বর্তমান সময়ে পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা স্যোসাইল মিডিয়াতে সব চাইতে বেশী করোনা ভাইরাসের সংবাদ দেখা যায়। এই ভাইরাস মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের গজব ছাড়া আর কিছু নয়। যা বর্তমান বিশ্বে এক আতংকের নাম। যেটি মানুষদের কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যখন তোমাদের ওপর মুসিবত এল, যার দ্বিগুণ তোমরা ঘটিয়েছ, তখন তোমরা বললে, এটা কোত্থেকে এল! (হে নবী) আপনি বলে দিন, এ তো তোমাদের পাপ থেকেই; নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আল ইমরান ১৬৫)
কুরআন মজীদে এসেছে, “তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদেরই কর্মফল। তিনি অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।” (সুরা আশ্-শূরা: ৩০)। কুরআন মজীদে আরো এসেছে, “মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (সূরা আর রুম, আয়াত: ৪১) মানুষদের বেহায়াপনার কারণেও মহামারী কিংবা বিপর্যয় অবতীর্ণ হয়। হাদীস শরীফে এসেছে, “যখনই কোন সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে; এমনকি তারা প্রকাশ্যে নিলজ্জ কর্মকাণ্ড করতে থাকে তখন অবশ্যই তাদের মাঝে এমন নতুন নতুন মহামারী এবং যন্ত্রণাকর ব্যাধি প্রাদুর্ভাব ঘটে, যা তাদের অতীতের কারো মাঝে কখনই দেখা যায় নি। (ইবনে মাজাহ ৪০৪১৯)চলমান মহামারী করোনা ভাইরাস সহ যে কোন কঠিন বিপর্যয় মুৃমিনদের জন্য রহমত স্বরুপ ও পরীক্ষা। মহান তাআলা ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা, জান ও মাল এবং ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব। (হে পয়গম্বর!) আপনি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।” (সূরা বাক্বারাহ ১৫৫)
হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি উত্তরে বলেন—মহামারী একটা আযাব, আল্লাহ যার ওপর ইচ্ছা পাঠান। তারপর আল্লাহ তাআলা মহামারীকে মুমিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দেন। কোনো বান্দা যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে অবস্থান করে, ধৈর্য ধারণ করবে এবং সওয়াবের প্রত্যাশায় থাকবে; এবং এই বিশ্বাস রাখবে—আল্লাহ তাআলা যদি তার তাকদিরে লিখে না থাকেন, তাহলে মহামারী তাকে আক্রান্ত করতে পারবে না। তাহলে তার জন্য রয়েছে একজন শহিদের সমপরিমাণ প্রতিদান। (সহীহ বুখারি, হাদিস নং-৬৬১৯, ৫৭৩৪; মুসনাদে আহমদ ২৬১৮২) করোনা ভাইরাস সহ মহান আল্লাহ তাআলার যে কোন গজবের মোকাবেলা করার শক্তি কারোর নেই । আল্লাহ যখন কারো ওপর শাস্তি দেওয়ার ফায়সালা করেন তখন কেউ তাঁকে আটকাতে পারে না। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা ঠেকানোর কেউ নেই। তিনি ছাড়া তাদের আর কোন সাহায্যকারীও নেই।” (সুরা আর রা’দ: আয়াত ১১) অথচ ইদানীং গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কতিপয় মন্ত্রী এমপি ও নাস্তিকপন্থী করোনা ভাইরাস নিয়ে শিরিকী বক্তব্য দিচ্ছে। এই কতিপয় আল্লাহদ্রোহী ও নাস্তিক্যবাদী বক্তব্যের কারণে গোটা জাতির উপর গজব আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহমুখী ও সচেতন হওয়া বেশ জরুরি। চলমান ভাইরাসসহ প্রতিবছর যেসব বিপদ ও বিপর্যয় আসে, তা মুসলমানদের তাওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে, নিজেকে শুধরে নিতে ও সতর্ক হতে নির্দেশ দেয়। তাই আল্লাহর এ আযাব ও গজব থেকে রক্ষা পেতে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলসহ সবার আল্লাহর দরবারে তাওবা ও ইস্তিগফার করা কর্তব্য। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না যে তাদের প্রতিবছর একবার বা দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়? এরপরও তারা তাওবা করে না, উপদেশ গ্রহণ করে না!’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৬) যখন কোন মহামারী কিংবা বিপর্যয় আসবে তখন নিজ অবস্থান কিংবা নিজ বাড়ি হতে বের না হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “এবং তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।” (সূরা বাকারা: ১৯৫) তিনি আরও বলেন, “এবং নিজেদেরকে হত্যা করিও না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।” (সূরা নিসা: ২৯)রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, “যদি কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনো তবে সেখানে যেও না। আর যদি কোন এলাকায় তোমাদের থাকা অবস্থায় মহামারী সৃষ্টি হয় তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না।” (বুখারি ও মুসলিম)।করোনা ভাইরাস সহ অন্যান্য মহামারী বা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির পেতে নিম্নোক্ত দু’আগুলো বেশী বেশী পড়তে হবে।১। আল্লাহুম্মা ইন্নি আঊযু বিকা মিনাল বারাছি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুযামি ওয়া মিন সায়্যিইল আসাকাম। (আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৫৪) ২। আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিম মুনকারাতিল আখলাকি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়া-ই ওয়াল আদওয়া-ই। ৩।আ’উযু বিকালিমাতি’ল্লাহিত তা-ম্মাতি মিন শাররি মা খালাক্ব। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৭৩)৪। বিসমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদুররু মা’আসমিহী শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা-ই ওয়াহুওয়াস সামী’উল আলীম। (আবু দাউদ, হাদীস : ৫০৮৮)। ৫।আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ূম ওয়াআতুবু ইলাইহি। (তিরমিযী : ৩৫৭৭)।৬। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন। (সূরা আম্বিয়া : ৮৭)।৭।আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন যাওয়ালি নি’মাতিকা, ওয়া তাহাওউলি আ’ফিয়াতিকা,ওয়া ফুজা’আতি নিক্বমাতিকা, ওয়া জামি’ই সাখাতিকা। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩৯)।৮।আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আ’ফিয়াতা ফিদ্দুনয়া ওয়াল আ’খিরাহ।আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আ’ফিয়াতা ফী দীনী ওয়া দুনইয়াইয়া,ওয়া আহ্ লী ওয়া মা’লী, আল্লাহুম্মাাসতুর আওরা’তী ওয়াআ মিন রাওআ’তি। আল্লাহুম্মাহ ফাযনী মিম্বায়নী ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন হাল খালফী ওয়া আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা’লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ’উযু বিআযামাতিকা আন উগতা’লা মিন তাহ্তী। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৭৪)।৯।আল্লাহুম্মার ফাঅ আন্না’ল বালা’আ ওয়াল ওয়াবা’আ।১০। সাইয়্যেদুল ইস্তেকফার বেশী বেশী পাঠ করা:আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী লা’ ইলা’হা ইল্লা আনতা খালাকতানী ওয়াআনা’ আবদুকা ওয়াআনা’ আলা’ আহদিকা ওয়াওয়াঅদিকা মা’সতাদাঅতু আ’উযু বিকা মিন শাররিমা’ ছানাঅতুু আবু’ও লাকা বিনিঅমাতিকা আলাইয়্যা ওয়াবু’ও বিজানবিই ফা’গফিরলি ফাইন্নাহু লা’ ইয়াগফিরুজ জুনু’বা।১০। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা’ সাইয়্যিদিনা’ মুহাম্মাদিন বিআদাদি কুল্লি দা’ঈন ওয়াবিআদাদি কুল্লি ইল্লাতিন ওয়াশিফা’ঈন।১১। হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল, নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাছীর।১২। ইসমে আজম১৩।সূরা ফাতিহা ১৪।সূরা ইখলাস (০৭ বার), সূরা ফালাক্ব,সূরা নাস।১৫। বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করা।ইমাম শাফেয়ী বলেন, মহামারী দূর করার সবচেয়ে প্রভাবশালী আমল হলো দোয়ায়ে ইউনুসের তাসবীহ ও দূরূদ পাঠ করা। তাই তাওবা করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বেশি বেশি তাসবীহ ও দুরূদ পাঠ করুন। (তাফসীরে রুহুল বয়ান, খ. ১, পৃ. ১৪৬)।
উপরোক্ত আমলসমূহ পাশাপাশি সচেতনতা হওয়া বেশ জরুরী। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এবং নিজের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসক বিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। ধূমপান বাদ দিতে, অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে, প্রতিদিন গোসল করতে হবে। সম্ভব হলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান কিংবা বডিওয়াস (ডেটল,স্যাভলনও লাইফবয়) ব্যবহার করা, ঠাণ্ডা-জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকা। যেমন : আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্কস।ভিটামিন সি যুক্ত খাবার/ফল খাওয়া, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা,ঘনঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়া, ডিম ও মুরগির মাংস খুব ভালভাবে সিদ্ধকরে রান্না করা, বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ব্লিচিন পাউডারের পানি ছিটানো, আদা চা, তুলশী চা, মধু ইত্যাদি পান করা, হাচিঁ ও কাশি দেয়ার সময় নাক ও মুখ ঢেকে রাখা।এইগুলি ছাড়াও কালি জিরাও খাওয়া যেতে পারে। হাদীসের ভাষায়, “কালি জিরা সকল রোগের নিরামক।” আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তাওফীক দান করুক এবং করোনা ভাইরাস সহ সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি ও বিপদ-আপদ থেকে হেফাযত করুক। আমীন।
লেখক: কলামিস্ট।
লেখা প্রেরক :মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীনC/O,মাওলানা মন্জিল, চন্দনাইশ পৌরসভা, ওয়ার্ড নং ০২, পো: অফিস পূর্ব জোয়ারা (৪৩৮০), চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।