পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সরকারি চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে এক সরকারি কর্মকর্তার বাড়ি ঘেরাও করেছে প্রতারণার শিকার এক কলেজ ছাত্রের পরিবার ও গ্রামবাসী। অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার নাম আনছার আলী (৫০)। সে ভাঙ্গুড়া উপজেলার ট্রেজারি অফিসের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামে তার বসতবাড়ি ঘেরাও করে প্রতারিত কলেজ ছাত্রের পরিবারের সদস্য ও বিক্ষুব্ধ শতাধিক গ্রামবাসী। পরে আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে বিক্ষুব্ধ জনতা ফিরে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলা ট্রেজারি অফিসের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আনসার আলী ও যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহকারী সাঈদ আলী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত পাঁচজন বেকার যুবককে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চুক্তিতে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা করে নেয়। গত বছরের জুন মাসে এসব টাকা নেয় তারা। পরে তারা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও প্রাণিসম্পদ অফিস সহ বিভিন্ন অফিসে চাকুরীতে যোগদানের নিয়োগপত্র দেয় এসব যুবকদের। কিন্তু কর্মস্থলে যোগদান করতে গিয়ে ওইসব নিয়োগপত্র ভুয়া বলে ধরা পড়ে। এই অবস্থায় প্রতারণার শিকার এসব যুবকরা আনসার আলী ও সাঈদের কাছে টাকা ফেরত চায়। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে ওই দুইজন নানা টালবাহানা করতে থাকে।
ওই চক্রের প্রতারণার শিকার উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের মৃত আফছার আলীর ছেলে রাজিউল ইসলাম। তিনি গত বছরের জুন মাসে আনসার আলীর বাড়িতে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে চাকরির জন্য পাঁচ লাখ টাকা দেন। পরে নভেম্বর মাসে তাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলে তার নিয়োগপত্র ভুয়া ধরা পড়ে। এরপর গ্রামে ফিরে এসে সে নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আনসার আলীর কাছ থেকে টাকা ফেরত চায়। কিন্তু আনসার আলী টাকা নেয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। এতে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার রাতে রাজিবুল ইসলামের পরিবারের সদস্য ও গ্রামের বাসিন্দারা আনসার আলীর বাড়ী ঘেরাও করে। পরে আনসার আলী ও তার স্ত্রী লিপি খাতুন টাকা ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করলে বিক্ষুব্ধ জনতা ফিরে যায়।
এসময় প্রতারণার শিকার ওই গ্রামের আরেক যুবক মুজাহিদুল ইসলাম সহ তার পরিবারের সদস্যরাও ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। মুজাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিসে নতুন সৃষ্ট প্রাণী সম্প্রসারণ কর্মকর্তার পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে গত বছরের জুন মাসে ৬ লাখ টাকা নেয় ওই নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আনসার আলী ও হিসাবরক্ষণ অফিসের অফিস সহকারি সাঈদ আলী। কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলে তার নিয়োগপত্রও ভুয়া ধরা পরে। এ ঘটনায় মুজাহিদুল ইসলাম গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর থেকেই সাঈদ ভাঙ্গুড়া যুব উন্নয়ন অফিসে তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বর্তমানে ওই অভিযোগের তদন্ত চলছে।এ সময় আরও জানা যায়, একই গ্রামের হাসান প্রামাণিকের ছেলে হাসিনুর রহমান নামে এক যুবক চাকুরীর প্রলোভনে ওই চক্রকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন। পরে স্থানীয়় রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে তিনি আনসার আলীর কাছ থেকে কিছু টাকা ফেরত পান।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, ‘আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। তবে গ্রামের মানুষ বলে অনেককে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সবাই মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আমারে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’