নাটোরে শিশু সদনের মেয়ের রাজকীয় বিয়ে।।

নাটোর প্রতিনিধি – নাটোর বালিকা সদনে শিশু থেকে বড় হওয়া তরুণী নূরজাহানের বিয়ে।। বিয়ে উপলক্ষ্যে বিশাল সামিয়ানা টানানো হয়েছে। চলছে রান্না- বানা। বাজছে গান।। অতিথিদের আনাগোনায় ভরপুর এক বিয়ের আয়োজন। অভিভাবক হিসেবে অনুষ্টানের সকল কাজের  তদারকি করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও  নাটোর সদর আসনের সাংসদ  শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং নাটোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ। পুরো বালিকা সদনের পরিবেশটায় ছিল আনন্দ উতসবের আমেজ। 

শুক্রবার নাটোরের দিঘাপতিয়া বালিকা শিশু সদনের ইতিহাসে নূরজাহানের বিয়েটি ছিল সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে অনুষ্ঠানের। পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিয়ের তদারকি করেন নাটোর ২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, এসময় জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ,নাটোর জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্তেজা বাবলু,    নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত, শিশু সদনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল, সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, জেলা প্রশাসনের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনিমুল হক সহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

বালিকা শিশু সদন সূত্রে জানা যায়, নূরজাহানকে ইতিপূর্বে নাটোরের সাবেক বজেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনে চাকরী দেয়া হয় হয়। সম্প্রতি তাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুসারে যোগ্য পাত্রের খোঁজ করা হতে থাকে। একপর্যায়ে শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লার মজিবর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমানের সাথে নূরজাহানের বিয়ে ঠিক করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার নূরজাহানের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা বালিকা শিশু সদনেই। শুক্রবার শিশু সদনে উৎসবমুখর পরিবেশে বিয়ের আয়োজন করা হয়। সভ্রান্ত ঘরের মেয়ের বিয়ের যা যা আয়োজন থাকে, এর সব আয়োজনই ছিল সেখানে। কোনকিছু কমতি ছিল না। জাঁকজমক ভাবে বর-বউয়ের মঞ্চ সাজানো হয়। মঞ্চের চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। সেই সাথে লাইটিং করা হয়। বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে।

কন্যা সম্প্রদানের সময় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, আমি সবসময় শিশুসদনের শিশুদের পাশে আছি। আজকে এই বোনের বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখিনি। প্রতিবার ঈদে আমি নামাজ পড়েই আমি এখানে চলে আসি। সময়ে অসময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে এখানে চলে আসি। তাদের খবরাখবর নেই। এখানকার কর্তৃপক্ষ যখন যা বলে তা একবাক্যে দিয়ে দেই। ভবিষতেও আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ  বলেন, আজ আমাদের এক মেয়েকে বিদায় দিচ্ছি। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বিদায় দিচ্ছি। এক বিয়েতে সম্ভবত এমপি, জেলা প্রশাসক, প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক উপস্থিত থাকেনা। আজ সবাই উপস্থিত আছেন। আমরা নূরজাহান এবং মিজানুর দম্পতিকে দোয়া করি। তারা যেন সংসার জীবনে সুখি হয়।


শিশু সদনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। তারা যে সমাজে একা নয়, তারই স্বাক্ষর রেখেছে বিয়ের এই অনুষ্ঠান। আমি চাই অসহায়দের পাশে বিত্তবানরা দাঁড়াবে এবং সামনে তাদের পথ চলার শক্তি জোগাবে। 

বর মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি কখনো ভাবিনি এত জাঁকজমকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সমাজের বড় বড় মানুষ এখানে এসেছেন। আমার খুবই ভালো লাগছে।’

বালিকা শিশু সদনের কন্যা নূরজাহান বেগম   বলেন, বিয়ে উপলক্ষ্যে এতো বড়সড় আয়োজন হবে তা ভাবতে পারিনা।  স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা প্রশাসকসহ উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে সবার দোয়া চায়।