জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধুর ”আমার সাইফুল”

আ.লীগ নেতা এডভোকেট সাইফুল ইসলাম এমপি’র খোঁজখবর বঙ্গবন্ধু রাখতেন, এখনকার আওয়ামী লীগ রাখেননা । বঙ্গবন্ধু তাকে আমার প্রিয় সাইফুল বলে সম্মোধন করতেন।বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা রাখায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। এনালগ যুগে জাতির পিতা নিয়মিত সাইফুলের খবর নিলেই ডিজিটাল যুগের আজকের আওয়ামী লীগ তাঁর নেয়নি । আজ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং সাবেক সংসদ সদস্যের প্রমাণ দেওয়ার পর ও তাকে নূন্যতম সম্মাধ দেখাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । সারাজীবন দেশ ও দলের জন্য ত্যাগি ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষটির দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও তাকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে । অশ্র“ জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেনসাইফুল ইসলামের সার্বক্ষণিক সঙ্গী সহধর্মিনী আইরাফুন নেছা মিলি।
নাাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,সাবেক সংসদ সদস্য প্রবীণ আ.লীগ নেতা এডভোকেট সাইফুল ইসলাম (৮৬) জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তিনি গত ২৩ নভেস্বর স্ট্রোক করার পর ছিয়াশি বছর বয়সী এ প্রবীণ নেতার ডান হাত ও পা অবশ হয়ে যায়; কথাও অ¯পষ্ট তার। হৃদরোগের সমস্যাসহ নানা রোগেও ভুগছেন তিনি। কাউকে দেখলে তাকিয়ে থাকেন, আর হাউমাউ করে কাঁদেন। তিনি বর্তমানে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবীদের। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রবীণ আ.লীগ নেতা এডভোকেট সাইফুল ইসলাম বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ।১৯৬০ সালে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হোন । ১৯৬৫ সালে ছিলেন বৃহত্তর রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি । ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যূত্থানে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখেন। ছয় দফা আন্দোলনের সময়েও তিনি ছিলেন রাজনীতির মাঠে। ছিলেন স্বাধিকারের সকল আন্দোলনেই। প্রতিটি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ছিলেন প্রথম সারিতে। ১৯৬৯ সালে অধিকার আদায়েরআন্দোলনেও ছিলেন রাজপথে প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জনমত সংগঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরোটাই যুদ্ধের মাঠে কাটিয়েছেন । ১৯৭৩ সালে ২৬ বছর বয়সে স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত সংসদের কনিষ্ঠতম এমপি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট সাইফুল ইসলাম । জাতীয় চারনেতার একনেতা এইচ, এম কামরুজ্জামান হেনার দক্ষিণহস্ত হিসেবে পরিচিত সাইফুল ইসলাম ছিলেন বঙ্গবন্ধু ঘনিষ্ট সহোচর।।১৯৭৫ সালের কালরাতের পরবর্তী সময়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।খন্দকার মোশতাক, জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার শাসনবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভ‚মিকা রাখেন। ২০০৬ সালে ১/১১ এর সময় কৌশলে সেনাসমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার পাশাপাশি আন্দোলন চালিয়ে যান । নাটোরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ বলে পরিচিত ছিলেন। দলের দুর্দিনে যাঁরা ত্যাগীর ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হতেন তাদের মধ্যে এডভোকেট সাইফুল ইসলাম অন্যতম। সকল প্রতিক‚লতাঁর মধ্যেও রাজনীতি থেকে এক পাও পিছু হটেননি প্রবীণ আওয়ামী লীগের এই নেতা। নাটোরের পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে যাদের সুনাম রয়েছে, তিনি তাদের অন্যতম একজন।
বতর্মানে শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিওরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে প্রবীন এই আওয়ামী লীগ নেতা ।
তার ঘনিষ্ঠজনরা অভিমান করে বলেন, সারা জীবন সততা আর মুজিব আদর্শ ধরে রেখে মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাওয়া এ নেতা অসুস্থতায় বিছানায় শুয়ে অনেকটাই একাকিত্বে জীবন কাটাচ্ছেন।কেউ তার খবরও নেন না । তবে দলের প্রভাব কাটিয়ে অট্টালিকা বাড়ি ঘর করেনি। নিজের সততায় অটল ছিলেন তিনি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। তবে উন্নত চিকিৎসা করালে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠতে পারতেন বলে জানিয়েছে ডাক্তার ও স্বজন শুভানুধ্যায়ীরা ।
প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতার ভাগিনা মোস্তফা কামাল ডলার অভিযোগ করে বলেন,মুক্তিযুদ্ধের একজন সফল সংগঠক হওয়ার পর ও তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় বা সাবেক সংসদ সদস্য কার্ড দেখিয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মনগলাতে পারেনি। গত ৮ জনুয়ারী থেকে বারবার বলার পরও পায়নি মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা দিলেই নিউরোসাইন্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নজমুল করিম বলেন, একদিন যার ডাকে হাজার হাজার তরুণ এগিয়ে আসত, আজ কেউ তার খবর নেয় না।গত শনিবার তাকে দেখতে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও একই ছাত্রসংসদের ভিপি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু। তিনি চিকিৎসার খোজ খবর নেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সুবিধার কথা না পাওয়ার বিষয়টি তাকে জানানো হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলে বিদায় নেন। অদ্যবধি আওয়ামী লীগ বা সরকারের তরফ থেকে ত্যাগি নিবেদিতপ্রাণ সাইফুল ইসলামের খবর কেউনেয়নি।।
এ বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা স¤পর্কে নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু বলেন,“ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাইফুল এমপি’ সারা জীবন দল ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।“নিজের ও পরিবারের কথা ভাবেননি।“শেষ জীবনে এসে চিকিৎসা করানোর টাকাও নেই তার।”
চিকিৎসার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়ে পরিবার। বর্ষিয়ান এ আওয়ামী লীগ নেতার পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাঁড়াবেন বলে প্রত্যাশা পরিবারের লোকজন।