নাটোরে ৩১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হলেও ব্যহত হচ্ছে সহশিক্ষা কার্যক্রম। মাঠের অভাবে
শারীরিক কসরত ও খেলাধুলা করার সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ফলে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হচ্ছে না কোমলমতি শিশুদের মেধা। খেলাধুলার অভাবে শিশুরা অমনযোগী হয়ে পড়ছে পড়াশুনায়। হীনমোন্যতায় ভোগার পাশাপাশি
বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। মাঠের অভাবে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ে খেলাধুলার অধিকার থেকে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালোভাবে গড়ে তুলার জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলার মাঠ খেলার মাঠ তৈরির দাবি জানান তিনি শিক্ষক , অভিভাবক ও কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ।
তিনতলা বিদ্যালয় ভবন ও দোতলা আবাসিক ভবনের মধ্যে সরু গলি। কিছুটা অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে ভাব আর ছড়িয়ে– ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা, কাচের টুকরা। তার ওপর জটলা পাকিয়ে আবাস গড়েছে মশা। দেখে শহরের সাধারণ গলি মনে হলেও সংবিৎ ফিরে এল ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের দৌড়াদৌড়িতে। মাঠ না থাকায় শহরের মছিরন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের খেলার
জায়গা এটি।
বিদ্যালয়ের শিশুরা সেখানে লুকোচুরি খেলছিল। মাঝেমধ্যে অন্য শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছিল। দৌড়াদৌড়ি, ডাকাডাকি আর চিৎকারে শিশুরা মজা পেলেও দুর্ঘটনার ভবনা তাদের মাথায় নেই। খেলার একটু জায়গা পাওয়াতেই যেন তাদের আনন্দ।
নাটোর শহরে এমন আরও ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোঁজ পাওয়া গেল, যেগুলোতে নেই শিশুদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ। শহরে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১৩টি। এ ছাড়া, ২০টি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন আছে। যার মধ্যে ১৮টি স্কুলেই শিশুদের শৈশব কাটে চার দেয়ালের ভেতর। কোনো বিদ্যালয় চলছে বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনের কক্ষ ভাড়া করে।
গতকাল দুপুরে মছিরন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতর শিক্ষার্থীদের হাঁটাহাঁটির জায়গাও নেই। প্রধান শিক্ষক সুচিত্রা রানী জানালেন, বিদ্যালয়ের কিছু অংশ নারদ নদের মধ্যে বিলীন
হয়ে গেছে। শহরের এই এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় মাঠ তৈরির জন্য
বিদ্যালয়ের আশপাশে ফাঁকা জায়গাও নেই।
নাটোর শহরের লালবাজার, উপরবাজার, নিচাবাজার ও বড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক ভবন
ছাড়া খেলাধুলার কোনো সুযোগ নেই।
উপরবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অপু দাস নামের এক শিক্ষার্থী বলছিল, মাঠ না থাকায় আমরা বিদ্যালয়ে এসে কোনো প্রকার খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করতে পারি না। এতে আমাদের পড়াশুনায় মন বসে না।
এ ব্যাপারে শহরের বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকা বলেন, মাঠের অভাবে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের
নিয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ব্যহত হচ্ছে। এমনকি আমাদের বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও করতে হয় দায়সারা ভাবে অন্য
কোনো প্রতিষ্ঠানের মাঠে।
নাটোর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যদিও শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় থেকে বঞ্চিত
হচ্ছে। কিন্তু নগরগুলো এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, যেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।