পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশেনববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। এটি বাঙালি জাতির একটি সর্বজনীন লোকউৎসব।
আনন্দ আড্ডার ফাঁকে উৎসবমুখর পরিবেশের মাধ্যমে বাঙালি জাতি দিনটিকে বরণ করে থাকে।অতীত জীবনের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লালি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় দিনটি উদযাপীত হয়।
সম্রাট আকবর এর সময় থেকে সূচনা হয় বাঙালির ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ উদযাপন। বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালি জাতি এই বিশেষ দিনটিকে বিভিন্নভাবে রং ঢং মাখিয়ে বরণ করে নেয়।
বাংলা
নববর্ষকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠন বৈশাখী মেলার আয়োজন কর
থাকে, আয়োজন করা হয় সরকারি ভাবেও। কোথাও দিনব্যাপী, কোথাও সপ্তাহব্যাপী,
কোথাও আবার মাসব্যাপী চলে এ বৈশাখী আনন্দ মেলা।
বাংলা
নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনন্সিটিউট,বাংলাদেশ শিল্পকলা
একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘ, ছায়ানট,বুলবুল
ললিতকলা একাডেমি, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, নজরুল
একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান
এবং দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন কর থাকে।
কর্মসূচিজুড়ে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,আলোচনা সভা, বর্ণাঢ্য মিছিল,বৈশাখী
সহ নানান আয়োজন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন পহেলা বৈশাখের ওপর বিশেষ
অনুষ্ঠান প্রচার থাকে,বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও দেশের অনেকগুলো টেলিভিশন
বিভিন্ন এলাকাতে চলমান অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে।
পহেলা
বৈশাখ মানে, বাঙালি জাতির পান্তা-ইলিশ খাওয়ার দিন,আনন্দ আড্ডায় মেতে থাকার
দিন,রঙে রঙিন হয়ে কৃষ্ণচূড়ার আগুনঝরা হাওয়ায় ভাসা রং ঢং দেখার দিন। প্রতি
বছর এই দিনটিকে কেন্দ্র করে ভোট ৬ টায় বিভিন্ন সংগঠনগুলো প্লেকার্ড,
ফেস্টুন নিয়ে আনন্দ মিছিল করে,মিছিল শেষে সবাই দলবেধে পান্তা-ইলিশ
খাওয়া,এযেন অন্যরকম একটি আনন্দের অনুভূতি।
মেলায় চলে যাত্রা,পালাগান, কবিগাব,জারিগান,গম্ভীরা গান,গাজীর গান,আলকাপ গান সহ বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত,বাউল-মারফতি-মুর্শিদি-ভাটিয়ালি ইত্যাদি আঞ্চলিক গান। লাইলি-মজনু,ইউসুফ-জুলেখা,রাধাকৃষ্ণ, প্রঙৃতি আখ্যান। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক,পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাস মেলার বিশেষ আকর্ষণ। শিশুদের আকৃষ্ট করার জন্য মেলায় প্রধান আকর্ষণ হয়ে পড়ে বায়োস্কোপ।
এত
আনন্দ আড্ডা আর রঙিন পোশাকে রঙে রঙিন হয়ে কৃষ্ণচূড়ার আগুনঝরা হাওয়ার সাথে
ভেসে চলা সুগন্ধি মেখে মেলায় ঘুরেফিরে ক্লান্ত হওয়ার বালাই থাকে না যেখানে
অথচ আজ এই বাঙালি জাতি দিনটিকে বরণ করে নিতে পারলো না এবং আনন্দ আড্ডার
দাওয়াত থেকে বঞ্চিত হলো।
ছায়ানটে চলে লাখো বাঙালির আনন্দ আড্ডার মেলা,শহীদ মিনার,টি. এস. সি, চারুকলা এলাকা জনসমুদ্রে পরিনত হয়। দেশের
বিভিন্ন জেলা শহরে চলে আনন্দ মেলা, গান হয় পাবনা এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ মাঠে, টেলিভিশনে সরকারি সম্প্রচার করা হয়,লাখো মানুষের ভীর জমে, এভাবে
সারাদেশেই চলে আনন্দ আড্ডার বৈশাখী উদযাপন।
কিন্তু
১৪২৭ অর্থাৎ ২০২০ সালে এমন একটা সময় বাঙালি জাতির মাঝে বৈশাখ আসলো,কে
জানতো এমন হবে,কে জানতো বৈশাখের এমন দিনে বাঙালি জাতিকে ঘরে বন্দীহয়ে থাকতে হবে,এ যেন মাটি হয়ে গেলো কোটি বাঙালির ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ উদযাপন।
বিশ্বব্যাপী
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দরুন এবার আর পহেলা বৈশাখ পালন করা হলো না,বিশেষ
জায়গাগুলো যেমন ছায়ানট,চারুকলা,শহীদ মিনার,টি.এস.সি সহ বিভিন্ন জনসমুদ্রের
স্থান আজ বড়ই একা রইল।
কোটি কোটি বাঙালির ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ ঘরে বসেই একাকিত্ব ভাবেই চলে গেল।বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা ঘরবন্দীই থেকে গেলো।