বাজারভর্তি বড়ো বড়ো ইলিশ। এমনকি রাজ-ধানীর অলিগলিতেও বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। দামও তুলনামূলক সস্তা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রতি বছর শীতের এ সময় মোকামগুলোতে সামুদ্রিক মাছের দাপট থাকলেও এবার সে জায়গা নিয়েছে ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চলের নদনদীতে এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। আকারে বেশ বড়ো বড়ো এসব ইলিশ খেতেও সুস্বাদু।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, শান্তিনগর ও আব্দুল্লাহপুর মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের ব্যাপক আমদানি। আকারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
আব্দুল্লাপুর মাছের আড়তের ব্যবসায়ী জালাল বলেন, শীতে এত ইলিশের আমদানি থাকে না। কিন্তু এবার ইলিশের আমদানি ব্যাপক। তিনি বলেন, যদি সারা বছরই ইলিশের আমদানি ভালো থাকে তাহলে মাছের বাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সব মাছের দামই তুলনামূলক সস্তা থাকবে। মত্স্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে কারণে এখন বড়ো বড়ো ইলিশ ধরা পড়ছে। ২০১৪ সালে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন ছিল ৫১০ গ্রাম। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৮০ গ্রাম। অন্যদিকে জাটকা ধরার পরিমাণ ৬০ শতাংশ থেকে কমে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ইলিশের প্রজনন সময় দুটি। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর। আরেকটি জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি। আমরা সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর সময়ের ২২ দিন ইলিশ ধরা, বিক্রি নিষিদ্ধ করেছি। পাশাপাশি ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। এতে ইলিশ তার পরিপূর্ণ জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারছে। জাটকা, মা ইলিশ ভালোভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে। এজন্যই এখন এত ইলিশ ধরা পড়ছে।
বেড়েছে চালের দাম : রাজধানীর বাজারে সরু চালের দাম বেড়েছে। কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ও নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদরের তালিকায় সরু চালের দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া বাজারে মাঝারি চালের মধ্যে পাইজাম/লতা ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরানবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মিলন রহমান বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে পেঁয়াজের দাম আরো কমবে। এছাড়া রসুনের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ও আদা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে নতুন আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ২৫ টাকা, শিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করল্লা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, শালগম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢ্যাঁরশ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশি পাকা টম্যাটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, রুই, কাতলা ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের শিং ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, কৈ ১৭০ থেকে ২০০ টাকা, চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কোরাল ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা, মাঝারি আকারের শোল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের মধ্যে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, লেয়ার ১৬০ টাকা, পাকিস্তানি কক জাতের মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা, গরুর মাংস ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।