বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়ার্ত রূপ : অদূরে বাংলাদেশ

বিশ্বে নতুন আতঙ্ক এখন করোনা ভাইরাস। যেটি এখন প্রাণঘাতী মহামারীতে রূপ নিয়েছে। যেটি বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যার কোন প্রতিষেধক আবিস্কারে কেউ সক্ষম হয়নি এখনও। যার সর্বগ্রাসী ছোবলে মৃত্যুকে বরণ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখের অধিক। সর্বশেষ ইতালিতে একদিনে ৬৫১ জনের মৃত্যুর রেকর্ড উঠেছে। এদিকে ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য মতে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনায় আক্রান্তে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬২৮ জনের। 
গত ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে আবির্ভাব ঘটে এ রহস্যজনক ভাইরাসটির। পরবর্তীতে  ধীরে ধীরে এ ভাইরাস রুপ নেয় মহামারীতে। বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এরই মধ্যে ১৯২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এটিকে বিশ্ব মহামারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। 
ওয়ার্ল্ডওমিটারের সর্বশেষ তথ্য মতে চীনে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৯৩ জন। মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩ হাজার ২৭০ জনে। 
শনিবার (২১ মার্চ) ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩ হাজার ৫৭৮ জন। রোববার (২২ মার্চ) সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ১৩৮ জনে। তার মধ্যে ৭ হাজার ২৪ জন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে ৩ হাজার ৯ জন আইসিইউতে আছেন বলে জানা গেছে।
স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ১৭ জন। স্পেনে একদিনে মারা গেছে ৪০০ জন। সব মিলিয়ে মৃতুর সংখ্যা ১৭০০ ছাড়িয়েছে। সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৭৮ জন।
যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫১ জনে। দেশটিতে ইতোমধ্যে ৩৪ হাজার ৭১৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ১৭৮ জন।
জার্মানিতে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে। দেশটিতে ইতোমধ্যে ২২ হাজার ৩৬৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ২০৯ জন।
ইরানে মোট ২১ হাজার ৬৩৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬৮৫ জন মারা গেছেন। সাত হাজার ৯১৩ জন সুস্থ হয়েছেন। 
ফ্রান্সে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ১৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৭৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ২০০ জন।
এছাড়াও অন্য দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ১১১, সুইজারল্যান্ড ৯৮, যুক্তরাজ্য ২৮১, নেদারল্যান্ড ১৭৯, অস্ট্রিয়া ১৬, নরওয়ে ৭, সুইডেন ২১, বেলজিয়াম ৭৫, ডেনমার্ক ১৩, কানাডা ২০, মালয়েশিয়া ১০, পর্তুগাল ১৪, জাপান ৪১, ব্রাজিল ২৫, ইরাক ২০, পাকিস্তান ৫, ভারতে ৭ জন মারা গেছেন।
এদিকে বাংলাদেশেও মুক্ত নয় এ সর্বগ্রাসী মহামারীর ছোবল থেকে। কিছুদিনের মধ্যেই প্রায় সারাদেশের ৪ জন মৃত্যু সহ ২৫ এর অধিক লোক এ করোনার আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। মিডিয়ার আড়ালে না জানি আরো কত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তার সঠিক খবর নেই। এবং এ মহামারীতে অাক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি প্রবাসীরা জীবন বাচানোর তাগিদে নীজ মাতৃভূমিতে পাড়ি দিচ্ছে। কিন্তু মানছে না সরকারী বিধি নিষেধ। প্রাথমিক অবস্থায় প্রবাসিদের দেশে ফেরার প্রথম ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এ নিয়ে অনেক কড়া নজরদারিও চলছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেশের চিত্রপট ভিন্ন। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দেশে বিদেশ ফেরত প্রবাসির প্রায় এক পঞ্চমাংশেরও কম থাকছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। বাকিরা ত ধরাছোয়ার বাইরে। নীজ বাড়িতে এসে কেউ কেউ বিয়ে সাদী করে সংসারে নেমেছে। কেউ আবার লাগামহীনভাবে চলাফেরা শুরু করেছে। এদিকে দেশের গ্রামঅঞ্চলের সহজ সরল মানুষগুলো তাদেরর সাথে গলাই গলাই চলাফেরা করেছে। যেটি অদূরে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইন রাখার ব্যবস্থা করা ও যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার আইন ভঙ্গ করছেন তাদেরকে সঠিক ভাবে চিন্থিত পূর্বক শাস্তির আওতায় আনা আবশ্যক।
এদিকে পবিত্র কাবা শরীফ ও মসজিদে নববী সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা প্রতিরোধে গণজামায়েত, মসজিদ, মন্দির,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যান চলাচল ও ফ্লাইট লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও  গণজামায়েত, দূর পাল্লার যান চলাচল, ফ্লাইট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।
হয়তো আর কিছুদিন পরে আমাদের দেশেও করোনা মহামারীতে রুপ নিতে পারে। সেদিন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার চোখেমুখে থাকবে করোনার আতঙ্ক। হাসপাতালে উপছে পড়বে রোগী। চারিদিকে দেখা মিলবে শুধু লাশ আর লাশ। শহর জুড়ে থাকবে আতঙ্ক। দেশে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদিও নেই। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক। নেই চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পোষাক। যার দরুণ ডাক্তারেরাও হবে করোনায় আক্রান্ত। রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠবে না। চারিদিকে হাহাকার বইবে। দেশটা থমকে দাড়াবে করোনাের প্রকোপে। বৃদ্ধ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটাও নিরাপদে থাকবে না। তখন হয়তো সরকারি হিসেবে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ থেকে অর্ধ লাখে পৌছাবে। মৃত্যুর সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে হবে কয়েক হাজার। 
বাজারের পরিস্থিতি হবে আরো করুন। বন্ধ হয়ে আছে পরিবহণ ব্যবস্থা। কোন আমাদানি নেই। রপ্তানিও নেই। চাউল, ডাল, পেয়াজ, লবন, আলু সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হবে আকাশছোঁয়া। সবাই ঘর বন্ধী। মানুষ একসময় না খেয়ে ধুকে ধুকে মরে যাবে। 
করোনাভাইরাস প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি জরুরি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বোপরি বিবেচনায় করোনা মোকাবেলায় সরকারের অতি দ্রুত জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া ও সেগুলো বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। না হলে অদূর ভবিষ্যতে এই ছোট্র ঘনবসতিপূর্ণ সোনার বাংলা মৃত্যুপুরীতে রূপ নিতে পারে।
ইকবাল কবীর রোকনশিক্ষার্থী: ইতিহাস বিভাগ, সাতক্ষীরা সিটি কলেজমোবা: ০১৫২১-৭৩৩৫২১