ইশারা ভাষা ওদের বন্ধুত্বকে ঘনিষ্ঠ করেছে

ভাষার মাধ্যমে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। একে অপররের সাথে যোগাযোগের প্রধান বাহন ভাষা। মানুষ মাত্রই ভাষা অর্জনের সক্ষমতা নিয়ে জন্মাবে এমনটাই স্বাভাবিক হলেও অনেকে এ সক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না। তারা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত, বাহু নাড়ানো, মুখের বিকৃত ভঙ্গিমা, কাঁধের ওঠা নামা, আঙুল তাক করার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ইশারা ভাষা বা সংকেতিক ভাষায় কথা বলে। মূক ও বধির মানুষ গুলো নিজেদের মধ্যে এ ভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করে। ভাষা যেমন এক অপরকে বিচ্ছিন্ন রাখে তেমনি একই ভাষা-ভাষীদের মধ্যে যে গভীর বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয় তা অন্য ভাষা-ভাষীর সাথে হওয়া অকল্পনীয় ব্যাপার।
পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের কাজীপাড়া মহল্লার মৃত সেলিম খন্দকার ও সেলিনা পারভীনের ছেলে রাসেল (৩৫)। পেশায় ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী। জন্মগত ভাবে বাক প্রতিবন্ধী এ যুবক অনেকটা শ্রবন প্রতিবন্ধীও। নিজে কথা বলতে, শুনতে না পারায় অন্যদের কথা বার্তাও বোঝেন না। ইশারা ভাষাই তার এক মাত্র অবলম্বন। খুব কাছের মানুষ গুলো ছাড়া অন্যরাও তার ভাষা বোঝেন না। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার তার। বড় মেয়েটা স্থানীয় একটা স্কুলে পড়ে। অন্যটা ছোট। রাসেলের টাচ মোবাইল ফোন আছে। আছে ফেসবুক আই ডি ও। নিয়মিত ফেসবুক দেখে সে। ভিডিও কল করে ইশারা ভাষায় কথা বলে অন্য বাক প্রতিবন্ধীদের সাথে। ইশারায় রাসেল জানায়, সকালে দোকানে কাজে আসি। দুপুরে বাড়ি যাই। ছাগলের জন্য মাঠে ঘাস কাটি। মাথার উপর দিয়ে যখন বিমান উড়ে যায় তার শব্দ শুনতে পারি না তবে বিমান চোখে পরলে সে দিকে তাকিয়ে থাকি। ভালই লাগে।
রাসেলের ইশারা ভাষার কথা গুলো বুঝতে সহায়তা করে তার সব চেয়ে নিকটের বন্ধু শ্রবন প্রতিবন্ধী গোলজার (৩৩)। গোলজারের বাবার নাম মনির হোসেন। মায়ের নাম বকুল। পেশায় রাজমিস্ত্রীর জোগানদার। গোলজারের এক ছেলে স্থানীয় মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া লেখা করে। পাবনা সদরের গোবিন্দা এলাকায় পৈত্রিক নিবাস হলেও বৈবাহিত সূত্রে গোলজার গত ৬ বছর যাবত চাটমোহর পৌর সদরের কাজীপাড়া মহল্লায় বসবাস করে আসছেন। গোলজার জানান, ছোট বেলা থেকেই কানে খুব কম শুনি। পরিষ্কার করে কথা বলতে পারি না। তাই অন্য মানুষের সাথে খুব একটা কথা বলি না। মানুষ বিরক্তও হয়। কিছু কথা বলতে পারলেও তোতলা হওয়ায় মানুষের সাথে কথা বলি না।
রাসেল আর গোলজার দুজন খুব ভাল বন্ধু। একজন আর একজন কে খুব বোঝে। প্রায়শই পৌরসদরের উপজেলা গেট এলাকায়, চায়ের দোকানে এ দুজনকে ইশারা ভাষায় আলাপচারিতায় মশগুল থাকতে দেখা যায়। এলাকাবাসী জানান, একই ভাষায় কথা বলায় কাজের অবসর সময়ে, সন্ধ্যায় বা রাতেও এ দুজন অনেক সময়ই একে অপরের সাথে দেখা করে। প্রাণ খুলে বলে মনের কথা। ভাষা এদের বন্ধুত্বকে ঘনিষ্ট করেছে।