কপোতাক্ষ নদ ভরাট করতে ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌরসভার কর্তৃপক্ষ এতোদিন বর্জ্য ফেলে আসছিলেন। এবার তারা সেই বর্জ্যরে উপর মাটি ফেলছেন। এভাবে বর্জ্য আর মাটি দিয়ে নদ ভরাট করে সেখানে বাজার বসাবেন। গত পাঁচ-ছয় দিন ট্রলিতে করে মাটি এনে ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকটা জায়গা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এতে নদ ভরাটের পাশাপাশি পানিও দুষণ হচ্ছে।
স্থানিয়রা বলছেন, তারা জানতে পেরেছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এভাবে নদের জায়গা ভরাট করে সেখানে মাছ বাজার প্রতিষ্ঠা করবেন। শহরের বর্তমান মাছ বাজারটি এখানে স্থানান্তর করা হবে। যে কারনে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ হলেও নদের মধ্যে ময়লা ফেলা বন্ধ হচ্ছে না। অবশ্য কর্তৃপক্ষ বলছেন, মাছ বাজারটি স্থানান্তরের কোনো বিকল্প নেই। যে কারনে এই স্থানটিতে তারা মাছ বাজার প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, যশোর জেলার উপর দিয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদটির কিছু অংশ ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। নদটি মহেশপুর উপজেলার পুরন্দপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খালিশপুর বাজার পার করে মহেশপুর শহরে প্রবেশ করেছে। মহেশপুর শহর পেরিয়ে বৈচিতলা হয়ে আবারো শহরের আরেক পাশ দিয়ে বয়ে আজমপুর হয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলায় প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে চৌগাছা হয়ে যশোরের কেশবপুরে মিলেছে।
নদের মহেশপুর শহর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া অংশ ঘেষে উত্তরে মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ আর দক্ষিনে মহেশপুর পৌরসভা ভবন রয়েছে। পৌরসভার অফিস ভবনের অদূরে কপোতাক্ষ নদের ধার ঘেষে প্রায় এক বছর ধরে ফেলা হয়েছে পৌরসভার বর্জ্য। প্রতিদিন সকালে পৌর এলাকার সকল বর্জ্য গাড়িতে করে এনে এখানে ফেলা হয়েছে। যেখানে ইতিপূর্বে বসার জন্য বেঞ্চ তৈরী করেছিল এই পৌরসভা কর্তৃপক্ষই। সেখানেই বর্জ্য দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এক সময় বেঞ্চে বসে স্থানিয়রা সময় কাটাতেন, অনেকে মাছ ধরতেন, এখন সেখানে বর্জ্য আর বর্জ্য। সম্প্রতি সেই বর্জ্যরে উপর ফেলা হচ্ছে মাটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কপোতাক্ষ নদের ধার ঘেষেঁ ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নদটির দক্ষিণ পাড়ে ফেলা হচ্ছে পৌরসভার বর্জ্য আর মাটি। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এতোদিন বর্জ্য ফেললেও গত পাঁচ-ছয় দিন হলো মাটি ফেলছেন। স্থানিয় বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করে জানান, তারা এই নদে মাছ ধরতেন। নদের পাড়ে তাদের বাড়ি হওয়ায় পরিবারের সবাই এখানে গোসলও করতেন। পাড়ে এক সময় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বসার বেঞ্চ তৈরী করেছিলেন। অনেকে সেখানে বসে সময় কাটাতেন।
কিন্তু এক বছরের অধিক হয়েছে হঠাৎ করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলা শুরু করেছেন। প্রতিদিন পৌরসভা এলাকায় যত বর্জ্য জমা হচ্ছে তার সবই ফেলা হচ্ছে কপোতাক্ষ নদে। ময়লা ফেলায় ইতিমধ্যে অনেকটা জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। আর এই ময়লার কারনে পানিও দুষিত হচ্ছে। পানি র্দূগন্ধযুক্ত হওয়ায় এখন আর কেউ গোসল করতে নামেন না। স্থানিয়রা আরো জানান, নদের মধ্যে দীর্ঘদিন ময়লা ফেলে কিছুটা ভরাটের পর এবার মাটি ফেলা শুরু হয়েছে। গত তিনদিন এই মাটি ফেলা শুরু হয়েছে। পূর্বে ফেলে রাখা বর্জ্যরে উপর মাটি ফেলা হচ্ছে। এভাবে নদ ভরাট করে বাজার বসানো হবে বলে স্থানিয়রা শুনেছেন।
এ বিষয়ে পৌরসভার প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, পৌরসভা যে স্থানে মাটি ফেলছেন সেখানে পাইকারি মাছ বাজার প্রতিষ্ঠা হবে। এই কারনে মাটি ফেলা হচ্ছে। জায়গাটির মালিকানা জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা হিন্দুদের দেবত্ত সম্পত্তি। সেখানে মাছ বাজার করা হচ্ছে। মহেশপুর উপজেলার প্রবীণ শিক্ষক এ.টি.এম খায়রুল আনাম জানান, আসলে ওই জায়গাটি কাদের তা নিশ্চিত হওয়া জরুরী।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন সরকার জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তবে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।