পারিবারিক জীবনে আল্লাহ তাআলার দেয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো সন্তান। শান্তি, নিরাপত্তা, আশ্রয়, সমস্যার সমাধান সবই পরিবার থেকে শিশু সন্তান। সন্তানকে ভালো কাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করা, অন্যায়ের মোকাবেলা সর্বোপরি প্রতিবাদের পদ্ধতি শেখার অনত্যম প্রতিষ্ঠানও হলো পরিবার।
যোগ্য উত্তরসূরী গঠনের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিবার। বেশিরভাগ সময় পরিবারের সার্বিক পরিচালনা করেন সন্তানের বাবা। বাবাকে সহযোগিতা করেন সন্তানের মা। যার অবদান কোনো অংশেই কম নয়। এ পরিবার থেকেই সন্তান শিখতে শুরু করে। তার চরিত্র পরিবারের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠে। কাউকে সম্মান করা, সততা অবলম্বন ও ভালোবাসা সবকিছুই পরিবারের বাবা-মা থেকে শেখে।
সন্তানকে আদর্শ চরিত্রবান সুনাগরিকে হিসেবে তৈরি করতে বাবার ভূমিকা অনেক বেশি। পরিবারের অর্থিক প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যমেই একজন বাবার দ্বায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যায় না। বরং সুহৃদ, চরিত্রবান, আত্মমর্যাদার অধিকারী হিসেবে সন্তানদের গড়ে তোলাই বাবার অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদিসে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সন্তানের জন্য পিতার রেখে যাওয়া উত্তম চরিত্র থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো মিরাসী (উত্তরাধিকার) সম্পত্তি হতে পারে না।’ (তিরমিজি)
দুনিয়া ও আখেরাতে সন্তানের কল্যাণ কামনায় চিন্তা-মগ্ন থাকা। কোনো ব্যক্তির বাবা হওয়া মানে সে ব্যক্তির উচিত তার সন্তানকে হজরত নূহ আলাইহিস সালামের মতো সন্তানকে ঈমানের ছায়াতলে আশ্রয় করে দেয়ার প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
পয়গম্বর নূহ আলাইহিস সালামের সন্তান আল্লাহ ও তার বিরোধী ছিল। তিনি সন্তানকে আল্লাহর পথে আসার জন্য অনেক আহ্বান করেছিলেন। এমনকি মহাপ্লাবনের আগেও মুমিনদের সাথে নৌকায় উঠতে অস্বীকারকারী সন্তানকে সম্বোধন করে শেষ বারের মতো বাবাসুলভ আহ্বান করে বলেছিলেন। তাঁর সে আহ্বান কুরআনুল কারিমে এভাবে উঠে এসেছে- ‘আর নৌকাখানি তাদের বহন করে চলল পর্বত প্রমাণ (পানির) তরঙ্গমালার মাঝে, আর নূহ (আলাইহিস সালাম) তাঁর পুত্রকে ডাক দিলেন আর সে সরে রয়েছিল। তিনি বললেন, প্রিয় ছেলে! আমাদের সাথে আরোহন কর এবং কাফেরদের সাথে থেকো না।
সে বলল, আমি অচিরেই কোনো (উঁচু) পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। নূহ (আলাইহিস সালাম) বললেন, আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কোনো রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে (পানির) তরঙ্গ আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে নিমজ্জিত হল। (সুরা হুদ : আয়াত ৪২-৪৩)
বাবাকে হতে হবে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মতো। যে বাবা সব সময় সন্তানের কল্যাণে দোয়া করবে। যাতে করে সন্তান আল্লাহর অনুগত নেককার বান্দা হতে পারে। প্রত্যেক বাবার উচিত নিজ সন্তানকে সৎ ও যোগ্য উত্তরসূরী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে শুণ্য হাতে প্রার্থনা করা। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার সন্তানের জন্য সেভাবেই দোয়া করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- ‘হে পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে (বাপ-বেটাকে) তোমার অনুগত বান্দাদের অর্ন্তভূক্ত করো। আর আমাদের বংশধর থেকেও তোমার একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর। আমাদের আত্মত্যাগের (ইবাদতের) নিয়ম-নীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী, দয়ালু।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৮)
অন্য আয়াতে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সন্তানের জন্য আরও দোয়া করেন- ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে ও আমার সন্তানদের নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে সাব্যস্ত কর এবং আমাদের দোয়া কবুল কর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪০)