মৃত্যুর চার মাস পর কবর থেকে গলিত লাশ উত্তোলন

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুাসপুরে ইটভাটার ম্যানেজার নজরুল ইসলামের (৬৫) মৃত্যুর চার
মাস পর কবর থেকে গলিত লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার
চাঁচকৈড় পুরানপাড়া কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়। আদালতের
নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোছা.তাছমিনা খাতুন ও ডিজি চক্রবতীর
উপস্থিতিতে ওই লাশটি উত্তোলন করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোছা.তাছমিনা খাতুন জানান, গলিত লাশটি পরীক্ষা
নিরীক্ষার জন্য রাজশাহী ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হবে। প্রতিবেদন
রিপোর্ট হাতে পেলে আদালতে দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারিক
কার্যক্রম শুরু হবে। এসময় গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
মোজাহারুল ইসলাম ও মামলার বাদী শাহাবুদ্দিনসহ তাঁর স্বজনরা উপস্থিত
ছিলেন।
নিহতের পরিবার ও থানা সুত্রে জানা গেছে,- গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাতে নজরুল
ইসলামের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। কিন্তু পোষ্টমর্টেম ছাড়াই তাঁর লাশটি দাফন
করা হয়েছিল। মৃত্যুর আগে নজরুল ইসলাম চাঁচকৈড় খোয়ারপাড়ার
‘এমডিবি ব্রিকস্’ নামক একটি ইটভাটায় ম্যানেজার হিসেবে প্রায় ১৫
বছর কাজ করতেন।
এদিকে নজরুল ইসলামের মৃত্যুর ২২ দিন পর গত ৫ ডিসেম্বর তাঁর ছেলে
শাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে
(গুরুদাসপুর) একটি হত্যা মামলা (সিআর মামলা নম্বর-০৯) দায়ের করা হয়।
মামলায় ইটভাটার মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম, ভাই বাবু, বাবা দশরত আলী ও
ক্যাশিয়ার রান্টু প্রামানিককে আসামী করা হয়েছে। একই সাথে লাশ উত্তোলন
করে মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানতে আদালতে আবেদন জানানো হয় পরিবারের পক্ষ
থেকে। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল লাশ উত্তোলন করা হয়।
মামলার বাদী ও নজরুল ইসলামের ছেলে শাহাবুদ্দিন দাবী করেন, ১৫ বছরেরও বেশি
সময় ধরে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তাঁর বাবা। ঘটনার দিন
রাত ৯টার দিকে ইটভাটার গদীঘরে যাওয়ার জন্য বের হন। সেখানে ব্যবসায়িক
হিসাব-নিকাশ নিয়ে দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে গলাটিপে ও পাঁজরে আঘাত করে
তাঁর বাবাকে হত্যা করা হয় বলে দাবী করেন শাহাবুদ্দিন। পরিস্থিতি বিবেচনায়
তখন থানায় না জানিয়ে পোষ্ট মর্টেম ছাড়াই তাঁর বাবার লাশ দাফন করা হয়।

তাঁর বাবার মৃত্যুর প্রকৃত কারন ও ন্যায়বিচার পেতে আদালতে মামলা দায়ের করা
হয়েছে।
তবে ইটভাটা মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা
মামলাটি হয়রানী ও উদ্দেশ্যমুলক দাবী করে বলেন, নজরুল ইসলাম ম্যানেজার
হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিষ্ঠানের প্যাড ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির
কাছে গোপনে কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকার ইট বিক্রি করে ওই টাকা আত্মসাৎ
করেছিলেন। একারনে ক্রেতাদের টাকার চাপে পড়েন তিনি। লজ্জায় ক্ষোভে-দুঃখে
গ্যাসটেবলেট খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন নজরুল ইসলাম। এখন বাড়তি
সুবিধা আদায় করতেই তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার মিথ্যা অভিযোগ আনা
হয়েছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের মৃত্যু প্রমানপত্র বলছে, গ্যাসটেবলেট
পয়জনিংয়ে ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে নজরুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক মো. রবিউল করিম জানান, স্থানীয়
লোকজন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসেন তাঁকে। দুইটি গ্যাস
টেবলেট খেয়েছেন বলে জানান নজরুল ইসলাম। তখন ‘পয়জনিং’-এর
চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। পরিস্থিতির অবনতি হলে রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে
তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পথে মারা গেলে
আবারও তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নজরুল ইসলামকে মৃত
ঘোষণা করা হয় । এমর্মে হাসপাতাল থেকে মৃত্যু প্রমাণপত্র দেওয়া হয়েছে।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন,
নজরুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানাকে অবগত করা
হয়নি। একারনে পুলিশ এ বিষয়ে অবগত ছিলনা। পরে আদালতে দায়ের মামলার নথি
হাতে পেয়ে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। এখন পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে
পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।#