কবি জসীম উদ্দীন তার নিমন্ত্রণ কবিতায় পল্লী জীবনের নৈসর্গিক চিত্র ফুটিয়ে তুলতে লিখেছেন, “তুমি যদি যাও-দেখিবে সেখানে মটর-লতার সনে, সীম-আর সীম-হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে। তুমি যদি যাও সে-সব কুড়ায়ে/নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে/খাবো আর যত গেয়ো চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে/হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুই জনে। বহু কাল পূর্বে জসীম উদ্দীন বন্ধুকে তার গাঁয়ে বেড়াতে যেতে প্রলুব্ধ করতে এমন লেখাটি লিখেছিলেন। গ্রাম বাংলার যে চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ায় তার পরিধি কমলেও এখনও তা বিলুপ্ত হয়ে যায় নি। এখনো প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোর দুরন্ত ছেলেরো মটর, খেশারী, মশুর পুড়িয়ে খায়, বিলায়। শুধু পুড়িয়ে নয় এখনো দল বেধে দুরন্ত শিশু কিশোর যুবকরা মাঠের মধ্যে মুঠি মুঠি মটর, খেশারীর সীম তুলে পাতিল ভর্তি করে সিদ্ধ করে খায়। সম্প্রতি এমন দৃশ্য চোখে পরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের মাঠের মধ্যে।
মাঠের মধ্যে জমিতে কিছু যুবকের জটলা। দেখা যাচ্ছিল ধোয়া উড়তে। কাছে যেতেই দেখলাম কয়েকজন যুবক খেশারীর সীম সিদ্ধ করছে। কেটে নেয়ার পর জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সরিষার কান্ডের শুকনো নি¤œাংশ জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহারের জন্য তুলছে তাদের কেউ কেউ। পানি ও সীম ভর্তি সিলভারের পাতিলটি তখন মাটির ঢিলার সাহায্যে তৈরী উনুনের উপর। সীম প্রায় সিদ্ধ হয়ে এসেছে। মাঠের মধ্যে বাতাস থাকায় ঠিকমত জ¦ালানী গুলো ভাল না পোড়ায় ধোয়া হচ্ছিল। এরি মধ্যে সিম সিদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত বেজপাড়া গ্রামের সাব্বির, সুমন, আলীম, শরীফ, সবুজ ও নাইম। এদের প্রায় সবাই স্কুল কলেজের ছাত্র।
সীম সিদ্ধ হয়ে গেলে সেগুলো রাখা হলো কলা পাতায় বিছিয়ে। পাতিলের গরম পানি টুকু কলপাতা ছাপিয়ে পরে গেল মাটিতে। কিছুক্ষণ পর একটু ঠান্ডা, খাওয়ার উপযোগি হলে সাড়িবদ্ধ ভাবে বসে খাওয়ার পালা শুরু। আমি এবং সহকর্মী ছোট ভাই মোহাইমিনুল হালিম উপস্থিত নিমন্ত্রিত হয়ে তাদের সাথে সিদ্ধ সীম খাওয়ায় যোগ দেই। এ সময় আমরাও ফিরে যাই সেই ছোট বেলায়। মনে পরে পুরোনা দিনের কথা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের কথা।