নির্মলেন্দু সরকার বাবুল,দুর্গাপুর, নেত্রকোনা:
চারদিকে তীব্র শীতের কারণে যখন জনজীবন বিধ্বস্ত ঠিক এমননি সময়ই কাদাঁ কারণে সড়ক দিয়ে চলাচল করাই দায় হয়ে দাড়িয়েছে নেত্রকোনার দূর্গাপুর পৌরবাসীর। বেপরোয়া ট্রাক দিয়ে ভেজা বালু পরিবহন করায় পৌর শহরের প্রায় সব রাস্তা গুলোর অবস্থা করুন। সরকারী ভাবে ভেজা বালু পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইন অমান্য করে দিনে রাতে ২৪ ঘন্টাই সোমেশ^রী নদী থেকে অবাধে চলছে ভেজাবালু পরিবহনের মহা উৎসব।
শীতের এই শুকনা মৌসুমেও শহরের প্রতিটি সড়কে বর্ষা মৌসুমের মতোই জমে আছে পানি আর কাঁদা। ফলে পৌর শহরের প্রায় সবসড়ক গুলোই চাষের ক্ষেতে পরিনত হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে যানবাহন তো দূরের কথা মানুষ পায়ে হেটেইঁ চলাচল করা অবস্থা নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, পৌর শহরের তেরি বাজার থেকে উকিলপাড়া হয়ে প্রেসক্লাব মোড় ও আত্রাইখালী ঘাট থেকে কলেজ মোড় হয়ে উপজেলা পরিষদ মোড় দিয়ে অবৈধ লড়ি ও নিষিদ্ধ ১০ চাকার গাড়ি ভেজা বালুবাহী পরিবহনের চিত্র। আর এই সব গাড়ি থেকেই পাহাড়ি ঝর্ণার মত অঝড় ধারায় সড়কে ঝড়ে পড়চ্ছে পানি। এই থেকেই সড়ক গুলোতে তৈরী হচ্ছে কাঁদার। এতে চলাচলের চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্থানীয় জনগন।
অপর দিকে পৌর শহরের শিক্ষা নগর সাধুপাড়া এলাকার আদর্শবিদ্যাপিঠ দি চাইল্ড লার্নিং হোমস্, ওবায়েদুল্লাহ ক্যাডেট মাদ্রাসা, সুসঙ্গ আদর্শ বিদ্যানিকেতন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুসঙ্গ সরকারী মহাবিদ্যালয়, দুর্গাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, দ্বীনি আলিম মাদরাসা, দি চাইল্ড প্রি-পারেটরী স্কুলের এর শিক্ষার্থীরা দিনের বেলায় বেপরোয়া ট্রাক, ট্রাক্টর ও লড়ি চলাচল এবং নদী থেকে ভিজাবালু পরিবহন বন্ধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার রাস্তায় মিছিল করা সহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এছাড়াও মানুষের চলাচল সহজ করতে পৌর শহরের ভিতর দিয়ে দিনের বেলায় লড়ি সহ সকল যানবাহন বন্ধ ও ভেজা বালু পরিবহন বন্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার জেলা প্রশাসক সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডিউ লেটারও দিয়েচ্ছেন। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বরাত নিয়ে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত অবৈধ লড়ি চলাচলে মাইকিং করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়েই অবাধে চলছে অবৈধ লড়ির ভেজা বালু পরিবহন।
স্থানীয়রা জানান, পৌরশহরের উকিলপাড়া, কলেজ রোড, উপজেলা চত্বর, হাসপাতাল এলাকার রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ শত ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তার অবস্থা করুণ দশায় পরিণত হয়েছে। রাস্তা পার হওয়া তো দূরের কথা ঐ রাস্তা দিয়ে পথচারীদের চলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম লেগে থাকে ঐ রাস্তায়। এতে করে নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরী হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের। রাস্তায় প্রতিনিয়ত বিঘœ ঘটায় শিশুরা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। বেলতলী এলাকার অনেক কাপড়ের দোকানী তাদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। হাসপাতাল এলাকায় ঐতিহ্যবাহী দি চাইল্ড প্রিপারেটরী স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। মাঝে মধ্যে অবৈধ লড়ি চলাচল বন্ধে উপজেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল। প্রানের রাস্তা বাঁচাতে প্রয়োজনে বালু মহলের ইজারা বন্ধ করন সহ এ সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা চান স্থানীয় নাগরিক সমাজ, স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় অভিভাবকবৃন্দ।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট চক্র প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে অবৈধ লাইসেন্স বিহীন লড়িগাড়ী অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক দিয়ে বালু পরিবহন করাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যারফলে ছোটখাটো দূর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিগত ২০১৯ সনে শুধুমাত্র লড়িগাড়ী দিয়ে বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থী হত্যা করা হয়েছে ১১জন, ট্রাকে পথচারী হত্যা করেছে ১২ জন।
এ নিয়ে পৌর মেয়র আলহাজ¦ মাওলানা আব্দুস ছ্লাাম বলেন, দুর্গাপুর পৌরসভা সহ আশপাশের ইজারাকৃত এলাকা থেকে ভিজাবালু পরিবহন নিষেধ করা হয়েছে। পৌরবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাস্তায় লড়ি চলাচল বন্ধেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবুও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু গাড়ী চলাচল করছে। এ অবস্থা নিরসনে পৌর প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মানু মজুমদার জানায়, সড়কে ভিজা বালু পরিবহন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার পরও কিছ’ ট্্রাক ও লড়ি এই আইন অমান্য করে ভিজা বালূ পরিবহন করছে । এদেরে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।