পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পোকামাকড় খেয়ে ফল ফসল রক্ষা, জমি চাষের সময় মাটির নিচে থাকা কীটপতঙ্গের ডিম লার্ভা খেয়ে পোকা মাকড়ের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণসহ আমাদের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। অনেক অসচেতন মানুষ কেবল কিছু টাকার জন্য অথবা মুখরোচক খাবার হিসেবে পাখির মাংস খাওয়ার জন্য নির্বিচারে পাখি শিকার করে থাকেন যা অপরাধ। সম্প্রতি এমন কিছু পাখি শিকারীর দেখা পাওয়া যায় পাবনার চাটমোহর উপজেলার বেজপাড়া মাঠের মধ্যে।
অভিজ্ঞতা না থাকলে দূর থেকে দেখে বুঝবার কোন উপায় নেই। মাঠের মধ্যে পাকা গম খেতের আইলে সাড়ি সাড়ি বাঁশ পুতে রাখা দেখে কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গেলে দেখা মেলে শিকারীদের। কয়েক জায়গায় বাঁশের সাথে বিশেষ কায়দায় বেধে রাখা রয়েছে কারেন্ট জাল। বাঁশগুলো ছাড়া চিকন কারেন্ট জাল প্রায় চোখে পরেনা বললেই চলে। সেখানেই কথা হয় বেজপাড়া গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে সেইন্ট রিটার্স স্কুলের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সৌখিন পাখি শিকারী আমিনুলের (১৩) সাথে। স্কুল ছাত্র আমিনুল জানায়, প্রতি জোড়া ঘুঘু আকার ভেদে ৬০ টাকা থেকে ১’শ টাকা বিক্রি করা যায়। ঘুঘু ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আটকা পরে এ জালে। এর একটু অদূরেই পাখি শিকারের জন্য কারেন্ট জাল পেতেছে একই গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে মাহফুজ। ১৯ বছরের এ যুবক ঈশ^রদী ইপিজেড এর শ্রমিক। মাহফুজ জানান, কারেন্ট জালে ঘুঘু পাখি শিকার করা খুব সহজ। জাল পেতে দূরে বসে থাকি। পাখি উড়ে যাবার সময় জালে আটকে গেলে গিয়ে ধরে ফেলি।
এ ব্যাপারে চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার মোহাইমিনুল হালিম জানান, প্রতি বছর রবি মৌসুমের শুরু ও শেষের দিকে চাটমোহরের বিভিন্ন বিলে কারেন্টজালসহ অন্যান্য উপায়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নিধনে মাতেন এক শ্রেণীর অসচেতন মানুষ; যা মোটেও কাম্য নয়। এ ব্যাপারে জন সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
চাটমোহর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহির উদ্দিন জানান, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে পাখি বা পরিযায়ী পাখি হত্যার জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদন্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থ দন্ডের বিধান রয়েছে। কেউ এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি করলে দুই বছরের কারাদন্ড অথবা দুই লাখ টাকা অর্থ দন্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া পাখি ক্রয় বিক্রয় পরিবহন ও দন্ডনীয় অপরাধ। যেহেতু পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে সেহেতু পাখি নিধন রোধ কল্পে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।