প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এ ক্লান্তিলগ্নে সাধারণ রোগীরা যখন হাসপাতালে কোন চিকিৎসা সেবা না পেয়ে একের পর এক মারা যাচ্ছে তখন ডাক্তারদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তিনি ডাক্তারদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,যে সব ডাক্তার রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেবেন না নিজেরা সুরক্ষিত থাকবেন তাদেরকে চাকরি করতে দেয়া হবে না।এ পর্যন্ত কোন কোন ডাক্তার সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয় নি তাদের তালিকা চেয়েছেন।তিনি আরও বলেছেন যাদের মানবতা নেই তাদের চাকরি করার দরকার নেই। তিনি যে সব চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো ছাড়াও চিকিৎসকদের করোনাভাইরাসের আক্রান্তদের প্রণোদণা ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎকদের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্যে চিকিৎসক সমাজের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর উপর বেশ নাখোশ হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে দেশের এদুর্যোগের সময় সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রধাণমন্ত্রীর এ বক্তব্যে বেশ খুশি হয়েছেন ।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার কাছেও বেশ
সময়োপযোগিও যথার্থ মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যাদের মানবতা নেই তাদের চাকরি
করার দরকার নেই চিকিৎসকদের উদেশ্যে এ বক্তব্য আমাকে আপ্লুত
করেছে।করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকেই আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকরাদের বেশির
ভাগই চিকিৎসা সেবা থেকে নিজেদের দুরে রেখেছেন। সাধারণ অসুখেও মানুষ
হাসপাতালে কোন চিকিৎসা পাচ্ছেন না।ডেলিভারি রোগিকেও চিকিৎসা সেব না দেয়ায়
রাস্তায় বাচ্চা প্রসব করতে হচ্ছে।কোন হাসপাতালেই চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছে
না। চিকিৎসার অভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে।
চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসে নিজেদের বাঁচানোর চিন্তায় হাসপাতালে রোগি দেখানো থেকে বিরত রয়েছেন। কোন কোন হাসপাতাল গেটে চিকিৎসকরা তাদের পোষ্যদের দাঁড় করিয়ে রেখেছেন যাতে কোন রোগি হাসপাতালে ঢুকতে না পারে।আর এসব দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকরা মানব সেবার শপথ নিয়ে যে চাকরি জীবন শুরু করেছেন তা তারা মানছেন না। প্রধানমন্ত্রীর যাদের মানবতা নেই তাদের চাকরি করার দরকার নেই- এ কথাটি আমার মনে বেশ দাগ কেটেছে।
শুধু তাই নয় আমাকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। প্রধানমন্ত্রী কাদের কাছ থেকে মানবিক আচরণ আশা করছেন ? দেশের কয়জন চিকিৎসক মানবিক মুল্যবোধে জীবন কাটান? আমাদের চারপাশে কি দেখছি? বেশির ভাগ চিকিৎসকই যেন রক্তচোষা এক একটি জোকের মতো। যতক্ষণ পারে ততক্ষণ যেমন জোক রক্তচুষেই যায়। তেমনি ও চিকিৎসক।এরা টাকার জন্য কি করছে না বলুন তো? যে রোগির যে টেষ্ট দরকার নেই তাও দেয়া হচ্ছে।যত বেশি টেষ্ট তত বেশি তাদের কমিশন। যে ওষধ লাগবে না তাও দেয়া হচ্ছে । চেম্বার থেকে বেড় হলেই তাই তো কোম্পানির প্রতিনিথিরা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে কামড়া কামড়ি করছে।
প্রতিনিধিরা মনিটর করছে তাদেও চুক্তি মতো চিকিৎসক ওষধ লিখছে কি না? ওষধ কোম্পানির সাথে তো তাদের বছর চুক্তি।ওষধ কোম্পানির লোকজন কেবল চিকিৎসকদের বাড়িতে বাড়িতে বার্বুচি নিয়োগ দেয়াটাই বাদ রেখেছেন।কী বলবো তৈজষপত্রের কথা তো বলারই নয়। এখন চিকিৎসকদের দাম্পত্য জীবনের বিশেষ প্রয়োজনিয় সামগ্রিও কিনতে হয় না।তা কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরবরাহ করে থাকেন।এ প্রসঙ্গে এক বন্ধু আলাপে বললেন আগামিতে এমন দিন আসবে যেখানে চিকিৎসকদের জন্য কোম্পানি রেডিমেট বউ ও ব্যবস্থা করবেন। তার কথাটা আমার কাছে চটুল মনে হলেও অবস্থা কিন্তু কোন মতেই সেবাধর্মী নয় একজন সংবাদকর্মীর পর্যবেক্ষণে আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের দেশে শতকরা কতভাগ চিকিৎসক মানব সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করছেন তা জানতে হলে এর উপর ব্যাপক গবেষণা করা দরকার।
আমার দৃষ্টিতে বেশির ভাগই শুধু টাকা আর টাকা কামাইয়ে ব্যস্ত।কেউ যেন বুঝতে চায় না এত টাকা সম্পদ দিয়ে তাদের কি হবে? চোখ বন্ধ করলে কিছুই যাবে না তাদের সাথে এটা যেন কেউ মনে করছেন না । আমার দুঃখ যেমন হয় তেমনি করুনাও হয় এ ভেবে দেশের সেরা মেধাবী সন্তানদের এ অধপতন । আর একটি বিষয় মনে হয় আমাদের এনবিআরের দুর্বলতা চিকিৎসকদের অর্থ কামাইয়ে যেন আরও বেশি উৎসাহি করছে।মফস্বল শহরে কোন কোন চিকিৎসক দিনে গড়ে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা কামাই করলেও তরা কত টাকা আয়ের উপর সরকারকে কর দিচ্ছে? সবকিছু টাকার বিনিময়ে তারা ম্যানেজ করে জনগণের কষ্টের টাকা ডাকাতি করে সম্পদের পাহাড় গড়লেও কে দেখবে? অসুস্থ অসহায় মানুষের কাছ থেকে মুনাফা লুটার মনোভাব কখনও মানবিক হতে পারে না। তাই তাদের কাছ থেকে মানবিকতা আশা করাটাও মনে হয় গুড়ে বালি।
প্রধানমন্ত্রির হুশিয়ারির পরেও চিকিৎসকরা কী তাদের সেবা দিচ্ছেন? চিকিৎসকরা কি তাদের মনোভাবের কোন পরিবর্তণ এনেছেন এ প্রশ্ন ও জানতে ইচ্ছে করছে। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চোখ রাখলে দেখবেন কোন পরিবর্তণ হয় নি। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে কি অসহায় অবস্থায় ফিরে আসছে। প্রথম দিকে না হয় চিকিৎসকরা তাদের সংক্রামন উপকরণ না দেয়ায় তারা সেবা থেকে বিরত ছিলেন ।
কিন্তু এখন কি তা সরবরাহ করা হয়নি? তারা দুরুত্ব বজায় রেখে কি সেবা চালাতে পারনে না? এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না।আর প্রধাণমন্ত্রীর এ বক্তব্যর পর চিকিৎসকরা সেবা চালু রেখেছেন কিনা এটা মনিটর করার কী কেউ নেই? আমরা সবাই তাকিয়ে থাকি উপরওয়ালার আদেশের অপেক্ষায়? এ মন্ত্রণালয়ের কী কোন ভুমিকা নেই? তারা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে যদি কমিটি করে কঠোরভাবে মনিটর করতেন তাহলে অবস্থার উত্তরণ ঘটতো আর মানুষও সেবা থেকে বঞ্চিত হতো না।দেশের এ ক্লান্তিলগ্নে চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংগঠন বিএমএ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ,ড্যাব সবাই যেন মুখে কুলুপ এঁটে আছে? তাদের ও কী কোন ভুমিকা নেই?
আসলে সবাই যেন যার যার স্বার্থ নিয়ে বিভোড় ।কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। লিখতে বসে একটি খবর মনে পড়ে গেল করোনাভাইরাসের ভয়ে কয়েক হাজার এন্ট্রার্নি চিকিসক যোগদান থেকে বিরত আছেন ।হায়রে জাতির কপাল। একজন চিকিসক বানাতে দেশের কত টাকা খরচ করতে হয় এটা কবে বোধোদয় হবে আমাদের।আর এ টাকা যে এ পা ফাঁটা জনগনণ যোগান দেয় এটা কবে বুঝবে আমাদের মেধাবী সন্তান চিকিৎসকরা। আমার কাছে আর একটি বিষয় মনে হয়, এখন ও সময় আছে চিকিৎসকদের নিজেদের একটু বদলে মানবিক হতে। আর যদি এ উপলব্ধি না আসে তবে এমন দিন আসবে জনতার কাঠগড়ায় তাদের কড়ায় গন্ডায় এর জবাব দিতে হবে। সে অপেক্ষার দিনটি কবে শেষ হবে তা পাঠকের উপরই ছেড়ে দিলাম।
কৃষ্ণ ভৌমিক
পাবনা।
৯-৪-২০