গণমানুষের নেতা ওয়াজি উদ্দিন খান

৩১ জানুয়ারী ২০২০ তারিখ শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা। ওয়াজি উদ্দিন খানের চাচাতো ভাই আল মাহমুদ নিটুকে ফোন করলাম। উদ্দিন সাহেবের কিছু তথ্য দরকার। উনাকে নিয়ে অনেকদিন আগে থেকে লেখবো বলে তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। নিটুকে একাধিক বার বলার পরেও এতদিনে তা পাওয়া যায় নাই। আরেকটি বিষয় নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত ছিলো আমরা সম্মিলিতভাবে উদ্দিন ভাইয়ের বাসায় যাবো। তাঁকে ফুল, ফল এবং কিছু উপহার দিয়ে উনার সাথে সাক্ষাৎ করবো। একবার ২০০৬ সালে দলীয়ভাবে আমরা তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল উনার সাথে সাক্ষাৎ করে ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে আমাদের দল থেকে সমর্থন জানিয়েছিলাম । উনি আমাদের তাঁর বাসায় যাওয়া এবং সমর্থন দেওয়ায় খুব খুশি হয়েছিলেন। আমরা নিশ্চিত ছিলাম দুইবারের এমপি এবং পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে উনাকেই নমিনেশন দেওয়া হবে। কিন্তু ২০০৬ সালের নির্বাচনে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা হলে উনার নাম বাদ পড়ে যায়।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার উনি ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে পাবনা – ৫ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। ১৯৮৬ সালে তাঁকে পাবনা- ৩ আসন থেকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। পাবনা – ৩ হলো চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত। এই এলাকায় তাঁর কোন আত্মীয়-স্বজন না থাকলেও জনগন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপুল ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। ১৯৮৬ এবং ১৯৯৬ সালে ঐ এলাকার জনগন উনাকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন। দুই মেয়াদে ঐ এলাকায় এমপি হয়ে যখন তাঁর গ্রহনযোগ্যতা তুঙ্গে তখন ২০০১ সালের নির্বাচনে তাঁকে সেখানে নমিনেশন না দিয়ে পাবনা -৫ আসনে প্রার্থী করা হয়। পাবনা – ৩ আসনের জনগণের আহাজারি আর প্রার্থীর প্রত্যাশার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত হলে সেই দুই আসনেই দল পরাজিত হয়।

দুর্ভাগ্য থেকে দুর্ভোগ নেমে আসে ওয়াজি উদ্দিন খানের জীবনে। ২০০০ সালের শেষ দিকে উনি তখন সংসদ সদস্য। ঢাকার অদূরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন। সেই দুর্ঘটনায় অস্বাভাবিকভাবে জীবন বাঁচলেও বাঁচানো যায়নি তাঁর পা। দ্রুত তাঁকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হলে সেখানে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে অনেক সময় লাগে। অদম্য ছুটে চলা নেতা – একটি পা হারানোর পরেও তাঁকে কেউ থামাতে পারেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে নুতন করে নুতন এলাকায় অবিরাম গতিতে ছুটেছেন নুতন ভোটারের কাছে। ভগ্ন হৃদয় আর খন্ডিত পা নিয়ে পাবনা সদরের প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি মানুষের কাছে গেছেন – ভোট চেয়েছেন। দুর্ভাগ্য উনার দলের। বিগত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে ২০০১ এর নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়।

২০০১ সালে নির্বাচনে পরাজিত হলেন। ২০০২ সালে তাঁর শরীর থেকে আরেকটি পা কেটে ফেলা হলো। ২০০৬ সালের নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন। পাবনা -৫ থেকে ইদ্রিস বিশ্বাসের নাম ঘোষণা হলো। পাবনা – ৩ মকবুল হোসেন। এক এগারোর সরকার এসে নির্বাচন স্থগিত করলেন। ২০০৮ সালের শেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে তাঁর ২৫ বছরের দায়িত্বে থাকা পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হারালেন। নির্বাচনে প্রবীণকে হারিয়ে প্রার্থী হলেন তরুণ নেতা গোলাম ফারুক প্রিন্স। এরপর ওয়াজি উদ্দিন খান দলের পদ ও ক্ষমতা হারিয়ে মূলতঃ অদৃশ্য পাদপীঠে চলে গেলেন।

চলবে –