শুধু টাকার জন্য আটকে রাখা হয় পোড়া মনোয়ারাকে
সাহায্যের টাকা শেষ, হাসপাতাল দিয়ে দিয়েছে ছাড়পত্র। এখন পোড়া শরীরের যন্ত্রণায় বিছানায় অজ্ঞান অবস্থায় ছটফট করছেন মনোয়ারা বেগম। আর এই হতদরিদ্র নারীর পোড়া ক্ষতের যন্ত্রণা দ্বিগুণ করছে অর্থ হারানোর কষ্ট। এ যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা! পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকরা সাহায্যের টাকা হাতানোর পরপরই মনোয়ারা বেগমকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে টাকা খরচের বিষয়ে তারা দিয়েছেন দায় সারা উত্তর।
নীভু নীভু করছে মনোয়ারা বেগমের জীবন প্রদীপ। ৪৫ ভাগ পোড়া শরীর নিয়ে অন্ধকার বেড়ার ঘরে অজ্ঞান অবস্থায় ছটফট করছেন তিনি। আর এই অভাবী মানুষটির চিকিৎসার জন্য সাহায্যের টাকার উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালের ডাক্তারদের। এমন অভিযোগ মনোয়ারার মেয়ে রাবেয়া বেগম।
তিনি জানান, বার্ন ইউনিট এবং পোড়া রোগীদের ভালো চিকিৎসা সেবা না থাকার পরও ১০ দিন রেখে চিকিৎসার নামে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে মুমূর্ষু অবস্থায় রোগীকে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়। সার্জারি বিভাগের সবুজ ইউনিটের ৫ নম্বর বিছানায় চিকিৎসা নিয়েছেন মনোয়ারা। সার্জারি ইউনিটের ইউনিট প্রধান ডাঃ মজিদ এর তত্বাবধানে ছিলেন তিনি। মনোয়ারা বেগমের বাড়ী জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার চকশ্যাম গ্রামে। স্বামী আবুল হোসেন ভ্যান চালক পেশায় একজন দিনমজুর।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাবেয়া বেগম জানান অভাবের সংসারে শীতবস্ত্র না থাকায় ২৩ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে মনোয়ারা বেগম শীত নিবারণের জন্য রান্নার চুলাতে আগুন পোহাচ্ছিল। এ সময় চুলার আগুন শরীরে লাগে। তার আত্মচিৎকারে চাচা আব্দুল ওহাব ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন।
শজিমেক এ শুক্রবার ডাক্তার না পেয়ে এক পরিচিত লোকের পরামর্শে ২৪ জানুয়ারি দুপুরে টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হসপিটালে ভর্তি করায়। সেখানেই চিকিৎসা করানো হয় ১০ দিন। চিকিৎসা বাবদগরীব পরিবারটির খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সব টাকায় ছিল ধার দেনা এবং হাত পেতে সাহায্যের। টাকা শেষ হওয়ায় এখন নিজ বাড়িতেই মৃত্যুর প্রহর গুনছে মনোয়ারা বেগম।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় হাসপাতালের ইউনিট প্রধান ডাঃ মজিদ এর সাথে কথা হয় সময় টেলিভিশনের প্রতিবেদকের সঙ্গে। চিকিৎসকের কাছে জানতে চাওয়া হয় বার্ন ইউনিট না থাকার পিও ৪৫ শতাংশ পোড়া রোগীকে কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হল। এর উত্তরে তিনি জানিয়েছেন বার্ন ইউনিট না থাকলেও সার্পোটিং চিকিৎসা দিয়েছেন তারা। ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন এটি খরচ হওয়াটা স্বাভাবিক।
মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কেন রিলিজ দিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান রোগীর লোক রাখতে চায়নি তাই রিলিজ দিয়েছি।