সরিষা ক্ষেতে ভরে উঠেছে তিস্তার চরাঞ্চল

সরিষা ক্ষেতে ভরে উঠেছে তিস্তার চরাঞ্চল। সরিষার মহু-মহু গন্ধের সুভাস ছড়িয়েছে গেছে গোটা চরাঞ্চল। সেই গন্ধের টানে ছুটে আসছে মৌমাছিরা। আবার অনেকে সরিষা ক্ষেতের বর্ণিল দৃশ্য ক্যামেরা বন্ধি করে রাখছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তার চরাঞ্চলে সরিষা ক্ষেতের বাহারি দৃশ্য যেন নজর কাড়ার মত। প্রতিদিন চরের সরিষা ক্ষেতে সুটিং ও ছবি উঠানোর জন্য আসছে শতাধিক নারী পুরুষ। তিস্তার চরাঞ্চল ঘুরে ফিরে দেখা গেছে সবুজের সমারহ।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও নদী খনন, শাসন, ড্রেজিং ও সংরক্ষণ না করায় উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে অগভীর খর¯্রােতী রাক্ষুসি তিস্তা নদী আবাদি জমিতে রুপ নিয়েছে। দীর্ঘদিনের তিস্তার ভাঙনে জমি জিরাত খুঁয়ে যাওয়া পরিবার গুলো যেন তাদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তিস্তায় শেষ সম্বল হারিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাওয়া পরিবার গুলো পুনরায় চরে ফিরে এসে বাপ দাদার ভিটায় স্ত্রী পুত্র পরিজন নিয়ে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদে মেতে উঠেছে। উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চলে এখন সরিষা ক্ষেতসহ নানা জাতের শাকসবজি, আলু, বেগুন, মরিচ, ছিটা পিঁয়াজ, আদা, রসুন, সিম, ধনেপাতা, গাঁজর, কফি, মুলা, লাউ, গম, তিল, তিশি, ভুট্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতের ধান চাষ করা হচ্ছে। কথা হয় হরিপুর চরের রওশন আলীর সাথে, তিনি জানান আজ থেকে দশ বছর আগে তার ১০ বিঘা জমি নদীতে বিলিন হয়ে যায়। যার কারণে তিনি বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে রংপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করে। গত ২ বছর হল তার চরের জমিগুলো আবাদিতে জমিতে পরিণত হয়েছে। সে এখন বাপ দাদার ভিটায় ফিরে এসে পুনরায় চাষাবাদ শুরু করেছে। তিনি বলেন গত বছর ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছে। এ বছর ৩ বিঘা জমিতে সরিষা, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা এবং এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছে। তিনি আশাবাদি চলতি মৌসুমে তিনি সব মিলে ৫০ হতে ৭০ হাজার টাকা লাভ করবে। সুন্দরগঞ্জ বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম জানান, তিস্তার চরাঞ্চলের সবজি এবং তরিতরকারির দাম তুলনামুলকভাবে অন্যান্য আবাদের চেয়ে অনেক কম। যার কারণে স্থানীয়ভাবে মাল ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করলে দ্বিগুন লাভ পাওয়া যায়। তিনি বলেন স্থানীয় তরিতরকারির চাহিদা অনেক বেশি। তবে চরাঞ্চল থেকে মালামাল নিয়ে আসতে পরিশ্রম বেশি হয়। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ, বাজারজাত করণ এবং প্রক্রিয়াজাত করণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা মুনাফা অর্জন করতে পারছে না। তিনি মনে করেন তিস্তার চরাঞ্চলে যেসব ফসল উৎপাদন হয় তাতে করে ২ হতে ৩টি হিমাগার প্রয়োজন। অথচ সুন্দরগঞ্জে একটির বেশি হিমাগার নেই। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন থাকায় চরাঞ্চল হতে চাষিরা উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারে নিতে পারছে না। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ জানান, তিস্তার চরাঞ্চল এখন আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমে থাকার কারণে অনেক উর্বর। সে কারণে রাসায়নিক সার ছাড়াই বিভিন্ন ফসলের ফলন ভাল হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ৮৮৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যার সিংহ ভাগই চরে চাষ হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে সরিষা, ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পিয়াচ, রসুন, তিল, তিশিসহ শাকসবজি এবং নানা জাতের ধান চাষ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা নানাবিধ ফসল চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছে দিনের পর দিন।