বহুদিন ধরে যশোরে বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ারের ব্যাটারিসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হচ্ছিল। কিন্তু চোরচক্রটিতে শনাক্ত বা আটক করা যায়নি। তবে যশোরের ডিবি পুলিশ এক অভিযানে এই চক্রের মূলহোতাসহ ৭ জনকে আটক করেছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, চক্রটি আন্তঃজেলা চোরচক্রের সদস্য এবং তিনজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তারা বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
এসময় তাদের কাছ থেকে চোরাই ১০০টি ব্যাটারি, ৪৯টি সার্কিট, ২২টি কুলিংফ্যান, চুরি কাজে ব্যবহৃত ১টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৩টি ভাঙ্গা তালা, তালা ভাঙ্গার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। যশোর খুলনা ও সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) তৌহিদুল ইসলাম সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এ সময় ডিবি পুলিশের ওসি পরিদর্শক মারুফ আহম্মদ, এসআই সোলায়মান আক্কাস, এসআই অরুণ কুমার দাস প্রমুখ পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আটককৃতরা হলো, যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া আমতলা এলাকার হারেজ মৃধার ছেলে হারুন অর রশিদ মিঠু (৩৮), সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুরের খায়রুজ্জামানের ছেলে মেজবাহ উদ্দিন মিরাজ (৩২), শহরের বকচর র্যাব অফিস এলাকার মাহাবুব আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া ইউনুচ আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রিমু (২৭), সদর উপজেলার রাজারহাট সীতারামপুর গ্রামের আব্দুর রহিম মোল্লার ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব ওরফে চঞ্চল (৩৮), জামাল উদ্দিন মোল্লার ছেলে ও সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার তুলসীডাঙ্গা গ্রামের দীন মোহম্মাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুর রহিম মোল্লা (৫৯) (অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী), সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার রঘুনাথপুর মোড়ল পাড়ার ইউসুফ আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন (৩৬) এবং যশোর সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের হিরু মোল্লার ছেলে খায়রুল ইসলাম (৩০)।
এদিকে আটককৃতদের মধ্যে মিঠু, মিরাজ, রিমু ও চঞ্চল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চুরির কথা স্বীকার করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে, আটককৃদের ৩ জন ডিপ্লোমাধারী ইঞ্জিনিয়ার এবং তারা বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারে কাজ করতেন। এরা হলেন, মিঠু, মিরাজ ও চঞ্চল। টাওয়ার থেকে সহজে ব্যাটারি চুরি করে আগুনে পুড়িয়ে তার থেকে শিসা বের করে ফের মোবাইল কোম্পানি এবং ব্যাটারি তৈরির কারখানায় বিক্রি করার সিস্টেম জানেন। চুক্তি শেষে মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি না থাকায় তারা চুরির কাজে নেমে পড়েন । এ চক্রের ৭জনকে আটক করা হলেও যশোর, খুলনা এবং সাতক্ষীরা এলাকায় আরো বেশ কয়েকটি চক্র রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ১২ জানুয়ারি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বল্লামুখ থেকে গ্রামীণফোন লিমিটেড কোম্পানির টাওয়ার থেকে ব্যাটারি চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৬ লাখ টাকা। এ ঘটনায় ২২ জানুয়ারি বাঘারপাড়া থানায় মামলা হয়। ওই মামলাটি যশোর গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
যশোর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মেদ মামলাটি তদন্তে নামেন। মোবাইল ফোন কোম্পানির ভিডিও ফুটেজ পেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা পুলিশের দুটি টিম বেশ কয়েকদিন ধরে নজরদারি চালিয়ে চোরচক্রের সন্ধান পান। প্রথমে সাতক্ষীরা থেকে আটক করা হয় আব্দুর রহিমকে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী। এরপর তার ছেলে চঞ্চলকে আটক করা হয়। চঞ্চল এই চক্রের একজন হোতা। চুরি করে ব্যাটারিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম তার পিতার কাছে দিতেন। তার পিতা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা বিক্রি করতেন। তাদের দখলে থাকা কলারোয়া থেকে ব্যাটারিসহ সরঞ্জাম এবং পিকআপটি যশোর সদরের সীতারামপুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে চুরির ঘটনা স্বীকার করেছে চঞ্চল, মিঠু, মিরাজ ও রিমু। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু