পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনায় ওসির সামনে ধর্ষণ মামলার এক সাক্ষীকে মারধরের ঘটনায় আরো দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে মারধরের ঘটনার প্রধান আসামী মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরীফের ছোট ভাই আরিফ এখনও রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। এ ঘটনায় পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আক্তার মিলিকে প্রধান করে ৩ সদস্যর গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি বলে জানা গেছে।
পাবনা সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মঙ্গলবার রাতে পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ মামলার সাক্ষী আলিমকে মারধরের ঘটনায় মিরাজুল ইসলামকে এবং এক মাসে আগে দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার আসামী ফিরোজ প্রামানিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে এই ঘটনায় চারজন গ্রেফতার হল।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বিগত ২০ ডিসেম্বর রাতে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের মোঃ পাঞ্জাব প্রাং এর ছেলে মোঃ ফিরোজ প্রামানিক তার সহযোগীরা মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি বাড়ীতে জোড়পুর্বক প্রবেশ করে এক যুবতীকে ধর্ষন করে। ধর্ষিতার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে ধর্ষক ফিরোজকে আটক করে। তবে অন্যরা পালিয়ে যায়। এদিকে ধর্ষক ফিরোজকে আটকের পর ধর্ষকের বাবাসহ মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের সন্ত্রাসী বাহিনী ধর্ষক ফিরোজকে ছাড়িয়ে নিতে ধর্ষিতার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এ সময় চেয়ারম্যান শরীফ ধর্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে ফিরোজকে নিজ জিম্মায় নেয়। ধর্ষিতার বাবা সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপের মুখে চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের কাছে ফিরোজকে হস্তান্তর করেন। চেয়ারম্যান ধর্ষক ফিরোজকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ ঘটনা জানতে পেরে ধর্ষিতা পরের দিন ২১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৭টায় নিজে ধর্ষকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবী করে। এ সময় ধর্ষক ফিরোজসহ চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী ধর্ষিতাকে বেধড়ক মারপিট করে। ধর্ষিতাকে মারপিট করার পুর্বে সন্ত্রাসীরা তাকে আবারও গণধর্ষন করে। পরে সন্ত্রাসীরা ধর্ষিতাকে মৃত ভেবে ধর্ষিতার বাড়ির এলাকার ফাঁকা যায়গায় তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ধর্ষিতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় ধর্ষিতার পিতা বাদী হয়ে ২১ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ৮জনের নাম উল্ল্যেখসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় ৯ (১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু র্নিাযতন দমন আইন সংশোধন ২০০৩ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঐ মামলায় তিন আসামীকে গ্রেফতার করে।
সুত্র জানায়, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে গেল শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় যুবক আলিমকে মুঠোফোনে গাছপাড়া মোড়ে ডেকে নেন সদর থানার ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো স্থানীয় চেয়ারম্যান শরীফের ভাই আরিফের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। আহত আব্দুল আলীম জানান, ওসির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাপোকথনের পরেই একটি ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী মালিগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের ছোট ভাই আরিফুলের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার উপর অতির্কিতে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা এলোপাথারীভাবে লোহার রড, হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে মোটর সাইকেল যোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমৈ ভাইরাল হয়। ঐ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম নীল রংয়ের ব্লেজার পড়া অবস্থায় ঘটনাস্থলে রয়েছেন। মারপিটের সময় পুলিশের ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলাম ও এক সিপাহীকে দ্রুত বের হয়ে চলে যান।
আহত আব্দুল আলীমের মা আলেয়া খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়। সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে জখম করেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করছি। পুলিশও নিরাপদ নয় বলেও দাবী করেন তিনি।
এ বিষয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি। পুলিশ এমন কাজ করতে পারে ভাবতেই পারছি না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করি।