কালের আবর্তে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই। তেমনি বর্ষা মৌসুম শেষে নাটোরের
গুরুদাসপুরসহ চলনবিলের আত্রাই, নন্দকুঁজা, গুমানীসহ ১৫টি নদ-নদীর পানি শুকিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আবার দখল, দুষন আর ভরাটের কারনে সংকুচিত হয়ে পড়ায় মরে যাচ্ছে চলনবিলের নদীগুলো।
বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও নদীর গভীরতা কম থাকায় পৌষ মাসের দিকে নদ-নদী শুকিয়ে যায়।
পানির অভাবে কৃষি জমির সেচকাজ ব্যাহত হবার পাশাপাশি দেশী মৎস্য সম্পদ ও জীব-বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। নদীকে জীবিকা করে খাওয়া মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। স্থবির হয়ে গেছে হাটবাজারগুলো। তবে উপজেলার সাবগাড়ী এলাকায় একটি রাবারড্যাম স্থাপনের কারনে নদীর উজানে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এখনও পানি রয়েছে।
আর পনেরদিন পর রাবারড্যাম নামিয়ে দিলে সে পানিও থাকবেনা।
এক সময় নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাণিজ্য কেন্দ্র গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় হাটসহ বিভিন্ন হাটবাজারে নদী পথের সঙ্গেও সহজলভ্য অপেক্ষাকৃত কম ঝুকিপূর্ণ নৌ যোগাযোগে ব্যবসা বাণিজ্য চলেছে। নানা কারনে অস্তিত্ব সংকটে থাকা নন্দকুজা ও আত্রাই নদী সৌন্দর্য্য, পূর্ব জৌলুশ ও স্বকীয়তা হারিয়ে খালে পরিনত হয়েছে। জল পথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম হলেও বর্তমান সময়ে এলাকার সব জলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধিক খরচে ব্যবসায়ীদের স্থল পথে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড.মোঃ রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে পাওয়া তথ্য জানা গেছে, প্রায় ২৯ বছর আগেও চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে বছর জুড়েই ৬-১২ ফুট পানি থাকত। ফলে বছর জুড়েই নৌচলাচল করতো। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে এসব নদী
ভরাট হয়ে গেছে। গত বছর আত্রাই নদী খননের মাটি নদীর পাড়ে রাখার কারণে অধিকাংশ নদীর তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
অথচ এক সময় এসব নদীতে বছর জুড়েই পানি থাকতো। নদীতে চলাচল করতো ছোট বড় নৌকা।
নদী আর নৌকাকে ঘিরে চলনবিলের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নাজিরপুর, সিংড়ার, বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুর, তাড়াশের ধামাইচ, নাদোসৈয়দপুর, চাটমোহরের ছাইকোলা, অষ্টমনিষা, মির্জাপুর ভাঙ্গুড়ায় গড়ে উঠেছিল বড় নৌবন্দর। চলত রমরমা ব্যবসা-বানিজ্য। কালের আবর্তমানে সেসব এখন শুধুই ইতিহাস।
গুরুদাসপুর নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আত্হার হোসেন, মজিবুর রহমান মজনু, এমদাদ মোল্লাসহ অনেকে জানান, চাঁচকৈড় হাট থেকে এক সময় নৌকায় করে শত শত মন ধান, পাট, গম সরিষাসহ চলনবিলের সকল কৃষিজাত পণ্য ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ হত। আবার সেসব মোকাম থেকে নানা পণ্য এখানে এনে পাইকারি দামে বিক্রি করতো। কম খরচে সহজ লভ্য পরিবহন সুবিধা ভোগ করলেও এখন আর ওই সুবিধা তারা পান
না। এখন বছরের ৪ মাস নৌ পথে নৌকা চলাচল করতে পারে। অবশিষ্ট আটমাস কোন রকম নৌকা চলাচল করতে না পারায় আগের মত আর ব্যাবসায়িরা নৌপথে সহজে ব্যাবসা করতে পারছে না