যশোরের মনিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আজ শনিবার খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি ছুটি শেষে অফিস খোলার পরপরই এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করাসহ সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
আর মনিরামপুরের যে তিনজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের সঙ্গে দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেজন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন শনিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দেশের নাগরিকদেরকে ঘর থেকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে মানুষকে সচেতন করার জন্য সরকার মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনাও দিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে মানুষকে বুঝিয়ে তাদেরকে ঘরের ভেতর রাখা। কিন্তু যশোরের মনিরামপুরে সহকারী কমিশনার সাইয়েমা হাসান করেছেন ঠিক উল্টো আচরণ। তিনি শুক্রবার মনিরামপুর বাজারে গিয়ে তিনজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিককে অপমান করেছেন। তারা কি কারণে বাইরে বের হয়েছেন তা না শুনেই তাদেরকে বাজারে অসংখ্য মানুষের সামনে কান ধরিয়েছেন। তারপর নিজের মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করেছেন।
এই ঘটনা জানজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্নভাবে ট্রল করেন নেটিজনরা।
তীব্র সমালোচনার মুখে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার সাইয়েমা হাসানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মনিরামপুরের ইউএনও-সহ দুইজন কর্মকর্তাকে ওই তিনজন সিনিয়র সিটিজেনের বাড়িতে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে এবং তাদের স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসতে বলেছি। একই সঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় খাবারসহ যা যা প্রয়োজন সেগুলো দিয়ে আসতে বলেছি।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সকল জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছি যেন এ রকম কোনও ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। যদি আর কেউ এ রকম ঘটনা ঘটায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাঠপ্রশাসনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মকর্তা আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার আচরণ সমান না। তাছাড়া এসব আচরণ পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিখে আসে। কোনও কর্মকর্তার ব্যক্তিগত অপরাধ বা আচরণের দায় গোটা প্রশাসন নেবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, এই সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে আইনানুগ যেসব ব্যবস্থা নেওয়ার তার সবই নেওয়া হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও কর্মকর্তা এমন আচরণ করার সাহস না পান।
জামালপুর, কুড়িগ্রাম ও মনিরামপুরের এসব ঘটনা জনপ্রশাসনকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, অবশ্যই। প্রশাসনের জন্য এটা দূর্ভাগ্যজনক।
তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের ঘটনায় ইতোমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় মামলা হয়েছে। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটা আমরা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছি। মনিরামপুরের সহকারী কমিশনারকেও কঠোট শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।