ইয়ানূর রহমান : নভেল করোনাভাইরাস’ সংক্রামণে আক্রান্ত সন্দেহে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী পালিয়ে গেছে। পূর্বে ভর্তি আরেক রোগী শারীরিকভাবে সুস্থতা অনুভব করায় তাকে বাড়ি পাঠিয়েছে চিকিৎসক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ।
এদিকে করোনার মধ্যে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন চিকিৎসাধীন রোগীরা। বর্হিবিভাগেও কমে গেছে রোগীর সংখ্যা। যশোরে হোম কোয়ারেন্টাইনে মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
মঙ্গলবার নতুন করে ২৪৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে যশোরে জেলায় ১ হাজার ৩শ ৫৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
সোমবার রাত ৭টার দিকে এক নারী (২৫) কাশি, সর্দি, জ্বর, গলাব্যাথা শ্বাসকষ্ট হাসপাতালে আসলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে জরুরি বিভাগ থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর কিছু সময় পর আরেক স্কুল ছাত্রী একই সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আসলে চিকিৎসক আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। জরুরি বিভাগ থেকে বিয়য়টি তাৎক্ষনিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসায় মেডিসিন বিভাগের ডা. গৌতম কুমার আচার্য্যকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি টিম কাজ করছে। টিমের বাকি দুইজন হলেন ডা. এমদাদুল হক রাজু ও আবু জাফর। এছাড়া চিকিৎসার জন্য একটি রোস্ট্রার করে দেয়া হয়েছে। রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন ডা. ওবাইদুল কাদির উজ্জল, ডা. খালিদ শামস মোহাম্মদ শাহেদ জামীল, ডা. মাহফুজুর রহমান ও ডা. ইদ্রিস আলী।
অভিযোগ উঠেছে ওই দুই রোগী আইসোলেশনে ভর্তি থাকার পরেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা তাদের চিকিৎসাসেবার জন্য যাননি।
হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পাওয়ার পরেও নির্ধারিত টীমের সদস্যরা রোগীর কাছে যাননি।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, চিকিৎসাসেবার জন্য কাউকে জোর করে পাঠানো সম্ভব না। তবে ডা. ওবায়দুল কাদির উজ্জল রোগীর শারীরিক বর্ণনা শুনে ভর্তির রাতে মোবাইলে চিকিৎসা দেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ নিজে রোগীর খোঁজ খবর নিতে আইসোলেশন ওয়ার্ডে যান। তিনি রোগী ও তার স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন। দুপুরের পর আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে গেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত স্কুল ছাত্রী। আরেক নারী শারীরিক ভাবে সুস্থতা অনুভব করায় তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. হারুন অর রশিদ আরো জানান, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে প্রতিদিন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২শ ৬৫ জন। এরআগে সোমবার ৩শ ২০ জন, রোববার ৪শ ১৮ জন ও শনিবার ছিলেন ৫শ ১৩। তবে প্রায় রোগী শূণ্য হয়ে গেছে পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড। এই দুই ওয়ার্ড মিলে ৪৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে সর্দি, জ্বর, গলাব্যাথা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত কোনো রোগী ওয়ার্ডে নেই। সার্জারি ও মডেল ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ শয্যা ফাঁকা। হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের ইনচার্জ মফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার বর্হিবিভাগে ৬শ ২১ টিকিট বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সর্দি জ্বরে আক্রান্তদের জন্য খোলা আলাদা ইউনিটে মাত্র ১১ টি টিকিট বিক্রি হয়। গত তিনদিন ধরে টিকিট বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। করোনা ভাইরাস আতঙ্কের আগে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২৬ শ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
টিম প্রধান ডা. গৌতম কুমার আচার্য্য জানান, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে দুইজন আইসোলেশন ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক চিকিৎসা প্রদান করেছেন।
এদিকে, যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন জানান, ১০ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ১ হাজার ৩শ ৫৬ জন জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৮২০, অভয়নগর উপজেলায় ৫১ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১৮, চৌগাছা উপজেলায় ৩২, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১২০, কেশবপুর উপজেলায় ৩২, মণিরামপুর উপজেলায় ৬১ এবং শার্শা উপজেলায় ২শ ২২জন।#