ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাইফুল ইসলাম

। আমিরুল ইসলাম রাঙা।
সাইফুল ইসলাম এক অসাধারন রাজনৈতিক নেতা। ১৯৩৩ সালে সিরাজগঞ্জ শহরে জন্ম । বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দিয়ে রাজনীতির শুরু। পাকিস্তান সৃষ্টির পরের বছর ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৮ থেকে ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে সিরাজগঞ্জ মহকুমার অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন সাইফুল ইসলাম । তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের শিষ্য। ভাষা সংগ্রামী আব্দুল মতিন, অমূল্য লাহিড়ী, সেলিনা বানু, কমরেড জসিম উদ্দিন মন্ডল, আমিনুল ইসলাম বাদশা, কমরেড প্রসাদ রায়, কামাল লোহানী, রণেশ মৈত্র প্রমুখ নেতাদের সাথে রাজনীতি করতেন।

১৯৪৫ সালে মুকুলের মেলা দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৪৮ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে পরিচয় হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ( ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অন্যতম সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন। ন্যাপ গঠিত হলে বৃহত্তর পাবনা জেলার সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। সভাপতি ছিলেন যথাক্রমে ভাষা সংগ্রামী আব্দুল মতিন, অমূল্য লাহিড়ী ও সেলিনা বানু। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন সিরাজগঞ্জ মহকুমা ন্যাপের সভাপতি ছিলেন।

দীর্ঘ সময়ের রাজনীতিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাতীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জোয়ার ভাটার মত রাজনৈতিক জীবনেও এর প্রভাব পড়েছে। যমুনা পাড়ের এই রাজনৈতিক নেতার জীবনে নদী ভাঙ্গনের মত দলভাঙ্গা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। রাজনীতিতে হতাশা ছিল তবে নিরাশা কখনোই ছিল না। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ করেছেন। ১৯৫৭ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে ন্যাপ গঠন করলে সাইফুল ইসলাম ন্যাপে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালে ন্যাপ বিভক্ত হলে সাইফুল ইসলাম মাওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের সাথে যোগ দেন।

এরপর দলের পরবর্তী ভাঙ্গনের বিভিন্ন পর্যায়ে ন্যাপ, একতা পার্টি, এনপিএ হয়ে সর্বশেষে যোগ দেন গনতন্ত্রী পার্টিতে । জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত গনতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত আট বার তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। এছাড়া দীর্ঘদিন হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মত এবং পথের পরিবর্তন হলেও নীতি এবং আদর্শের কোন পরিবর্তন করেন নাই। জীবনে দু’টো জিনিষ সচেতনার সাথে পরিহার করেছেন। এক- অবৈধভাবে ক্ষমতাশালী হওয়া, দুই- অবৈধভাবে বিত্তশালী হওয়া। জীবনে ক্ষমতাশালী হওয়ার রাজনৈতিক প্রস্তাব বিনয়ের সাথে প্রত্যাখান করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী অনেক সরকার ও বড় দলের পক্ষ থেকে এমপি, মন্ত্রী এবং দলের বড় পদ দেবার লোভ দেখানো হয়েছে। বিনয়ের সাথে সেটা প্রত্যাখান করেছেন। জীবনে ত্যাগ করেছেন অঢেল বিত্ত আর স্বত্ব । সিরাজগঞ্জ শহরের ধনাঢ্য তালুকদার পরিবারের সন্তান হয়েও অর্থ, বিত্ত এবং সম্পদ সেচ্ছায় ত্যাগ করেছেন। শুধু তাঁর পারিবারিক সম্পদ ত্যাগ করেই ক্ষান্ত হন নাই জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বংশের পদবী টুকুও পরিহার করেছিলেন। উনি জীবদ্দশায় তালুকদার বংশের মূর্ত প্রতীক হলেও তালুকদার নামটি সারাজীবন পরিহার করে গেছেন। সারাজীবন সাইফুল ইসলাম তালুকদার শুধু সাইফুল ইসলাম হয়ে থেকেছেন।

সাইফুল ইসলাম ১৯৫৪ সালে এম,এ পাস করার পরও সরকারী কোন চাকুরী গ্রহণ করে নাই। উচ্চ শিক্ষিত এই গুনী মানুষটি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে লম্বা সময় ব্যয় করেছেন, গরীব আর মেহনতি মানুষের অধিকার আদায় করা নিয়ে। সিরাজগঞ্জ কওমী জুট মিলের শ্রমিক, রিক্সা শ্রমিক আর স্টিমারঘাটের কুলি/ শ্রমিকদের ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা । তাদের নিয়েই চলা – তাদের নিয়েই চিন্তা-ভাবনা ছিল একমাত্র ব্রত। সংগঠনের স্বার্থে পাবনা জেলার সকল প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন । তিনি ছিলেন সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মী। আন্দোলন এবং সংগ্রামমুখী এই নেতা জীবনে অনেকবার নির্বাচন করেছেন। কুঁড়েঘর মার্কা নিয়ে একাধিকবার নির্বাচন করায়, গোটা জেলাব্যাপী তাঁর আরেক পরিচয় ছিল কুঁড়েঘরের সাইফুল ইসলাম নামে । জীবনের প্রথম নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের প্রতাপশালী মুসলিমলীগ নেতা ও পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী আল মাহমুদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। সেই নির্বাচনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরেও কালোটাকা আর সরকারের প্রভাবের কারনে সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গৌরবময় সময়কাল হলো মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে আওয়ামীলীগের সাথে ন্যাপ, কমিউনিষ্ট পার্টি যৌথ ভাবে স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে শরিক করেছেন । গোটা দেশে যখন ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয় ঠিক এমনি একটি সময়ে মাওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানী নৌকা নিয়ে একা টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ আসেন। যখন ভাসানীপন্থী ন্যাপের সিংহভাগ নেতাকর্মী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করছে যখন চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করছে তখন মাওলানা ভাসানী মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নেওয়ার জন্য ভারতে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। উনি রাতের আঁধারে সিরাজগঞ্জ ঘাটের পাশে নৌকা নোঙ্গর করে নৌকার মাঝিকে পাঠিয়ে সাইফুল ইসলামকে ডেকে আনেন। মাওলানা ভাসানী তাঁকে বলেন তাঁর সাথে ভারতে যেতে হবে। সাইফুল ইসলাম নানাভাবে তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। সাইফুল ইসলাম ধারনা করেছিলেন চীনপন্থী মাওলানা ভাসানীকে ভারত সরকার কিভাবে গ্রহন করবেন। এই বিষয়ে মাওলানা ভাসানীর অটল সিদ্ধান্ত তিনি ভারতে যাবেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিবেন। অতঃপর সিরাজগঞ্জের ভাসানীপন্থী ন্যাপনেতা মোরাদুজ্জামানকে সাথে নিয়ে তিনজন ভারত অভিমুখে রওয়ানা হন। সিরাজগঞ্জ থেকে নৌকায় রওয়ানা দিয়ে কুড়িগ্রাম পাড় হয়ে ভারতের আসাম প্রদেশে প্রবেশ করেন। ভারতে প্রবেশ করে ওপাড়ে স্থানীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে সংবাদ পৌঁছান। তাঁরা জানান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভুমিকা রাখতে চান। এরপর ভারত সরকার মাওলানা ভাসানীকে সন্মানজনকভাবে গ্রহন করেন এবং বিশেষ বিমানে কলকাতায় নেওয়া হয়। কলকাতা পৌঁছানোর পর মাওলানা ভাসানীর পক্ষে সাইফুল ইসলাম কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। পরবর্তী ইতিহাস হলো মাওলানা ভাসানী মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন এবং সাইফুল ইসলাম তাঁর রাজনৈতিক সচিব হন। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সাইফুল ইসলাম মাওলানা ভাসানীর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এই মহান রাজনীতিক ১৯৬৯ সালে পাবনা শহরের কৃষ্ণপুর মহল্লায় বিবাহ করেন। মজার বিষয় হলো পাবনার প্রখ্যাত তিন ন্যাপনেতা একই পরিবারের তিন বোনকে বিবাহ করে ভায়রা হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন, পাবনার আমিনুল ইসলাম বাদশা, ঈশ্বরদীর আব্দুল হালিম চৌধুরী এবং সিরাজগঞ্জের সাইফুল ইসলাম। এই তিনজনই ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া ও সিরাজগঞ্জ সদর থেকে কুঁড়েঘর প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তাঁরা রাজনীতিও করেছেন একসাথে। আমিনুল ইসলাম বাদশা ১৯৯৮ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে উনিও গনতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। উল্লেখিত তিন ভায়রা দীর্ঘ জীবনে অনেক বিষয়ে একই রকম চলেছেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্টের পটপরিবর্তনে তিনজনকেই এলাকা ছাড়তে হয়। তিন পরিবার ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।

সাইফুল ইসলামকে সংসার জীবনের ঘানি টানতে চরম প্রতিকুলতা মোকাবেলা করতে হয়। তিনি কর্মজীবনে একাধিক কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। কখনো সাংবাদিকতা, কখনো লেখালেখি, কখনো ব্যবসা করেছেন। কোনটাতেই সফলতা অর্জন করতে পারেন নাই। জীবনের বেশী অংশ জুড়ে অভাব অনটন মোকাবেলা করতে হয়েছে। জীবনে স্থিরভাবে কোন কাজই করতে পারেন নাই। ঢাকা শহরে বাড়ী ভাড়া করে থাকা এবং দুই সন্তানকে লেখাপড়া করানো ছিল জীবনের কঠিন যুদ্ধ। তাঁর জীবনের শেষ দেড় দশক সফলতার সাথে জীবন কাটিয়েছেন। তাঁর এক বন্ধুর সহযোগিতায় ১৯৯০ সালের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে বড় ধরনের আর্থিক সফলতা পেয়েছিলেন। এরপর ঢাকার পুর্ব মনিপুরে বাড়ী কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেন। তাঁর দুই সন্তানকে সুশিক্ষিত করেন। জীবনের শেষ ভাগে এসে অনেকগুলি বই প্রকাশ করেছেন । তাঁর লেখা স্বাধীনতা ভাসানী ভারত, দুই নায়ক, ফেরারী স্বাধীনতা, সুরত হারাম, আসামের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, বাংগালী ভইলী সহ প্রায় ১০/১২ টি বই বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা প্রকাশ করেছে।

এমন একজন মহৎ ব্যক্তির সাথে আমার পরিচয়, সম্পর্ক এবং দীর্ঘ সময়ের মধুর স্মৃতি আজ প্রকাশ করার লোভ সংবরন করতে পারছিনা। উনার সম্পর্কে আমার সচ্ছ ধারনা ছিল ৭০ দশকের শেষ সময় থেকে। প্রথমে শোনা আর পরে দেখার সুযোগ। দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম ১৯৭০ সালে কোন একদিন পাবনা টাউন হল মাঠে ন্যাপের জনসভায়। সম্ভবতঃ সেই সভাটি ছিল নির্বাচনী জনসভা। আমার কাছে মুল আকর্ষন ছিল পাবনা-আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী থেকে এমএনএ পদপ্রার্থী সেলিনা বানু, পাবনা সদরের এমপিএ প্রার্থী আমিনুল ইসলাম বাদশা, ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার এমপিএ প্রার্থী আব্দুল হালিম চৌধুরী, সাঁথিয়া-বেড়ার এমপিএ প্রার্থী রণেশ মৈত্র, সিরাজগঞ্জ থেকে আগত সাইফুল ইসলাম । এছাড়া আমার কাছে আরো আকর্ষন ছিল তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শিরিন বানু মিতিল, রবিউল ইসলাম রবি প্রমুখ পরিচিত নেতাদের বক্তৃতা শোনা। যাইহোক সেদিনই সাইফুল ভাইকে প্রথম দেখেছিলাম ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালের দিকে আমিনুল ইসলাম বাদশার ভগ্নিপতি আব্দুল আউয়াল খানের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে রবি ভাই, মতীন খান সহ ঐ পরিবারের সবার সাথে আন্তরিকতা এবং ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। তাঁদের কাছেই সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের গল্প শুনতাম। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর সচিব হিসেবে কাজ করার কথা। সাইফুল ইসলাম ভাই মোজাফফর ন্যাপের নেতা হওয়ার পরও মাওলানা ভাসানী তাঁকে খুব পছন্দ করতেন। রবি ভাইয়ের কাছে শুনতাম সাইফুল ভাইয়ের পান্ডিত্যের কথা। যাইহোক এমন মানুষের সাথে দেখা হওয়া, কথা হওয়া এবং সম্পর্ক হওয়া ছিল আমার কাছে অকল্পনীয়।

২০০৪ সালের প্রথম দিকে আমার কাছে প্রস্তাব আসে সাইফুল ইসলাম তাঁর ছোট ছেলেকে বিয়ে দিবেন। আমার বড় মেয়েকে তাঁরা দেখতে চান। আমার সম্মতির পর সাইফুল ভাই, তাঁর স্ত্রী, তাঁর বড় ছেলে এবং বাদশা ভাইয়ের জামাই সহ আসেন। তাঁরা আমার মেয়েকে দেখার পর অনুমান করলাম হয়তো পছন্দ করেছেন । তবে সাইফুল ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়ে নিশ্চিত মনে হলো উনি আমাকে খুবই পছন্দ করেছেন। আমার সাথে রাজনৈতিক আলাপচারিতা এবং স্মৃতিচারণ করে খুব মজা পেয়েছেন। পরবর্তীতে আমার মেয়ের সাথে তাঁর ছেলের বিয়ে হলো। আমি হয়ে গেলাম তাঁর বিয়াই সাহেব । আত্মীয়তা হওয়ার পর আট বছরের বেশী সময় উনি বেঁচে ছিলেন। উনি আমাকে খুবই পছন্দ করতেন। বয়সের বিস্তর ব্যবধান সত্বেও উনি আমাকে খুবই সন্মান করতেন। আমাকে পেলে মন খুলে কথা বলতেন। অনলবর্ষি বক্তা ছিলেন। আমি ছিলাম তাঁর বিশ্বস্ত ভক্ত আর বিমুগ্ধ শ্রোতা। আমার কাছে উনি ছিলেন অসীম জ্ঞানের ভান্ডার। তাঁর ছিল অসাধারন মেধা, পান্ডিত্য আর স্মৃতিশক্তি। আমাকে পেলে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতেন। এখনো উনার অনেক কথা কানে বাজে। উনার বড় ছেলের শ্বশুর হলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি টাঙ্গাইলের আব্দুস সালাম খান। একজন গনতন্ত্রী পার্টী, একজন জাসদ আরেকজন আওয়ামী লীগ। একসাথে হলে আমরা ১৪ দলীয় জোট হয়ে পড়তাম। রাজনীতির আলাপচারিতায় ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যেতো।

২০১২ সালের ১ এপ্রিল। উনার খুব সঙ্কটময় অবস্থার কথা শুনে সস্ত্রীক ঢাকা রওয়ানা হলাম। সাইফুল ভাই হাসপাতালে লাইফ সার্পোটে আছেন। গাড়ীর মধ্যেই খবর পেলাম উনি ইন্তেকাল করেছেন। ঢাকায় নেমে মিরপুরের পূর্ব মনিপুরের বাসায় গেলাম। চীরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাইফুল ইসলাম । উনার মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁর কফিনে পুষ্পস্তবক দেওয়া হলো। পুরাতন পল্টনে গনতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মরদেহ রাখা হলো। পরেরদিন সকালে ঢাকা থেকে তাঁর মরদেহ সিরাজগঞ্জ নেওয়া হলো। রেলবাজার স্টেশন সংলগ্ন শহীদ মিনার চত্বরে জানাজা অনুষ্ঠিত হলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হলো। বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। এরপর শহরের রহমতগঞ্জ কবরস্থানে তাঁর বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হলো।

আজ ১ এপ্রিল ভাষা সংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর সেনানী প্রয়াত সাইফুল ইসলামের ৬ষ্ট মৃত্যু বার্ষিকী। এই বিশেষ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

          সমাপ্তি -

লেখক পরিচিতি –

আমিরুল ইসলাম রাঙা
সভাপতি, বাংলাদেশ জাসদ
পাবনা জেলা শাখা।
১ এপ্রিল ২০১৮