নাটোরে ১৬ হাজার একর জমিতে আখ চাষে ছয় কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ

২০১৯-২০২০ মৌসুমে নাটোর চিনিকল এলাকায় ১৬ হাজার একর জমিতে আখ চাষ করা হচ্ছে। আখ চাষের প্রণোদনা হিসেবে নাটোর চিনিকল কৃষকদের মাঝে ছয় কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে। পাশাপাশি চলছে ইক্ষু যাদুঘর স্থাপন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া আখ রোপণ মৌসুম আগামী ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত চলবে। ইতোমধ্যে আখের আবাদি জমির পরিমাণ সাড়ে দশ হাজার একর ছাড়িয়ে গেছে।

নাটোর চিনিকল সূত্রে জানা যায়, চিনিকলের চলমান আখ মাড়াই মৌসুমে নাটোর চিনিকল এলাকায় ১৪ হাজার ১৫৩ একর জমিতে আখ চাষ হয়। মোট দুই লাখ ৫৪ হাজার টন উৎপাদিত আখের মধ্যে চিনিকল এক লাখ ৬৩ হাজার টন আখ মাড়াই করে ১৩ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে। গত ১৫ নভেম্বর শুরু হওয়া আখ মাড়াই মৌসুমে ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ সাতশ ’টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৭২ টন।

কৃষকদের আখ চাষে সহযোগিতা এবং আখ ক্রয়ের সুবিধার জন্যে নাটোর চিনিকল আখ উৎপাদন এলাকাকে আটটি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। এসব আঞ্চলিক কার্যালয়ে উপ ব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে একটি করে টিম কাজ করছে। এসব অঞ্চলকে আবার ৫১টি কেন্দ্রে বিভক্ত করে একজন কেন্দ্র প্রধান কাজ করছেন। কেন্দ্র প্রধানের অধীনে ইক্ষু উন্নয়ন কর্মকর্তারা মাসে ২০ দিন করে আখ চাষীদের চাষাবাদ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত নতুন জাতের আখ বীজ ব্যবহার, পরিমিত সারের ব্যবহারসহ নালা কাটা, ঝাঁড়বাঁধা, পরিষ্কার বীজ তৈরী ইত্যাদি প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।

নাটোর চিনিকল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ঋণ বিতরণ করে আখ চাষীদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। চলমান আখ মাড়াই মৌসুমে ছয় হাজার কৃষককে পাঁচ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেছিল। ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ঋণ চাষীদের আখ বিক্রয় লব্ধ অর্থের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। আগামী মৌসুমের আখ চাষে কৃষকদের অন্তত সাত কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে।

গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দুইশ আখ চাষীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আরো দুইশ’কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এ পর্যন্ত দুইটি মাঠ দিবসে কৃষক সমাবেশের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং ইক্ষু যাদুঘর পরিদর্শন করানো হয়েছে। আবাদি জমিতে স্থাপিত এ যাদুঘরে ১২টি বিভিন্ন জাতের আখ চাষ এবং ঐসব আখের গুণাগুণ প্রদর্শন করা হয়েছে।
আখ চাষী জমিতে একটি ইক্ষু যাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। গত
২৫ ডিসেম্বর ঐ স্থানে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে অংশগ্রহণকারী শত শত কৃষক এ যাদুঘর থেকে বিভিন্ন
জাতের আখের ফলন স¤পর্কে ধারণা নিয়েছেন বলে জানান নজরুল ইসলাম।

বাগাতিপাড়ার হাট গোবিন্দপুর এলাকার কৃষক আব্দুস সাত্তার আসন্ন মৌসুমে ১০ একর জমিতে আখ
চাষ করেছেন। প্রচলিত আখ চাষের পাশাপাশি অপ্রচলিত রোপা পদ্ধতিতে আখ চাষের চারাও তিনি
তৈরী করছেন। আব্দুস সাত্তার বলেন, প্রচলিত পদ্ধতির বীজ লাগিয়ে আখ চাষ অপেক্ষা চারা থেকে
আখ চাষে উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পায়। আদর্শ আখ চাষী নাটোর চিনিকল সংলগ্ন এলাকার কামাল
উদ্দিন বিএসআরআই-৪৩,৪৫,৪৬ ছাড়াও ঈশ্বরদী-৩৩ ও ৩৬ জাতের আখ চাষ করছেন বলে
জানান।

কিছু কৃষক জমিতে আখ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে সরিষা, তিল ইত্যাদি শস্যও আবাদ
করছেন। এক্ষেত্রে চিনিকল কর্তৃপক্ষ চার হাজার চারশ’টাকা করে একর প্রতি কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান
করছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষের বীজ বর্ধক খামারে উৎপাদন করা হচ্ছে ফাউন্ডেশন বীজ। ফাউন্ডেশন,
রেজিষ্টার্ড এবং সার্টিফাইড বীজ মিলিয়ে চিনিকল এলাকায় মোট বীজের চাহিদা ৩৩ হাজার টন।

নাটোর চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মোঃ রুস্তম আলী বলেন, চিনিকলের ইক্ষু উন্নয়ন পর্যায়ের
বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেস্টা, কৃষকদের মাঝে গুণগতমানের বীজ ও সার
সরবরাহ, ঋণ প্রদান, প্রযুক্তি উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম ইত্যাদি সহায়ক কর্মসূচী বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে
নাটোর চিনিকল এলাকায় এবার সমৃদ্ধ আখ মৌসুম হবে। ইতোমধ্যে সাড়ে নয় হাজার একর জমিতে
আখ রোপণ করা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত রোপণ মৌসুমের মধ্যে আবাদি জমি ১৬
হাজার একর ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নাটোর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম জিয়াঊল ফারুক বলেন, চলতি মৌসুমে নাটোর
চিনিকল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকরা আগামী
মৌসুমের আখ রোপণে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছেন। নাটোর চিনিকলের কৃষি বিভাগ তাদেরকে সব
রকমের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে চলতি বছরের উৎপাদন ছাড়িয়ে অন্তত দুই হাজার একর
অতিরিক্ত জমিতে আখ উৎপাদন হবে। তাই আগামী আখ মাড়াই মৌসুম হবে আরো সমৃদ্ধ।