নাটোরের বড়াইগ্রামে এক স্কুল শিক্ষিকার ফ্রি এ্যাম্বুলেন্সে প্রাণ বাঁচছে হাজারো রোগীদের

নাসিম উদ্দীন নাসিম
নাটোরের বড়াইগ্রামে স্কুল শিক্ষিকার ফ্রি অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা। সম্পূর্ণ নিজ খরচে একটি এ্যাম্বুলেন্স কিনে এ মহান উদ্যোগ নিয়েছেন শেফালী খাতুন নামের এক স্কুল শিক্ষিকা। শুধু তাই নয়, প্রতি মাসে চালকের বেতন ও জ¦ালানি খরচ বাবদ কমপক্ষে ১৪-১৫ হাজার টাকাও নিজের বেতন থেকেই মিটিয়ে চলেছেন তিনি। গত ২ মাস যাবৎ শুধু চালকের একবেলা খাবারের বিনিময়ে এলাকাবাসীকে এ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়ে আসছেন তিনি। এ মহৎ উদ্যোগ নেয়া শেফালী খাতুন মেরিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও দোগাছী গ্রামের সেনা সদস্য ময়লাল হোসেনের স্ত্রী।
জানা যায়, অনেক দিন থেকেই তিনি মানুষের সেবা করার স্বপ্ন দেখেছেন। সে স্বপ্ন পুরণে তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্সের কেনার পরিকল্পনা করেন। তারপর ধীরে ধীরে ৬ বছর যাবৎ বেতনের কিছ কিছু টাকা সঞ্চয় করেছেন, অবশেষে তাঁর জমানো প্রায় তিন লাখ টাকা ও তার স্বামীর সহযোগিতায় কিনেছেন একটি রিকন্ডিশন অ্যাম্বুলেন্স। তাতে এখন বিনা পয়সায় সেবা পাচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দোগাছী, মশিন্দা, দিঘলকান্দী ,লক্ষীচামারী, মনপিরিত, মেরীগাছা, চুলকাটিয়া ,কুজাইলসহ আশেপাশের ৮-১০ টি গ্রামের মানুষেরা।
এ পর্যন্ত ফ্রি এ্যাম্বুলেন্সে ৪৮ জন রোগীকে জরুরীভাবে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়াসহ দুইটি মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চুলকাঠিয়া গ্রামের রাজিয়া বেগম জানান, সেবাটি মূলত এলাকার গরীব অসহায় মানুষদের জন্যে। এটি চব্বিশ ঘন্টাই চালু থাকায় এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হচ্ছে। মশিন্দা গ্রামের নাসরিন নাহার বলেন, এ সেবা পেয়ে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। সেদিন ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স আমাকে সময় মত হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ায় প্রাণে বেঁেচে গেছি, নাহলে হয়তো মরেও যেতে পারতাম। এ এ্যাম্বুলেন্সে সেবা পেয়ে আমার মত অনেকের উপকার হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জমির উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা সদর ও হাসপাতাল থেকে দুরের এলাকা হওয়ায় গরীব মানুষের পক্ষে চিকিৎসা ব্যায় মেটানোসহ ও এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া মেটানো দু:সাধ্য। এই পরিস্থিতিতে শেফালী ম্যাডামের ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সেবাটি মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, ড্রাইভারের একবেলা খাবারের বিনিময়ে এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে যা হতদরিদ্র মানুষের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
এ উদ্যোগ সম্পর্কে স্কুল শিক্ষিকা শেফালী খাতুন বলেন, গ্রামের দরিদ্র মানুষের দূর্ভোগ দেখে তাদের জন্য কিছু একটা করার চিন্তা থেকেই দিনে দিনে জমানো টাকায় এ উদ্যোগ নিয়েছি। তবে একটা এ্যাম্বুলেন্স হওয়ায় অনেক সময় ৮ টি গ্রামে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকারি-বেসরকারি কোন সহযোগিতা পেলে আরো দু-একটি এ্যাম্বুলেন্স কিনে এ সেবার পরিধি বাড়াতে চাই।