অর্ধশত শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তিনি নবম ও দশম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান এবং অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাসের পাঠদান করান। সপ্তাহে তিনদিন এক ঘণ্টা করে পদার্থ বিজ্ঞান ও তিনদিন অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাসের পাঠদান দেখান। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পাঠ্যসূচি অনুসারে পাঠদান করানো হয়। শিক্ষার্থীরা পাঠদানের কোনো বিষয়ে বুঝতে অসুবিধা হলে ক্লাস শেষে মোবাইলে অথবা মেসেঞ্জারে শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান করে নেয়।
পৌর শহরের শরৎনগর বাজারের আরেক শিক্ষক জামাল উদ্দিন। তিনি চাটমোহরের মির্জাপুরের একটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণিত বিষয়ের শিক্ষক। তবে তিনি ভাঙ্গুড়াতে সপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনিও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ফেসবুক লাইভে গণিত বিষয়ে পাঠদান করেন। অনলাইনের বদৌলতে চাটমোহরের মির্জাপুরে বাসায় বসেও শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া শহরের আরো কয়েকজন শিক্ষক ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ফেসবুকে লাইভ পাঠদান করছেন।
শহরের মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়ামসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল ও প্রাইভেট পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে পড়াশোনায় মন বসছিল না। এজন্য বাবা-মা প্রায়ই বকাঝকা করতেন। পরে রঙ্গন স্যারের ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পাঠদান দেখি। সেখানে কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে স্যারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে সমাধান করে নেই। স্যার আমাদের বাড়ির কাজ করতে দেন। সেই কাজ সম্পন্ন করতে আমাদের বাড়িতে পড়াশোনা করতে হয়। এতে মা-বাবাও খুশি হন।
শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম রঙ্গন বলেন, করোনার দুর্যোগকালীন ছুটিতে শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাসায় বসে না থাকে। সে বিষয়টা মাথায় নিয়ে ফেসবুকে লাইভ পাঠদান সম্প্রচার করি। এতে প্রতিদিন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান দেখে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।
ভাঙ্গুড়া সদরের জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, করোনা দুর্যোগের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বিঘ্ন হচ্ছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগে এই সংকট কেটে উঠবে। এ অবস্থায় ভাঙ্গুড়ার কয়েকজন তরুণ শিক্ষক ফেসবুকে লাইভে পাঠদান করে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করে রাখছে। এতে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যসূচি সম্পূর্ণ করতে পারবে বলে আশা করি। এছাড়া আরো শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অনলাইনের মাধ্যমে লাইভ পাঠদান চালু করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।