জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বহী অফিসারের কার্যলয় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে কর্মরত ৩য় শ্রেণির কর্মচারীদের পদবী পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবিতে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছে বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি (বাকাসস) রাঙামাটি জেলা শাখা।
আজ ২২ জানুয়ারি বুধবার সকাল ৯টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি পালন করা হয়। সকাল ৯টায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে কর্মবিরতির পাশাপাশি কালেক্টরেট সহকারীরা নিজ নিজ অফিসের বাইরে জেলা প্রশাসন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
বাকাসসের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি জগতজ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাকাসসের সহ-সভাপতি অমলেন্দু তঞ্চঙ্গ্যা, বাকাসসের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এসময় বাকাসসের সদস্য মায়াদেবী চাকমা, নজরুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম, শিলা সিংহ, সৈকত হোসেন, প্রদীপ চাকমা ও শ্বাশতী চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাকাসস রাঙামাটি জেলা শাখার নেতৃবৃন্দরা জানান, বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) এর বিভিন্ন দাবী আদায়ের লক্ষ্যে গৃহীত ও বাস্তবায়িতব্য কর্মসূচী ঘোষনা করেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে ১ থেকে ১৫ জানুয়ারী মুজিব বর্ষ ও স্বাধিনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিভিন্ন কর্মসূচী। ১৬ জানুয়ারি থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকসহ সারাদেশে স্ব স্ব জেলা প্রশাসক এর সাথে সাক্ষাত ও কর্মসূচী অবহিতকরণ ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করা। ২০ থেকে ২১ জানুয়ারী সকাল ৯টায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ১১টা পর্যন্ত ২ ঘন্টা কর্মবিরতি, জেলা প্রশাসন চত্বরে অবস্থান এবং সভা সমাবেশ। ২২ থেকে ২৩ জানুয়ারি সকাল ৯টায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টা কর্মবিরতি, জেলা প্রশাসন চত্বরে অবস্থান এবং সভা সমাবেশ। ২৭ থেকে ২৮ জানুয়ারি সকাল ৯ থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪ ঘন্টা কর্মবিরতি, জেলা প্রশাসন চত্বরে অবস্থান এবং সভা সমাবেশ। ২৯ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং এসএসসি পরীক্ষার কারণে কর্মসূচি বিরতি। ২৫ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি, জেলা প্রশাসন চত্বরে অবস্থান এবং সভা সমাবেশ। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ মার্চ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা, সূর্য সন্তান, বীর শহীদদের প্রতি এবং মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এর কারণে কর্মসূচী বিরতি। এর মধ্যে দাবী বাস্তবায়ন না হলে ২৮ মার্চ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মহাসমাবেশের মাধ্যমে পরবর্তী কঠোর কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে।
নেতৃবৃন্দরা জানান, মাঠ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে কর্মরত ৩য় শ্রেণীর কর্মচারীদের পদবী পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতি ২০০১ সাল থেকে দাবী করে আসলেও অদ্য পর্যন্ত পদবী পরিবর্তন হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত ১৯/০৬/২০১১ সালে পদবী পরিবর্তন সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ অনুমোধন দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলনে ৮বার প্রস্তাব গৃহিত হলেও এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় কর্তৃক গঠিত স্থায়ী কমিঠির বিভিন্ন সময়ে সুপারিশ থাকা সত্তে¡ও উক্ত কার্যালয়ের ১৩তম গ্রেডের অফিস সুপার, সিএ কাম ইউডিএ, প্রধান সহকারী, টেজারী হিসাব রক্ষক ও উচ্চমান সহকারীদেরকে ১০ গ্রেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে, ১৬তম গ্রেডের প্রাপ্ত অফিস সহকারী ও সমপদধারীদেরকে পদবী পরিবর্তন করে ১১তম গ্রেডের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে উন্নীতকরণ করা হয়নি। বার বার আশ্বাস দিয়ে দাবী আদায় না হওয়ায় আমরা এ পৃথক পৃথক কর্মসূচী ঘোষনা করেছি।
বাকাসসের নেতৃবৃন্দরা আরো জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠ প্রশাসনে জনগণের প্রত্যাশিত সেবা প্রদানে গতিশীলতা আনায়ন, কাজের সাথে সমন্বয় ও ডিজিটাল অফিস ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করছেন। মাঠ প্রশাসনের ব্যাপক এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সিংহভাগ কাজ করেন সহকারীগণ। জেলা প্রশাসনে নিয়োগের পর সহকারীগণকে ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে বুদ্ধিমত্তা, মেধা, দক্ষতা ও বেশি শ্রম দিয়ে এসব কাজ করে কোনো পদোন্নতি না পেয়ে একই পদে থেকে অবসরে যাচ্ছেন। মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ৩য় শ্রেনির কর্মচারীদের বেতন গ্রেড অনুযায়ী প্রতিটি পদের নাম পরিবর্তন অথবা মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ৩য় শ্রেণির কর্মচারীদেরকে সচিবালয়ের ন্যায় পদোন্নতি প্রদানের বিষয়টি যৌক্তিক মর্মে বাস্তবায়নের মধ্যে সকল বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় ও সকল জেলা প্রশাসক মহোদয় সুপারিশ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করার পর মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেনির কর্মচারীদের পদবী পরিবর্তন করা হলেও মাঠ পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ অদ্যাবধি বাস্তবায়িত না হওয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সমাবেশে রাঙামাটি কালেক্টরেটে কর্মরত সকল সহকারীগণ স্বতস্ফুর্তভাবে উপস্থিত ছিলেন।